কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কী কী জানালেন সন্দেশখালির ‘ত্রাস’ শেখ শাহজাহান?

Sheikh Shahjahan Arrested: এদিনই বসিরহাট আদালতে পেশ করা হয়েছিল শেখ শাহজাহানকে। জানা গিয়েছে, বসিরহাট এজলাশের দশ মিনিটের সওয়াল জবাবেই নাকি বিস্ফোরক সব দাবি করে বসেছেন শেখ শাহজাহান।


প্রায় দু'মাস পর হদিস মিলেছে সন্দেশখালির ত্রাস শেখ শাহজাহানের। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের গোড়ায় রেশন মামলায় সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। সেই থেকেই নিখোঁজ শাহজাহান। এদিকে উত্তপ্ত সন্দেশখালিতে শান্তি ফেরাতে পারে কেবল শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি।

জমি জবরদখল থেকে স্থানীয় মেয়েদের উপর বেপরোয়া অত্যাচার থেকে শারীরিক নিগ্রহ, একাধিক অভিযোগ ছিল শেখ শাহজাহান ও তার দলবলের বিরুদ্ধে। সন্দেশখালি উত্তপ্ত হতেই গ্রেফতার হয় শাহজাহানের সঙ্গী উত্তম ও শিবু। তবে তাতেও ঠান্ডা করা যায়নি সন্দেশখালির বাসিন্দাদের। কেন শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ, সেই প্রশ্ন বারবার করেছেন মানুষ। তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব বলেছিলেন, ব্যাস দিন সাতেক থেকে দশেক। দক্ষ কলকাতা পুলিশ হাজতে এনে তুলবে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নেতাকে। হলও তেমনটাই। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মিনাখাঁ থেকে গ্রেফতার করা হয় শেখ শাহজাহানকে।

তবে কোনও কোনও সূত্র বলছে, এতদিন ধরে নাকি সন্দেশখালিক রাজবাড়িতেই আস্তানা গেড়ে বসেছিলেন শেখ শাহজাহান। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তারপর নিরাপত্তার কারণে মিনাখা থানায় নিয়ে আসা হয় শেখ শাহজাহানকে। সরকারি ভাবে পুলিশি বিবৃতিতে অবশ্য মিনাখাঁ থানা এলাকার একটি ভেড়ি থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: শাহজাহানকে হারিয়ে জিতে গেল তৃণমূল? লোকসভায় আসন বাড়বে শাসকের?

গত কয়েক দিনে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, পুলিশের উপর আস্থাই যেন বলে দিচ্ছিল, সময় ফুরিয়ে আসছে শেখ শাহজাহানের। এবার তার ধরা পড়ার পালা। কিন্তু কোথা থেকে গ্রেফতার হবেন সন্দেশখালির 'ত্রাস', সেটাই ছিল বড় প্রশ্ন। জানা গিয়েছে, গতকাল দুপুরের পর থেকেই শেখ শাহজাহানের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করেই শুরু হয় তল্লাশি। রাতের দিকে বিশাল পুলিশ বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় এলাকা। তারপর গ্রেফতার করা হয় শেখ শাহজাহানকে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার ভোররাতে তাঁকে বসিরহাট আদালতের কোর্ট লকআপে নিয়ে আসা হয়েছে।

এদিনই বসিরহাট আদালতে পেশ করা হয়েছিল শেখ শাহজাহানকে। জানা গিয়েছে, বসিরহাট এজলাশের দশ মিনিটের সওয়াল জবাবেই নাকি বিস্ফোরক সব দাবি করে বসেছেন শেখ শাহজাহান। মধ্যিখানে গা ঢাকা দেওয়াকালীন সময়ে শেখ শাহজাহানের একটি অডিও ক্লিপ সামনে এসেছিল। যেখানে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের ভরসা দিয়ে ইডি-সিবিআইকে নিয়ে তোপ দাগতে দেখা গিয়েছিল শেখ শাহজাহানকে। এমনকী দোষী প্রমাণিত হলে নিজের 'মুন্ডু' কেটে পায়ের কাছে রাখার কথাও বলতে শোনা যায় তাঁকে। তবে সে প্রায় জানুয়ারির কথা। তার পর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো দিন। অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে গঙ্গা-পদ্মা দিয়ে। তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের কাছে শেখ শাহজাহান ততদিনে বিপদ বই কিছু নয়, তাও আবার লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আগে।

এদিন আদালতে শেখ শাহাজাহান জবানবন্দি দিয়েছেন, "ইডি-র হাতে গ্রেফতারির আশঙ্কায় হামলার নির্দেশ দিয়েছিলাম।" আদালতে জমা পুলিশের নথিতে শাহজাহানের স্বীকারোক্তির উল্লেখ রয়েছে। যেখান থেকে পরিষ্কার সন্দেশখালিতে ইডি-র উপর হামলা আদতেই ছিল পূর্বপরিকল্পিত। সূত্রের খবর, আদালতে পুলিশ যে নথি দিয়েছে, তাতে উল্লেখ, ১৬১-এ পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারি, অর্থাৎ যেদিন রেশন দুর্নীতি মামলায় ইডি আধিকারিকরা তল্লাশি চালিয়েছিলেন, সেদিন ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন শেখ শাহজাহান। ইডি আধিকারিকরা সিআরপিএফ জওয়ান নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর মনে হয়েছিল, ইডি তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে। সেই কারণে অনুগামীদের ফোন করে নির্দেশ দেন, যাতে কোনওভাবে ইডি আধিকারিকরা বাড়িতে ঢুকতে না পারেন। তাঁদের ওপর হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি তাঁদের জিনিসপত্রও লুঠের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে পুলিশি জেরায় শেখ শাহজাহান স্বীকার করে নিয়েছেন। বসিরহাট আদালত শেখ শাহজাহানকে দশদিনের হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।

আরও পড়ুন:লকআপে সন্দেশখালির ত্রাস! কীভাবে গ্রেফতার হলো শেখ শাহজাহান?

এদিকে গ্রেফতার হয়েও কিন্তু রোয়াব যায়নি শেখ শাহজাহানের। মেজাজে এখনও তিনি 'বেতাজ বাদশা'। আদালতে ঢোকার মুখে কার্যত তার আচরণে সেই ছবিটাই ফের দেখা গেল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ক্ষুব্ধ শেখ শাহজাহান শুধুই আঙুল তুলে না-সূচক ইশারা করে গেলেন। ধবধবে পোশাক, পায়ে স্নিকার্স, শরীরি ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন, তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগই মিথ্যা। বসিরহাট আদালত থেকে কার্যত গ্রিন করিডর করে শেখ শাহজাহানকে বৃহস্পতিবার নিয়ে আসা হয় কলকাতার ভবানী ভবনে। কী হতে চলেছে পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপ, আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে গোটা রাজ্য। বসিরহাট আদালতে দেওয়া শেখ শাহাজাহানের জবানবন্দির প্রভাবই বা কতটা পড়তে চলেছে এই মামলায়? সেটাও দেখার।

More Articles