হাসিনা সরকারকে না হটানো অবধি নড়বে না পড়ুয়ারা: শহিদুল আলম
Shahidul Alam on Bangladesh Quota Protest: আমি নিজে চোখে দেখেছি, ৪ টি মাত্র ছাত্রকে দমন করতে ৪০০-র বেশি পুলিশ বন্দুক নিয়ে, প্রিজন ভ্যান নিয়ে ঘিরে ধরছে।
অর্ক- ছাত্রলীগের এত বাড়বাড়ন্ত কেন বাংলাদেশে? এত অস্ত্র কে তুলে দিল ছাত্রলীগের হাতে? বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে? এই দমনপীড়ন কি স্বৈরাচার নয়?
শহিদুল- স্বৈরাচার না বলার তো কোনও সুযোগই নেই। আর ছাত্রলীগ হচ্ছে একটা পেটোয়া গুন্ডাবাহিনী। এটা একটা অবৈধ সরকার ধরে রেখেছে। সরকার এদের ব্যবহার করছে কারণ সরকারের নিজের কোনও ন্যায্যতা নেই। ন্যায্যতা যেখানে না থাকে, জনগণ যদি কোনও সরকারকে না চায় তখন পেটোয়া বাহিনী ব্যবহার ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় নেই। তারা আর্মিকে ব্যবহার করে, পুলিশকে ব্যবহার করে, প্রশাসনকে ব্যবহার করে, ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে। এই নিপীড়ন অনেকদিন ধরেই চলছে।
কোটা নিয়ে তিক্ততা তো অনেকদিন ধরেই রয়েছে। জিনিসের দাম হু-হু করে বাড়ছে, চোরাচালান বাড়ছে, চারদিকে অনিয়ম চলছে, এর মাঝে ভারতও একটা ফ্যাক্টর। ভারতের ক্ষেত্রে একটা বিদ্বেষ রয়েছে, ভারত বয়কটের ডাক তীব্র হচ্ছে এখন। এবং ভারত সরকারের কিন্তু মনে রাখা দরকার শেখ হাসিনা তাদের জন্য এখন একটা 'লায়াবিলিটি'। হাসিনা সরকার জনগণকে ভারতের বিরুদ্ধে এতটা তিক্ত করে দিয়েছে যে সেটা মোটেও ভারতের পক্ষে ভালো বিষয় নয়। আমাদের পাশের দেশ, আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকা উচিত। ভারত একটা খুব বড় ভূমিকা রেখেছিল ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে। অথচ সেই ভারতকেই এখন বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। সরকার তো যা পারছে করছে। বাংলাদেশকে বিকিয়ে দিয়েছে ভারতের কাছে। যখন ভারত যা চেয়েছে তা পেয়েছে। ভারত সুবিধা পেতে গিয়ে যে বাংলাদেশের জনগণকে হারিয়েছে সেটা তাদের মনে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থা ঠিক কী? কেন এর বিরোধিতায় প্রাণ হারালেন পড়ুয়ারা?
অর্ক- এই বিক্ষোভটি হাসিনা বিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হলো কেন? এই ক্ষোভ কি আগে থেকেই ছিল? কিছুদিন আগে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হলো তা কি তবে প্রহসন ছিল?
শহিদুল- নির্বাচন তো বহু বছরই হয়নি। আমাদের দেশে ৩ কোটির কাছাকাছি নব্য ভোটার গত ১৫ বছর তো ভোটই দিতে পারেননি। বলা হচ্ছে এটা আদালতের ব্যাপার। আসলে আপনাদের দেশেও এমনটা আছে কিছুটা, কিন্তু আমাদের দেশে আদালত সম্পূর্ণতই সরকারের কথায় চলে। সরকার যা বলে আদালত তাই করে। সরকার আদালতকে ব্যবহার করে ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি করার জন্য। খারাপ হলে আদালতের দোষ, ভালো হলে সরকারের কৃতিত্ব।
আমাদের অনেকের ক্ষেত্রেই তো বিষয়টা ঘটেছে। আমার নিজের ক্ষেত্রেই হচ্ছে। আজ থেকে ৬ বছর আগে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ছ' বছর কেটে গেল আমি কিন্তু রোজ হাজিরা দিচ্ছি অথচ ট্রায়াল হয়নি। কারণ আমাদের আদালত নিজের থেকে রায়ই দিতে পারে না।
অর্ক- শুধুমাত্র শহিদজননীর নিস্ফল ক্রন্দন, নাকি এই আন্দোলনের ফলে কোনও মূলগত পরিবর্তন বাংলাদেশে ঘটবে?
