জলের বয়স ২৬০ কোটি বছর! এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেললেন এই বিজ্ঞানী, আর তারপর?

2.6 Billion years Old Water Drinking : ২৬০ কোটি বছরের পুরনো জল! সেটা খাওয়া যায় নাকি? অত পুরনো জলে আর কিছু আছে নাকি?

জল মানে জীবন। ছোট থেকে এমনটাই পড়ে এসেছি আমরা। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ জল না খেলে শরীর অচিরেই দুর্বল হয়ে পড়বে, বারবার এমনটাই বলে এসেছেন ডাক্তাররা। কিন্তু এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। ধরুন, আপনার বাড়িতে বহুদিন ধরে একটা জল পড়ে রয়েছে। কী করবেন? নিশ্চয়ই সেটা ফেলে দিয়ে পরিষ্কার জল ভরে রাখবেন, তারপর খাবেন। কিন্তু ওই জলটা তো ফেলে দিলেন! জল নষ্ট হল না?

এই মুহূর্তে গোটা পৃথিবী পরিবেশের সমস্যায় জর্জরিত। যত দিন যাচ্ছে, পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বাড়ছে। বরফ গলছে, একের পর এক গাছ কাটা হচ্ছে। অন্যান্য সব জায়গার সঙ্গে জলও দূষিত হচ্ছে। অনেক জায়গায় নতুন করে জলের সমস্যা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকাল এলেই সেই কষ্ট হু হু করে বাড়ে। তার মধ্যে পুরনো জল ফেলে দিলে তো আরও বিপদ! জলকে পরিশুদ্ধ করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। এখানে একটা ছোট্ট প্রশ্ন। ‘পুরনো’ তো বলা হচ্ছে বারবার; কিন্তু কতটা পুরনো? পাঁচদিন, এক মাস, নিদেনপক্ষে এক বছর! আচ্ছা, যদি আপনার সামনে ২৬০ কোটি বছর পুরনো জল আনা হয়, কী করবেন তখন?

জলের ‘বয়স’ শুনেই চক্ষু চড়কগাছ অনেকের। ২৬০ কোটি বছরের পুরনো জল! সেটা খাওয়া যায় নাকি? অত পুরনো জলে আর কিছু আছে নাকি? অথচ সেই ‘প্রাগৈতিহাসিক’ জলই ঢকঢক করে খেয়ে নিলেন এক বিজ্ঞানী! আর তারপর?

২০১৩ সাল। কানাডার এক খনিতে বেশ কিছুদিন ধরে গবেষণা চালাচ্ছিলেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। সেই কাজ করতে করতে হঠাৎ করেই চমকপ্রদ জিনিস খুঁজে বের করেন তাঁরা। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১.৫ মাইল নিচে, পাথরের স্তরের মধ্যেই বেশকিছু ফাঁকা ‘পকেট’ রয়েছে। আর সেই পকেটের ভেতর রয়েছে জল! গ্রানাইট জাতীয় পাথরের মধ্যে কোনওভাবে জল জমে যায়। তারপর সেগুলি আটকে যায়। কয়েক হাজার বছর ধরে সেগুলি ওভাবেই পড়ে রয়েছে। খুঁজে পাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা সঙ্গে সঙ্গে নমুনা সংগ্রহ করতে শুরু করলেন। কী অভিনব তথ্য পাওয়া যেতে পারে, সেটাই ভাবতে লাগলেন তাঁরা।

ওই গবেষক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অধ্যাপক বারবারা শেরউড লোলার। হঠাৎই কাউকে কিছু না বলে, সেই জমে থাকা ‘প্রাচীন’ জল একটুখানি নিয়ে খেয়ে ফেললেন। তারপর? গবেষণায় জানা গেল, ওই বিশেষ পকেটগুলো আজ থেকে প্রায় ২৬০ কোটি বছর আগে তৈরি হয়েছিল। তখন থেকেই জলগুলি ওভাবে পড়ে রয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, একে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জল বললেও অত্যুক্তি হয় না। আজও যত্নে সেই নমুনা সংরক্ষিত আছে। কিন্তু সেই প্রাচীন জল খেয়ে বিজ্ঞানীর কী অবস্থা হল?

পরবর্তীকালে একটি সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক বারবারা লোলার জানান, ওই জল খেয়ে মোটেও খুব একটা সুখকর অনুভূতি হয়নি। এত বছর ধরে পাথরের মধ্যে বন্দি থাকায় জলের মধ্যে তীব্র নোনতা ভাব এসে গিয়েছে। সেইসঙ্গে সাধারণ জলের থেকে একটু বেশিই গাঢ় সেই প্রাচীন জল। এমনি রংহীন তরল হলেও, এই বিশেষ জলকে খোলা বাতাসে রাখলে রং হালকা কমলা হয়ে যায়। জলের ভেতর খনিজ পদার্থের সঙ্গে বাতাসের অক্সিজেনের বিক্রিয়ার জন্যই এমনটা হয় বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক লোলার।

More Articles