১২০ বছর পূর্তি! যে ভাবে সাজছে লাখো বাইকারের প্রিয় রয়েল এনফিল্ড

মোটর সাইকেলের ইতিহাসে বুলেটের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। এদেশের বাচ্চা থেকে বুড়ো–সকলেই ‘বুলেট’ নামটির সঙ্গে পরিচিত। ১৮৯১-এর নভেম্বরে বব ওয়াকার এবং অ্যালবার্ট এডি কিনে ফেলেন জর্জ টাউনসেন্ড অ্যাণ্ড কোম্পানি। তখন টাউনসেন্ড সবে বাইসাইকেল নির্মাণ শুরু করেছে। কোম্পানির মালিক হওয়ার বছর দুয়েকের মধ্যে মানিকজোড় রয়্যাল স্মল আর্মস ফ্যাক্টরি অফ এনফিল্ডে মাল সরবরাহের একটি ঠিকা পায়। সে সময় এই ঠিকা পাওয়া খুব একটা মামুলি ব্যাপার ছিল না। উদযাপনের জন্য তারা এই নতুন কোম্পানির নাম বদলে রাখেন এনফিল্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। এর সঙ্গে সাদুয্য রেখেই বব যখন তাঁর প্রথম বাইসাইকেলটির নকশা তৈরি করলেন, তার নাম রাখা হল দ্য এনফিল্ড। পরের বছর বাইসাইকেলগুলির নাম বদলে রাখা হল রয়্যাল এনফিল্ড। ট্রেডমার্ক, ‘মেড লাইক আ গান’ (বন্দুকের মতো বলিষ্ঠ)। এর প্রায় বছর সাতেক পরে ১৯০১ নাগাদ, প্রথম রয়্যাল এনফিল্ড মোটর সাইকেল নির্মিত হল। সেই তার পথচলা শুরু। ১২০ বছর ছাড়িয়ে এখনও বাজারে নিজের জায়গা একই রকম ধরে রেখেছে সে।

এ বছর রয়্যাল এনফিল্ড ঘোষণা করেছিল ১২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তারা রয়্যাল এনফিল্ড ইন্টারসেপ্টর ৬৫০ এবং কন্টিনেন্টাল জিটি ৬৫০ মডেলের কিছু সীমিত সংস্করণ ভারতে বিক্রি করবে। এভাবেই ১২০ বছরের যাত্রাকে উদযাপন করবে তারা। এই সীমিত সংস্করণের বাইকটি সর্বমোট ৪৮০ ইউনিট নির্মিত হয়েছিল। তার মধ্যে ১২০ ইউনিট বরাদ্দ ছিল শুধুমাত্র ভারতের জন্য। ইউরোপ, আমেরিকা এবং দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া–প্রত্যেকের জন্য আদতে ১২০ ইউনিট করে বরাদ্দ করা হয়েছিল এই বাইকটি। ভারতে গত ডিসেম্বর মাসে একটি ফ্ল্যাশ সেলের আয়োজন করে রয়্যাল এনফিল্ড। ১২০টি বাইকের মধ্যে ৬০টি ছিল কণ্টিনেন্টাল ৬৫০ এবং ৬০টি ইন্টারসেপ্টার ৬৫০। ভারতীয় বাজারে যে ধরনের বুলেট বিক্রি হয়, সেটিকে মাথায় রেখেই এ হেন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কোম্পানিটি।

যৌথ ভাবে ব্রিটেন ও ভারতের প্রতিনিধি দল এই বাইকের নকশা তৈরি করেছে। বাইকটির সারা শরীরে এক অভূতপুর্ব কালো রঙ, এমনকি ইঞ্জিন, সাইলেন্সার ও অন্যান্য অংশ, যা গাড়ির রঙে রঙ করা হয় না, সেগুলিও কালো। হস্তনির্মিত রঙিন একটি পেতলের ব্যাজ তেলের ট্যাঙ্কের উপর সাঁটা। তা ছাড়া ফ্লাইস্ক্রিন, ইঞ্জিন গার্ডস, হিল গার্ডস, ট্যুরিং এবং বার এন্ড মিরর প্রভৃতি নানা বাড়তি অংশও এই প্যাকেজের মধ্যে থাকছে। প্রতিটি মোটর সাইকেলে ৬০ অবধি নিজস্ব ক্রমিক সংখ্যা রয়েছে, যা সীমিত সংস্করণেরই বিজ্ঞাপন আদতে। ডিসেম্বরের ৬ তারিখ যে প্রথমে বুক করবে গাড়ি সেই পাবে–জাতীয় নিয়ম মেনে সেলের পরিকল্পনা করে রয়্যাল এনফিল্ড। দুটি মডেলই ৬৫০ সিসির। বাদবাকি সমস্ত যন্ত্রাদিতে চলতি মডেলের সঙ্গে খুব একটা ফারাক নেই এই সীমিত সংস্করণের। মূলত সংগ্রাহকের জন্যেই এই সেলের পরিকল্পনা। 

