বাঙালি বিদ্বেষী মোদি-বিশ্বস্ত সঞ্জীব সান্যাল আসলে কে?
Sanjeev Sanyal PM Modi's Economic Advisory: সঞ্জীব সান্যাল নেহরুর দর্শনের কট্টর সমালোচক। ১৯৯১ সালের উদারীকরণের বিষয়টিকে ভারতীয় রেনেসাঁ বলে মনে করেন তিনি।
বাঙালি কেবল ওল্ড মঙ্ক-সিগারেটেই ডুবে থাকে আর পাড়ার ঠেকে গিয়ে নিজেকে বড় 'আঁতেল' প্রমাণ করার চেষ্টা করে। আড্ডা মারা, নেতা হওয়া বা বুদ্ধিজীবী হওয়াটাই বাঙালির একমাত্র 'সাধ'! কে বলছেন? বলছেন যিনি, তিনি নিজে একজন বাঙালি, তিনি একজন অর্থনীতিবিদ এবং ইতিহাসবিদ! অথচ বাঙালির বিরুদ্ধেই মনে মনে চরম বিদ্বেষ পুষে রেখেছেন সঞ্জীব সান্যাল।
কে এই সঞ্জীব সান্যাল? সঞ্জীব একজন অর্থনীতিবিদ এবং ইতিহাসবিদ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ভারতের অর্থনৈতিক সমীক্ষার ছয়টি সংস্করণ প্রস্তুত করেছেন। ভারতীয় ইতিহাস নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন তিনি। জন্ম কলকাতায়, পড়াশোনা সেন্ট জেভিয়ার্স এবং সেন্ট জেমস স্কুলে। নয়াদিল্লির শ্রী রাম কলেজ অফ কমার্স থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হয়ে তিনি চলে যান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজে। ১৯৯২ সালে সেখান থেকেই তিনি দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে স্নাতকস্তরে পড়াশোনা করেন। ১৯৯৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করেন তিনি।
১৯৯০-এর দশক থেকেই অর্থনীতি নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০০৪ সালে সঞ্জীব সান্যাল এবং পরিবেশ অর্থনীতিবিদ পবন সুখদেব দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য গ্রিন ইন্ডিয়ান স্টেটস ট্রাস্ট তৈরি করেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ডয়েচ ব্যাংকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করেন সঞ্জীব। তারপর গবেষণায় মন দেন। এই সময়েই তিনি লেখেন 'ল্যান্ড অফ দ্য সেভেন রিভারস' বইটি।
আরও পড়ুন- উগ্র ক্ষত্রিয় রাম নয়, হাওড়ায় পূজিত হয় বাঙালির আদি সবুজ রাম
২০১৭ সালে সঞ্জীব ভারতীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে নিযুক্ত হন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত সরকারের সচিব পদে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন সঞ্জীব সান্যাল।
সঞ্জীব সান্যাল নেহরুর দর্শনের কট্টর সমালোচক। ১৯৯১ সালের উদারীকরণের বিষয়টিকে ভারতীয় রেনেসাঁ বলে মনে করেন তিনি। মনে করেন, ভারতের ইতিহাস রচনাকে ঔপনিবেশিক, নেহরুপন্থী এবং মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে, বিকৃত করা হয়েছে। তাই সঠিকভাবে পুনর্বিবেচনা করে পুনরায় ইতিহাস লেখা প্রয়োজন। সঞ্জীব সান্যালের মতে, অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধে বিলাপ করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেননি, করেছিলেন জৈনদের রাজনৈতিক চাপের কারণে। আর অশোককে 'মহান' করা হয়েছে নেহরুর দৃষ্টিভঙ্গিতেই।
দ্য ইন্ডিয়ান রেনেসাঁ: ইন্ডিয়া'জ রাইজ আফটার আ থাউজ্যান্ড ইয়ার্স অফ ডিক্লাইন, ল্যান্ড অফ দ্য সেভেন রিভারস, দ্য ইনক্রেডিবল হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া'জ জিওগ্রাফি, রেভলিউশনারিজ: দ্য আদার স্টোরি অফ হাউ ইন্ডিয়া ওন ইটস ফ্রিডম সহ একাধিক বইয়ের লেখক সঞ্জীব সান্যাল মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং কমিউনিস্টরা শুধু কলকাতা ও বাংলার অর্থনীতিই নয়, সমগ্র বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রকেই ধ্বংস করেছে। কলকাতা সেই ধাক্কা নাকি কখনও কাটিয়েই উঠতে পারেনি।
সঞ্জীব একটি পডকাস্টে বলেন, "প্রথমবার যখন জ্যোতি বসু নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাঁর খাতায় মরিচঝাঁপির গণহত্যার দাগ লেগে গেছে। তিনি ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ করতে শুরু করেছিলেন। আমার মনে আছে বড় হওয়ার সময় আমি লণ্ঠন জ্বেলে, মোমবাতি জ্বেলে পড়াশোনা করতাম। এই জন্য নয় যে আমি দরিদ্র পরিবারে বড় হয়েছি, আসলে তখন বিদ্যুৎ থাকতই না।"
আরও পড়ুন- বাংলা ভাষা বাঁচাতে বাংলাপক্ষ আদৌ প্রয়োজনীয়?
সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদের প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণা পুষে রাখা সঞ্জীব সান্যালের বক্তব্য, বাঙালি যদি বুদ্ধিজীবী হওয়া বা সংগঠনের নেতা হওয়াকেই জীবনের সর্বোচ্চ রূপ ভাবে তাহলে সিগারেট খেতে খেতে আর ওল্ড মঙ্কে চুমুক দিতে দিতে নিজে কিছু করার বদলে বাকি বিশ্বের বিচার করাটাই বাঙালির একমাত্র কাজ হবে। সঞ্জীবের মতে মৃণাল সেনের সিনেমা দেখে সমাজকে ভাবতে গেলে সেই মানুষদের সমাজের বঞ্চনা-অভাব নিয়ে অভিযোগ করা উচিত নয়। সঞ্জীব মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন কলকাতাকে খুন করা হয়েছে। মূলত, মারওয়াড়িরা কলকাতা থেকেই সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করে। বিড়লারাও কলকাতা থেকেই অর্থ উপার্জন করেছিল। বাম সরকারের ৩৪ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ শাসনের ফলেই সবটা শেষ হয়ে গেছে। বিড়লা এবং অন্যান্য শিল্পপতিরা কলকাতা ছেড়ে মুম্বই এবং অন্যান্য জায়গায় দোকান করেছেন। অথচ কলকাতা যে আরেকজন সত্যজিৎ রায় বা স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বা অরবিন্দ ঘোষ তৈরি করেছে তাও না।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তিনি। বাংলা চিরকালই বিজেপির পাখির চোখ। আর সেই বঙ্গদেশ সম্পর্কেই এমন ধারণা তাঁর। তাঁর এই বাঙালি ও বাংলার সমালোচনায় স্পষ্টভাবেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন সমাজতন্ত্র, কমিউনিজম আর বামপন্থীরাই গেরুয়া চিন্তাধারার মূল শত্রু, তৃণমূলের মতো কোনও শাসক বা তাদের রাজ্য চালনা, অবক্ষয় নিয়ে তাই ডানপন্থী এই ভাবাদর্শের তাই কোনও উচ্চবাচ্যই নেই।