শহিদুল- আন্দোলন তো শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে, তারপর ২০১৩ সালে। তবে তখন তা খুব বেশি এগোয়নি। ২০১৮-তে যখন তা তীব্র জায়গায় যেতে শুরু করে তখন দমনপীড়ন করে দমানো হয়। প্রহসনমূলক প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা থামানো হয় তখন। কিন্তু মানুষ এখন জেনে গেছে এই সরকার মিথ্যাবাদী, এই সরকারের কোনও কথা বিশ্বাস করা যায় না। এত এত ছেলেমেয়ে মারা গেছে তাঁদের গায়েবি জানাজা পর্যন্ত হতে দেওয়া হয়নি। পুলিশরা সাংবাদিকদের উপর বোমা মেরেছে, আমার সহকর্মী আহত। সারা বাংলাদেশ এখন দাউদাউ করে জ্বলছে। এটাই শেষ লড়াই, এখান থেকে ছাত্রছাত্রীরা নড়বে না, বাংলাদেশিরা নড়বে না, এই সরকারকে হটানোর আগে কেউ নড়বে না।
অর্ক- এই এত মানুষের মধ্যে অনেকে রাজনীতি সচেতন, অনেকে জানেন পেটে খিদে আছে চাকরি দরকার। তারা হয়তো সরাসরি রাজনীতিই করেন না। এই এত এত মানুষের বিক্ষোভকে কি কেবল বিএনপির বিক্ষোভ বলে থামিয়ে দেওয়া যাবে?
শহিদুল- হাস্যকর! জিনিসের দাম হু-হু করে বাড়ছে, চুরি হচ্ছে, টাকা পাচার হচ্ছে। আইএমএফ থেকে টাকা ধার করতে হয়, চিনের কাছে হাত পাততে হয়! এই তো দেশের অবস্থা! বিএনপি একটা বড় রাজনৈতিক দল নিঃসন্দেহে। যদি সুস্থ নির্বাচন হতো তাহলে হাসিনার বিরুদ্ধে একটা কলাগাছ দাঁড়ালেও জিতে যেত, বিএনপির দরকার পড়ত না।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশ শাটডাউন, হাসিনার পুলিশের নিশানায় সেই বিএনপি
অর্ক- এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ঠিক কী?
শহিদুল- গদ্দারি করেছে তারা। নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছে আর এই জায়গা থেকে তারা আর ফিরতেও পারবে না। জাফর ইকবালকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আর কোথাও থাকতে পারবেন না। আসলে জাফর ইকবাল তো একা নন, একটা দল আছে যাদের আওয়ামী লীগ এতদিন পুষেছে, তারা এই স্বৈরাচারী সরকারকে টিকে থাকতে মদত করেছে। এবার এরা সবাই বিপদে পড়বে। পড়া শুরুও হয়েছে। অনেক তারকাকেই দেখলাম বিবৃতি দিয়েছেন তারা এটার থেকে দূরে থাকতে চান। আসলে তারা গা বাঁচাচ্ছেন, তারা জানেন নৌকা ডুবছে তাই বাঁচতে চাইছেন।
অর্ক- হাসিনা বলছেন, আন্দোলনের শুরু থেকে সরকার যথেষ্ট সহনশীলতা ও ধৈর্য দেখিয়েছে। আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নাকি পুলিশ সহযোগিতা করেছে! যা দেখা যাচ্ছে চোখে, যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, স্কুল কলেজ ইন্টারনেট বন্ধ, এটাকে সহযোগিতা বলে?
শহিদুল- শেখ হাসিনা প্রতিবারই এগুলো বলেন, কেউই বিশ্বাস করে না। সারাদেশ হাসিনাকে চাইছে না। অথচ গদি তিনি ছাড়বেন না। মিথ্যাচার করছেন। আমি নিজে চোখে দেখেছি, ৪ টি মাত্র ছাত্রকে দমন করতে ৪০০-র বেশি পুলিশ বন্দুক নিয়ে, প্রিজন ভ্যান নিয়ে ঘিরে ধরছে। সেখানে বোমা ফেলা হলো, আমার সহকর্মী আহত হলেন। তাই হাসিনার মিথ্যা আর কে হজম করবে জানি না, বাংলাদেশের মানুষ অন্তত খুব স্পষ্ট করে জানে কী হচ্ছে।
অর্ক- আশঙ্কা আছে ইউটিউব, ফেসবুক বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। এমন পরিস্থিতি হলে আন্দোলনকারীরা কী করবেন?
শহিদুল- ইন্টারনেট বন্ধ করা তো ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। তারমধ্যেও প্রতিবাদ চলছে। নারায়নগঞ্জের গডফাদার, হাসিনা ঘনিষ্ঠ শামীম ওসমানকে গতকাল পিটিয়ে ভাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদের আগে ছোঁয়া যেত না অবধি! এর আগে কিন্তু এমনটা কখনও হয়নি। ছাত্রলীগের নেতানেত্রীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এগুলি কিন্তু ভিন্ন লক্ষণ, এগুলি আগে হয়নি। ফলে পাল্টা স্রোত শুরু হয়ে গেছে তা বলাই যায়।