যদিও বাজারের হিসেব অনুযায়ী ২০২১এর নভেম্বরে ডোমেস্টিক মোটর সাইকেল বিক্রির সংখ্যা পড়ে গিয়েছে রয়্যাল এনফিল্ডের অনেকটাই। ২০২০-র নভেম্বরে মোট বিক্রিত বাইকের সংখ্যা যেখানে ৫৯০৮৪ ইউনিট, সেখানে গত বছর নভেম্বরের হিসেব দেখা যাছে ৪৪৮৩০ ইউনিট। প্রায় ২৪ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছে। এ অবস্থার জন্যই কি ১২০ বর্ষপূর্তির বিশেষ এডিশন ও উদযাপন? হতেও পারে। ঐ একই মাসে রফতানি হয়েছে ৬৮২৪ টি ইউনিট। যা ২০২০-র নভেম্বর থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি। অনলাইন ফ্ল্যাশ সেলের পরেই এই তোড়জোড় প্রমাণ করে উদযাপনের মধ্যে দিয়ে আবার বাজার বাড়াতে চাইছে কোম্পানিটি। বিশেষত যখন ২০২২-এর প্রথম চার মাসের মধ্যেই ভারতীয় বাজারে মডেলগুলি চলে আসবে বলে জানিয়েছে রয়্যাল এনফিল্ড। এই মডেলগুলি লঞ্চ করার ব্যাপারে আইকের মোটরস্‌ লিমিটেডের ম্যনেজিং ডিরেক্টর সিদ্ধার্থ লাল জানান, “এমন ঐতিহ্য ও ইতিহাস উদযাপন করতে পারে খুব কম কোম্পানি রয়েছে। রয়্যাল এনফিল্ড গৎ এক শতকের উপর যা উপভোগ করতে পেরেছে তার বেশিরভাগটাই বাইকচালকদের ভালোবাসায় গড়া। কাজেই এই মাইলস্টোনটি উদযাপনের আর অন্য কোনও রাস্তা ছিল না। জগৎজোড়া বুলেট প্রেমী মানুষজনের সঙ্গে এই ১২০তম বর্ষপূর্তির সংস্করণ দুটি এবং ব্র্যান্ডটির ঐতিহ্য ভাগ করে নিতে পেরে আমরা যারপরনাই আনন্দিত।”

ভারতে সীমিত সংস্করণের মডেল দুটির মূল্য সাধারণ মডেল দুটির থেকে একটু চড়াই ছিল। যেমন, ইন্টারসেপ্টর ৬৫০ ক্রোমের দাম ভারতীয় মুদ্রায় ৩.০৩ লাখ টাকা, এবং কন্টিনেন্টাল  জিটি ৬৫০ ক্রোমের দাম ৩.২০ লাখ টাকা। সেখানে সীমিত সংস্করণ ইন্টারসেপ্টর ৬৫০ ক্রোমের দাম ছিল ভারতীয় মুদ্রায় ৩.২৫ লাখ, এবং কন্টিনেন্টাল  জিটি ৬৫০ ক্রোমের দাম ছিল ৩.৪০ টাকা। ফ্ল্যাশ সেলের বিজ্ঞাপনের প্রতিক্রিয়া এতটাই অভূতপূর্ব যে রয়্যাল এনফিল্ড কোম্পানি নিজেও হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল।

১২০ ইউনিট সেলে ১৭০০০-এরও বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল। মাত্র দু'মিনিটে, অর্থাৎ ১২০ সেকেন্ডে বিক্রি হয়ে যায় ১২০টি বাইক। এই সেল নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে পৃথিবীতে। যে সমস্ত বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব বর্তমানে বাইকটির অধিকারী, তাঁদের মধ্যে ভারতীয় নৌসেনার রিয়ার অ্যাডমিরাল ফিলিপোজ জি পাইনুমুতিল পেয়েছেন ইন্টারসেপ্টর ৬৫০-র ১ নম্বর অঙ্কিত বাইকটি। এছাড়া, অলিম্পিকে পদকপ্রাপ্ত বন্দুকবাজ গগন নারঙ্গ ও অভিনেতা ধ্যান শ্রীনিবাসনের কাছেও রয়েছে ঐ একই মডেল।

More Articles