কেবল পুরুষ নয়, ভারতীয় মেয়েরাও টেনিসে বিশ্বজয় করতে পারে, বারবার প্রমাণ করেছেন সানিয়া মির্জা

Sania Mirza Retires Grand Slam Australian Open : ভারতীয় মেয়েরাও র‍্যাকেট হাতে বিশ্ব শাসন করতে পারে, এই বিশ্বাস তৈরি করেছেন তিনি। সানিয়া মির্জা সেই স্পর্ধার নাম।

বয়স মাত্র ৩৬। কোলে ছোট্ট পুত্র সন্তান। নীল টুপি, নীল জ্যাকেট পরে একটু একটু করে মঞ্চের দিকে এগোচ্ছেন তিনি। মাইকের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেষমেশ কেঁদেই ফেললেন। হয়তো ফ্ল্যাশব্যাকে চলে এসেছিল ২০০৫ সালের কথা। এই মেলবোর্নের মাটিতেই হয়েছিল তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক। ভারতীয় মেয়েরাও র‍্যাকেট হাতে বিশ্ব শাসন করতে পারে, এই বিশ্বাস তৈরি করেছেন তিনি। সানিয়া মির্জা সেই বিশ্বাস, স্পর্ধা, ভারতীয় নারীশক্তির আরেক নাম।

২০২৩-এর অস্ট্রেলিয়া ওপেনের মিক্সড ডাবলসের ফাইনালে পৌঁছনোর পরই একটু একটু করে আশার পারদ বাড়ছিল। তার আগেই সানিয়া মির্জা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন চূড়ান্ত মুহূর্তের কথা। মেলবোর্নের এই মাটিতেই শেষবারের মতো খেলবেন গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্ট। সঙ্গী ৪২ বছর বয়সী রোহন বোপান্না। লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন সানিয়া। তাঁর র‍্যাকেটের সামনে টিকতে পারেনি কোনও প্রতিপক্ষ। কেবল ছন্দপতন হল মোক্ষম সময়। অস্ট্রেলিয়া ওপেনের ফাইনালে রাফায়েল মাতোস ও লুইসা স্টেফানির কাছে হেরে গেলেন সানিয়া-বোপান্না জুটি। হার হল ৬-৭ (২-৭), ২-৬ ব্যবধানে। এখানেই শেষ হল এত বছরের বর্ণময় একটি কেরিয়ার।

ম্যাচের পরই ছেলে ইজহানকে নিয়ে কোর্টে নামেন সানিয়া। তারপর পুরস্কারের মঞ্চে। ৩৬ বছর বয়সী সানিয়া মোট ৬টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। ২০০৯ সালে প্রথম মিক্সড ডাবলস খেতাব জেতেন তিনি। তারপর থেকে ভারতীয় টেনিসের মুখ হয়ে গিয়েছিলেন। সানিয়া মির্জার আগে সেভাবে ভারতীয় মহিলা টেনিস খেলোয়াড়ের নাম শোনা যায়নি। লিয়েন্ডার পেজ, মহেশ ভূপতি, রোহন বোপান্না, বিজয় অমৃতরাজ সহ পুরুষ খেলোয়াড়দেরই দাপট দেখা গিয়েছে। মেয়েরা কি টেনিস খেলবে? বাড়ির মেয়ে স্কার্ট, হাফ জামা পরে, এক দঙ্গল লোকের সামনে টেনিস খেলবে, এই ব্যাপারটাই ছিল অলীক।

পুরুষতন্ত্রের সেই বেড়া ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন সানিয়া। তাঁর একটাই মন্ত্র ‘হাম কিসি সে কম নহি’। আজ তাঁকে দেখেই আরও অনেক ভারতীয় মেয়ে টেনিসের ময়দানে নেমেছে। সানিয়া মির্জা আসলে একটা বিপ্লবের নাম। যেখানে গোলা-বারুদ নেই; চোখে চোখ রেখে বলে যাওয়া – তোমরা আমাদের আটকে রাখতে পারো না। আমরা জিতব। জিতবই।

নামের পাশে অজস্র পুরস্কার। রেকর্ড। সম্মান। গোটা বিশ্বে নিজের নাম তৈরি করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে নানা টালমাটাল পরিস্থিতির সামনে পড়েছেন। স্বামী শোয়েব মালিকের সঙ্গে নাকি সেভাবে ভাব নেই এখন। ছেলেকে নিয়েই তাঁর যাবতীয় স্বপ্ন। সেই বিয়ের সময়ও নানা বিতর্ক। পাকিস্তানের ক্রিকেটারকে বিয়ে করার জন্য শুনতে হয় নানা কটূক্তি। কিন্তু সানিয়া মির্জা বরাবরই শক্ত ধাতুতে গড়া। তাঁকে এত সহজে ভাঙা যায় না। যাবতীয় উত্তর দিয়েছেন কোর্টে, দেশের হয়ে খেলে। তাই তো বিশ্বের টেনিস ইতিহাসে নিজের জায়গা পাকাপাকিভাবে করে নিয়েছেন তিনি। আর ভারতে তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। এই কথা বললে এতটুকুও অত্যুক্তি হয় না।

অস্ট্রেলিয়া ওপেনের ফাইনালে হারার পর মাইকের সামনে কেঁদে ফেললেন সানিয়া। এই মাটিতেই প্রথম ম্যাচ, সেখানেই শেষ হল জীবনের একটা বড় অধ্যায়। অন্যান্য প্রতিযোগিতায় এখনও খেলতে দেখা যাবে সানিয়াকে। কিন্তু গ্র্যান্ড স্ল্যামের রাজকীয় মঞ্চে আর র‍্যাকেট চালাবেন না তিনি। সানিয়া মির্জা, ভারতের অবিসংবাদী টেনিস রানি। সেলাম!

More Articles