চলন্ত ট্রেনে বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের হত্যা! যে খাদের ধারে দাঁড়িয়ে আছে মোদির ভারত
RPF Kills Muslims: যোগী বা মোদি তো বলতেই পারেন, কেউ যদি তাঁদের নাম নিয়ে পুজো করে বা খুন করে বা ধর্ষণ করে তাঁদের কীই বা করার আছে!
"হিন্দুস্তান মে রেহনা হ্যায় তো মোদি, যোগী কো ভোট দেনা হোগা"। চেনা কথা, জানা সত্য। তবে শেষ সত্য নয়, কোনওদিন ছিলও না। ভারতের গণতান্ত্রিক জমিতে এই খণ্ডসত্য যে কতখানি গেঁড়ে বসেছে প্রমাণ করে দিলেন রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (এফপিএফ) কনস্টেবল চেতন সিং। চলন্ত ট্রেনে গুলি করে মেরে ফেলেছেন মোদির দেশের 'শত্রু' সংখ্যালঘু মুসলিমদের। ঘৃণার জয় হয়েছে, জয় হয়েছে মানুষের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সেই ধর্মান্ধতার যাকে প্রায় একদশক ধরে সুযোগ বুঝে নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে দেশের শাসকদল। ওই কনস্টেবলের গুলিতে চারজন নিহতের মধ্যে তিনজনই ছিলেন মুসলিম, যাদের হামেশাই পাকিস্তানে পাঠাবার নিদান দেয় দেয় শাসকঘনিষ্ঠ সমস্ত মাধ্যমই।
আরপিএফ কনস্টেবল চেতন কুমার সোমবার মহারাষ্ট্রের পালঘর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে চলন্ত জয়পুর এক্সপ্রেসের মধ্যেই গুলি চালান এবং চারজনকে হত্যা করেন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন সহকারী পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর টিকারাম মীনা এবং অন্য তিনজন মুসলিম যাত্রী।
নিহত সৈয়দ সাইফুদ্দিন বিদার জেলার হামিলাপুরের বাসিন্দা। হায়দরাবাদে মোবাইল টেকনিশিয়ান হিসাবে কাজ করছিলেন। সাইফুদ্দিন সেদিন বিখ্যাত আজমের শরিফ দরগা ঘুরে বাড়ি ফিরছিলেন। মুম্বইয়ে কিছু জিনিসপত্র কিনে হায়দরাবাদে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তাঁর ভাই সৈয়দ ইউনুস এবং বন্ধু আসলাম জনাব স্পষ্টতই মনে করছেন, কনস্টেবল চেতন তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে পেরেছেন কারণ তাঁদের দাড়ি এবং মাথার ফেজটুপি স্পষ্ট জানান দিচ্ছিল তারা কোন ধর্মের মানুষ। বিধর্মী মানেই চালাও গুলি!
আরও পড়ুন- কোনও ধর্মের জন্য আর আলাদা বিধি নয়! অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নামে কী চাইছেন মোদি?
আরপিএফ বলছে, অভিযুক্ত কনস্টেবল চেতন মানসিকভাবে অস্থির ছিলেন। অভিযুক্ত চেতনের আইনজীবী অমিত মিশ্রও বলছেন চেতন নির্দোষ এবং খুন করেননি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দেশ জুড়ে বন্দুকধারী 'অস্থির' পুলিশকর্মীদের এমন গুলি চালানোর ঘটনা নেহাত কম না। সব জানা সত্ত্বেও তাহলে কেন সেল্ফ-লোডিং রাইফেলটি একজন মানসিকভাবে অস্থির ব্যক্তিকে দেওয়া হলো?। ঘৃণাকে ধামাচাপা দিতে মানসিক অসুস্থতাকে হাতিয়ার করা বন্ধ হবে কবে? এমন তো নয় যে এলোপাথাড়ি গুলি চালানো হয়েছে। চেতন সিং যেভাবে চলন্ত ট্রেনের বগির মধ্যে দিয়ে হেঁটে গিয়েছে এবং বেছে বেছে মুসলিম যাত্রীদেরই হত্যা করেছে তাতে তো উদ্দেশ্য স্পষ্টই।
চেতন সিং বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে রেল সুরক্ষা বাহিনীতে কাজ করছেন। উত্তর প্রদেশের হাথরাসের বাসিন্দা তিনি। গত মার্চ মাসে ভাবনগর বিভাগ থেকে মুম্বইতে বদলি হয়েছিল তাঁর। কিছুদিন আগেই বাড়ি গিয়েছিলেন, ফিরে এসে ১৭ জুলাই ফের কাজে যোগ দেন। এএসআই টিকারাম যখন ঘনশ্যাম আচার্যকে রাইফেলটি কিছুক্ষণের জন্য রাখতে বলেন রেগে যান চেতন। রাইফেল ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে যান এবং ঘনশ্যাম আচার্যর গলা টিপে ধরে জোর করে সেই রাইফেলটি কেড়ে নেন। ট্রেনের মধ্যেই মেরে ফেলেন রাজস্থানের সওয়াই মাধোপুরের বাসিন্দা টিকা রাম মীনাকে। তারপর একে একে তিন মুসলিম যাত্রীকে। খুন করার আগে 'মানসিকভাবে অসুস্থ' চেতন সাফ জানিয়ে দেন, দেশে থাকতে হলে মোদি আর যোগীকে ভোট দিতে হবে। না দিলে যে কী হবে তার প্রমাণও হাতেনাতে দিয়ে দেয় সে।
ভারতীয় অস্ত্র আইন এবং ভারতীয় রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ধারা ছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার অধীনে চেতনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজত চাওয়া হলেও ম্যাজিস্ট্রেট মোটে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ভারতবর্ষ জুড়ে নিত্য নতুন অপরাধের ভাষা জন্ম নিচ্ছে, ‘হেট ক্রাইম' সেই ধারার নয়া সংযোজন। যোগী বা মোদি তো বলতেই পারেন, কেউ যদি তাঁদের নাম নিয়ে পুজো করে বা খুন করে বা ধর্ষণ করে তাঁদের কীই বা করার আছে! বড় বড় দেশে এমন কত কত ছোট ঘটনার উপর নজর রাখবেন তারা? সত্য, তবে অপর সত্য হচ্ছে, তাঁদেরই গোচরে বেড়েছে এই বিশেষ ধারার অপরাধ। তাঁদেরই নির্দেশে, উস্কানিতে ছড়িয়ে পড়েছে সংখ্যলঘুর প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ। চেতন সিংরা অলিতে গলিতে আছেন, সকলের কাছে নেহাত বন্দুক নেই। তবে হত্যা করতে কবেই বা স্রেফ বন্দুকের দরকার পড়েছে?