পৃথিবীতে যা আছে চাঁদেও তাই?! চাঁদে কী কী আশ্চর্য জিনিস খুঁজে পাচ্ছে প্রজ্ঞান?

Sulphur on Moon: রোভার প্রজ্ঞানের প্রাথমিক উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে, চাঁদের ধুলো এবং নুড়ির রাসায়নিক গঠন বোঝা।

চাঁদে নামা ইস্তক তিষ্ঠোবার জো নেই প্রজ্ঞানের। বিক্রম আস্তে আস্তে তাকে নামিয়ে দিয়েছে চাঁদের কোলে। এবার প্রজ্ঞানের হুটোপুটি চলছে পৃথিবীর আদরের উপগ্রহের দক্ষিণ মেরু জুড়ে। এটা দেখছে, সেটা খুঁজছে, খতিয়ে দেখছে, ছবি তুলছে! এই ব্যস্ত অনুসন্ধানের মধ্যেই প্রজ্ঞান পেয়েছে দুর্দান্ত এক বস্তুর খোঁজ! মঙ্গলবার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৩ এর প্রজ্ঞান রোভার চাঁদে সালফারের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। এবার জোরকদমে দক্ষিণ মেরুতে হাইড্রোজেনের সন্ধান করছে সে।

চন্দ্রযান-৩-এর রোভারের লেজার-ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপি (LIBS) যন্ত্রটি দক্ষিণ মেরুর কাছে চন্দ্র পৃষ্ঠের মৌলিক গঠনের সরাসরি পরিমাপ করেছে এই প্রথম। LIBS হচ্ছে একটি বৈজ্ঞানিক কৌশল। তীব্র লেজার পালস দিয়ে খনিজগুলির সংমিশ্রণ পরিমাপ করা হয় এই কৌশলে। চাঁদের মাটিতে কী কী আছে খুঁজতে গিয়েই দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সালফারের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে প্রজ্ঞান, যা অরবিটারে থাকা যন্ত্রগুলির দ্বারা সম্ভবপর ছিল না, জানাচ্ছে ISRO৷ সালফারের পরেই হাইড্রোজেনের অনুসন্ধান শুরু হয়ে গিয়েছে। ISRO আরও জানাচ্ছে, প্রজ্ঞান রোভারটি প্রত্যাশিত হিসেব অনুযায়ীই চাঁদে অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফেরাস, ক্রোমিয়াম, টাইটানিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন এবং অক্সিজেনও শনাক্ত করেছে।

চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমেছে ২৩ অগাস্ট। চাঁদের মাটির তাপমাত্রা মেপে ফেলেছিল সঙ্গে সঙ্গেই। তারপর একে একে অক্সিজেন, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ... কী নেই চাঁদে! ইসরো একটি গ্রাফ প্রকাশ করেছে। চাঁদের পৃষ্ঠে বিভিন্ন গভীরতায় তাপমাত্রা কত? গ্রাফ অনুসারে, গভীরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা হ্রাস পায়।

আরও পড়ুন- নিন্দার মাঝে উজ্জ্বল নাম! চন্দ্রযানের সাফল্যে যে ভাবে জুড়ল যাদবপুরের নাম

সৌর-চালিত প্রজ্ঞান রোভার এবং বিক্রম ল্যান্ডার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে এই অভিযানটি আরও সাত দিন স্থায়ী হতে পারে। বিক্রমের কাঁধ থেকে নেমেই প্রজ্ঞান রোভারটি প্রায় আট মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে, যেখানে নেমেছিল মানে যা মোদির পরামর্শে এখন শিবশক্তি অবতরণ কেন্দ্র, সেই স্থানের আশেপাশের এলাকায় তন্নতন্ন করে বিবিধ অন্বেষণ চলছে।

রোভার প্রজ্ঞানের প্রাথমিক উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে, চাঁদের ধুলো এবং নুড়ির রাসায়নিক গঠন বোঝা। এই গবেষণায় চাঁদের ভূতত্ত্ব এবং বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য উঠে আসছে যা পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী সম্পর্কে বোঝাপড়াকে আরও মজবুত করছে।

চন্দ্রাভিযানে জড়িত ইসরোর ল্যাবগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি। সেখানকার ডিরেক্টর অনিল ভরদ্বাজ জানাচ্ছেন, এই অনুসন্ধানে ভারতের অনেকটা সুবিধা রয়েছে কারণ অন্য কোনও দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করতে পারেনি। ফলে ভারত যা তথ্য পাবে সেখানে তা হবে একেবারে হাতে গরম। এই চন্দ্রাভিযানটি ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। ৬ তারিখ সূর্য চাঁদে অস্ত যাবে। তবে, ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমানাথ জানিয়েছিলেন মিশনের আয়ু আরও এক চন্দ্রদিনের বাড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে সেখানে তা যদি এক চন্দ্র রাতের তাপমাত্রা সইতে পারে এবং চাঁদে সূর্যোদয় হলে নিজেদের চার্জ করে নিতে পারে তাহলেই এটা সম্ভব।

More Articles