দেবতার সেবা করবে রোবট হাতি! ভারতের এই মন্দিরে হইচই ফেলেছে ৮০০ কেজির রোবট

Kerala Robot Elephant: ১১ ফুট লম্বা এই 'রোবট হাতি'র ওজন, ৮০০ কেজি! হাতিটি দেখে বিন্দুমাত্র বোঝার জো নেই যে সেটি সত্যিকারের নয়।

কেরলের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হাতিদের গুরুত্ব অপরিসীম। কেরলের ছবি মনে করলেই সুসজ্জিত হাতিদের দৃশ্য ভেসে ওঠে। তবে অনেককাল ধরেই মন্দিরের উৎসবের জন্য হাতিদের বন্দি করে রাখার অভ্যাস বন্ধ করার আহ্বানও উঠছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হাতি চাই-ই চাই, এদিকে হাতিদের বন্দি রাখাও সমস্যার। তাই এক অভিনব পন্থা নিয়েছে কেরলের একটি মন্দির। শোভাযাত্রার দেবতাদের বহন করার মতো আচার-অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে 'রোবট হাতি' নিয়োগ করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি বিশালাকার মোটর চালিত হাতি।

১১ ফুট লম্বা এই 'রোবট হাতি'র ওজন, ৮০০ কেজি! কানও নাড়ে, চোখও পিটপিট করে, শুঁড়ও তোলে, হাতিটি দেখে বিন্দুমাত্র বোঝার জো নেই যে সেটি সত্যিকারের নয়। লোহার ফ্রেম এবং রবারের আবরণ দিয়ে তৈরি হয়েছে এই হাতি। পিপল ফর এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস ইন্ডিয়া অর্থাৎ PETA ত্রিশুর জেলার ইরিঞ্জাদাপ্পিলি শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরে এই হাতিটি দান করেছে। চলচ্চিত্র অভিনেতা পার্বতী থিরুভোথু এই রোবট হাতি দান করার জন্য PETA-র সঙ্গে সহযোগিতা করেন। সব মিলিয়ে হাতির দাম পড়েছে ৫ লক্ষ টাকা।

আরও পড়ুন- “প্লিজ হাতি পাঠান না,” কেন নেহরুকে হাজার চিঠি লিখেছিল টোকিও, বার্লিনের শিশুরা?

এই রোবট হাতির নাম 'ইরিঞ্জাদাপ্পিলি রমন'। কেরলের মন্দিরে দেবতাকে হাতি নিবেদন করা হয় এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। 'নদয়িরুথাল' নামের সেই অনুষ্ঠান আয়োজন করেই 'ইরিঞ্জাদাপ্পিলি রমন'কে দান করা হয়েছে। উৎসবের সময় সাধারণ হাতির মতোই রমনকেও সাজানো হয়। PETA-র তরফে জানানো হয়েছে, হাতির এই রোবট মডেলটিতে পাঁচটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক মোটর লাগানো রয়েছে। যার ফলে মন্দিরটি নিরাপদে তো থাকবেই, কোনও হাতিকেও জোর করে উৎসবের জন্য আটকে রাখা হবে না। বন্দি হাতিদের পুনর্বাসনের আহ্বানকে সমর্থন জোগাবে এই রোবট হাতি।

 

এই রোবট হাতি একবারে পাঁচজনকে বহন করতে পারে এবং মাহুত (বলা ভালো অপারেটর) একটি সুইচ ব্যবহার করে হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ত্রিশুরের একদল শিল্পী এই রোবট হাতিটিকে তৈরি করেছেন। এর আগে দুবাইয়ের শপিং ফেস্টিভ্যালের জন্যও হাতির মূর্তি সরবরাহ করেছেন এই শিল্পীরা।

আরও পড়ুন- গভীর জঙ্গলে বাস মহাদেবের, ৫০০০ বছরের পুরনো পোড়ামাটির এই শিব মন্দির আজও বিস্ময়

সত্যিকারের হাতির বদলে রোবট পেয়ে দেবতারা কি খুশি হচ্ছে নাকি বেজায় ক্ষুণ্ণ? মন্দিরের পুরোহিত রাজকুমার নাম্বুথিরি জানিয়েছেন, মন্দির কর্তৃপক্ষ এই রোবট হাতি পেয়ে খুশি। তাঁদের আশা, অন্যান্য মন্দিরগুলিও আচার-অনুষ্ঠানের জন্য এবার থেকে হাতিদের বন্দি না রেখে রোবট হাতি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকবে। আসলে সত্যি হাতি ব্যবহারের কিছু আশঙ্কাও রয়েছে। এর আগে উৎসবের জন্য হাতি ভাড়া করতে হতো। গত কয়েক বছরে, হাতি ভাড়ার খরচ বেড়েছে বিপুল। শুধু তাই নয়, উত্সবের সময় হাতির হিংস্র হয়ে ওঠার ঘটনাও ক্রমেই বাড়ছে। সবদিক বিবেচনা করেই মন্দির সেই প্রথা বন্ধ করেছে৷

দুবাইয়ের সেই উৎসবের জন্য হাতির মূর্তি তৈরির কথা শুনে এই শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দিরের পরামর্শ এবং নকশা অনুযায়ী একটি হাতি তৈরি করতে বলা হয়। তারপরে PETA ইন্ডিয়া এগিয়ে আসে পৃষ্ঠপোষকতায়। এখন কেরলের এই মন্দিরে মানুষ ছুটে যাচ্ছেন রোবট হাতির দর্শনে।

More Articles