সনাতন ধর্ম-সঙ্কট? বাংলা কী ভাবছে?
Bangla Ja Bhabche : দেখুন 'বাংলা কী ভাবছে?' প্রতি সোম,বুধ,শুক্র সন্ধে ৭ টা থেকে - কলকাতা ২৪*৭ এর ইউটিউব চ্যানেল এবং inscript.me এর ফেসবুক পেজে।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজস্থানে একটি মন্দিরের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকি সুর শোনা গেছিল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গলায়। বলেছিলেন, সনাতন ধর্মই রাষ্ট্রীয় ধর্ম। সকলকে এই ধর্মের সম্মান করতে হবে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে স্থাপন হতে চলা রামমন্দির প্রসঙ্গেও তাঁর বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। কোথা থেকে শুরু হল এই বিতর্ক?
উদয়নিধি স্ট্যালিনের বক্তব্য:
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে উদয়নিধি, যিনি নিজেও একজন মন্ত্রী, সনাতন ধর্মকে তুলনা করেছিলেন ডেঙ্গু,ম্যালেরিয়ার মতো রোগের সঙ্গে। বলেছিলেন, সনাতন ধর্মের বিরোধিতা করলেই হবে না, একে বিলুপ্ত করতে হবে। সনাতন ধর্ম সাম্যের পরিপন্থী। দলিত, জনজাতিদের স্বীকার করে না সনাতন ধর্ম। এই মন্তব্য বিতর্ক উস্কে দিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। অযোধ্যার এক মোহন্ত পরমহংস দাস, উদয়নিধির শিরশ্ছেদের পুরস্কারমূল্য ঘোষণা করেন ১০ কোটি টাকা। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যথাযথ জবাব দেওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন। যদিও, মণিপুরে দীর্ঘ ৫ মাস ধরে উত্তেজনা চরমে। তা নিয়ে এতদিনে ৩০ সেকেন্ড মাত্র খরচ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
কী বলছে INDIA জোট:
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্ট্যালিন বিরোধী জোট INDIA - এর সক্রিয় সদস্য। যদিও, উদয়নিধির এই বক্তব্য ঘিরে একাধিক মত দেখা গেছে জোট শিবিরেও। এই প্রসঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কারোর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা উচিৎ না। সনাতন ধর্মকে তিনি সম্মান করেন। শিবসেনার পক্ষ থেকে প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী এই মন্তব্যের কড়া নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সনাতন ধর্ম চিরন্তন সত্যের বার্তা দেয়। ধিক্কার জানিয়েছেন শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউতও। ডিএমকে-র মন্ত্রীর এই মতামতকে আক্রমণ করে তিনি বলেছেন, এই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি দক্ষিণ ভারতের এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সনাতন ধর্মকে অপমান করার অধিকার কারোর নেই। প্রসঙ্গত, কংগ্রেসও কিছুটা গা বাঁচিয়েছে এই বক্তব্য ঘিরে। যদিও এম.কে স্ট্যালিন প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, সমগ্র বিষয়টি না জেনে মন্তব্য করা ঠিক হয়নি দেশের প্রধানমন্ত্রীর।
ভারতের ধর্ম বৃত্তান্ত:
ভারতের জনগণের ধর্মীয় পরিচয়ের হিসেব বলছে, এই দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৯.৮% হিন্দুধর্মাবলম্বী, ১৪.২% ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং বাকি ৬% খ্রিস্টান,শিখ,বৌদ্ধ এবং জৈন। একথা সত্যি, যে ভারতে প্রচলিত প্রাচীনতম ধর্ম হিন্দু। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া,চিন,ভারতে হিন্দু ধর্মের প্রচলন ঘটেছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ভারত ধর্মবিশ্বাসে, সংস্কৃতিতে বহুত্বের মাঝে ঐক্যের বার্তাই দিতে চেয়েছে।
কী বলছেন আদিত্যনাথ:
উদয়নিধি স্টালিনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উষ্মা প্রকাশ করে, ইন্দোরের নাথ মন্দিরের উদ্বোধন করতে গিয়ে আদিত্যনাথ বললেন, ভারতের রাষ্ট্রধর্ম সনাতন ধর্ম। এই বিষয়টিকে প্রশ্নাতীত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এর সাথে তিনি যোগ করেন, প্রাচীনকাল থেকেই বারবার আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে সনাতন ধর্মকে। বিভিন্ন ব্যক্তি, বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন তুলেছেন হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে। রামায়ণের অনুষঙ্গ তুলে তিনি বলেন, রাবণও চেয়েছিলেন দেবত্বকে আক্রমণ করতে। ফল কী হয়েছিল? রাবণ নিজেই ধ্বংস হয়ে গেছেন। সম্রাট বাবরের উল্লেখও এসেছে তাঁর বক্তব্যে। ৫০০ বছর পরে, হিন্দুধর্মের জয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন রামমন্দির স্থাপনের ঘটনাকে।
সংবিধান কী বলছে:
এখনও ভারত বনাম ইন্ডিয়া নামের বিতর্কের টাটকা স্মৃতি। এর আঁচ নেভার আগেই উঠে এল রাষ্ট্রীয় ধর্মের প্রসঙ্গ। কিন্তু কী বলছে ভারতের সংবিধান? ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের লেখা ভারতের সংবিধান চলে আসছে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে। বলা হয়, পৃথিবীর দীর্ঘতম ও অন্যতম সমৃদ্ধ সংবিধান, ভারতের সংবিধান।ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা বলছে,"আমরা ভারতের জনগণ ভারতকে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে গঠন করার এবং এর সমস্ত নাগরিকের জন্য সুরক্ষিত করার জন্য দৃঢ় সংকল্প।"
ধর্মনিরপেক্ষতার নিশ্চয়তার ঠিক বিপরীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের এই বক্তব্য। সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব মতামত, চিন্তা, নিজস্ব বিশ্বাস নিয়ে বাঁচার অধিকার সুনিশ্চিত করেছিল। ক্রমশ, সামনে এগনোর বদলে কি পিছিয়ে যাচ্ছে না এই দেশ? 'জাতির ঐক্য' ধ্বংসের মুখে কি ফেলে দেয় না দেশনায়কদের এই মতামত?
ভারতের কোনও রাষ্ট্রভাষা নেই। ভারতের কোনও রাষ্ট্রধর্ম নেই। ভারতের সংবিধান বলে সেই কথা। জোর করে,হিন্দি-হিন্দু দেশের নাগরিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত কেন্দ্র সরকারের দীর্ঘদিনের।বিজেপি শাসিত এই দেশ মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দূরাস্ত, প্রশ্ন করার অধিকারও খোয়াতে বসেছে। INDIA জোটে পাল্লা ভারী কোন দিকে? স্ট্যালিন নাকি সনাতন ধর্ম? এই বক্তব্য ঘিরে কি জোটের ঐক্যে কিছুটা ফাটল ধরল? রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে সনাতন ধর্মকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা শাসক দলের কতদিনের? কী হতে পারে এই মন্তব্যের অভিঘাত? দেখুন 'বাংলা কী ভাবছে?' প্রতি সোম,বুধ,শুক্র সন্ধে ৭ টা থেকে - কলকাতা ২৪*৭ এর ইউটিউব চ্যানেল এবং inscript.me এর ফেসবুক পেজে। সঙ্গে থাকুন, দেখতে থাকুন সমাজ-রাজনীতি নিয়ে বিদ্বজ্জনদের মতামত। আজকের পর্ব- সনাতন ধর্ম-সঙ্কট? বাংলা কী ভাবছে?