নিজের বেডরুমেই ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের!
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের তখন বেশ নামডাক। বোহেমিয়ান জীবনযাপনের মিথ থেকে দূরে পুরোদস্তুর সংসারী তখন তিনি। স্ত্রী কন্যা নিয়ে মিতায়তন সংসার। বাড়ির যাবতীয় কাজকর্মে সাহায্য করেন এক গৃহপরিচারিকা। পরিচারিকাটি খুব বেশি পুরোনো নন। অল্প দিন হলো তিনি বাড়িঘর ছেড়ে শক্তিদের বাড়িতে এসে রয়েছেন। তাঁর কাজকর্ম বেশ ভালোই চলছিল। বাড়ির সকলেই তাঁকে বেশ পছন্দ করতেন। একদিন জানা গেল বাড়ির এই মেয়ে সন্তানসম্ভবা, এ খবর শুনে তাঁর আত্মীয়কুটুম্বদের মনে আনন্দ আর ধরে না। দিন কয়েকের মধ্যেই হয়ত দেখা যাবে ফুটফুটে এক সন্তানের মুখ। কিন্তু সে সাধ আর পূর্ণ হল না। সন্তান জন্ম দেওয়ার যন্ত্রণা ওই পরিচারিকা সহ্য করতে পারেননি। এই ধকলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
নতুন সদস্য তো এলই নয় বরং পরিবারের এক সদস্য কমে গেল, শক্তিদের বাড়িও যেন কেমন ফাঁকা হয়ে এল। শোকের আবহাওয়ায় অন্ধকার নামলেই তাঁর মনে শুরু হয় ভয়। তাঁরা তিনজন ছাড়াও কে যেন একটা আছে বাড়িতে। তার উপস্থিতি খুব স্পষ্ট করে টের পাওয়া যায় না, কিন্তু সে আছে। পরিচারিকার মৃত্যু শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মনে দীর্ঘ ছাপ ফেলেছিল। তাঁর খালি মনে হতো, হঠাৎ করেই যেন তিনি দেখা দেবেন তাঁকে। কালক্রমে এমন পরিস্থিতি তৈরি হল যে রাতে আর তিনি একলা শুতে পারেন না।
এমনই এক দিনের কথা। রাত তখন বেশ ভালোই হয়েছে। মেয়ের ঘরে একটা ক্যাম্প খাট পেতে শুয়েছেন শক্তি। ঠিক এখানেই দিন কয়েক আগে রাতে ঘুমোতেন সেই পরিচারিকা। আশেপাশের খাটে সকলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঘুম নেই শুধু তাঁর চোখে। কীসের যেন একটা চাপা আতঙ্ক দু চোখের পাতা এক করতে দিচ্ছে না কিছুতেই। বিছানায় শুয়ে আকাশ পাতাল ভাবছেন আর এপাশ ওপাশ করছেন। এমন সময় তিনি দেখলেন 'খট' শব্দে নিজে থেকেই জ্বলে গেল আলোর সুইচ। আশ্চর্য, এ কেমন করে সম্ভব? এক তিনি ছাড়া তো বাড়িতে আর কেউ জেগে নেই। তাহলে কে জ্বালালো সুইচ? এদিকে অন্ধকারে আলোর আভাস পেয়ে তাঁর স্ত্রীর ঘুম ভেঙে গেছে। উঠে এসে আলো নিভিয়ে তিনি ফের শুয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন-কুচকাওয়াজ থেকে ‘ফ্লাইপাস্ট’, সাধারণতন্ত্র দিবস সম্পর্কিত এই অজানা তথ্যগুলি স্তম্ভিত করবে
শক্তি নিজের মনকে বোঝাতে লাগলেন, না না, অলৌকিক কিছু নয়। নিশ্চয়ই তিনি ভয়ের চোটে ভুল করে আলো জ্বলিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কঠিন মুহূর্তে মানুষের এমন যুক্তিবোধ প্রয়োজন পড়ে, নিজের স্নায়ুকে শক্ত রাখার জন্য। সে কৌশলই অবলম্বন করার চেষ্টা করছিলেন শক্তি। কিন্তু খানিকক্ষণ পর ফের এক কাণ্ড। এবার শুধু আলো জ্বলে উঠল না, পাখাও নিভে গেল নিজে থেকে। বিছানা ছেড়ে উঠলেন শক্তি। সুইচগুলো কি তাহলে ঢিলে? সেগুলোকে পরীক্ষাও করলেন তিনি, কিন্তু না, দিব্যি শক্ত হয়ে বোর্ডে এঁটে আছে। তাহলে এ কী করে সম্ভব? এমন শক্ত সুইচ, গায়ের জোরে কেউ না টিপলে নিজে থেকে ওঠানামা করে কী করে?
এবার তাঁর গা শিরশির করে উঠল। তাঁর অনুমান ছিল, ওই পরিচারিকার অতৃপ্ত আত্মা সে বাড়ি ছেড়ে যাননি। এবং শুধু তাই নয়, তাঁর শোয়ার জায়গা যে শক্তি ব্যবহার করছেন সেটাও তিনি ভালোভাবে নেননি। সেই কারণেই শরীরী অস্তিত্ব পেরিয়ে অশরীরী হয়ে তিনি ফিরে এসেছেন নিজের অধিকার বুঝে নিতে। সেই শেষ রাত। শোবার ঘর বদলাতে বাধ্য হলেন শক্তি। অনাহুত অতিথি হয়ে বাড়িতে যিনি এসেছেন তিনি শান্তিতে থাকুন। তাঁকে বিরক্ত করার ফল কী হতে পারে তার প্রমাণ তো হতে নাতেই পাওয়া গেল।
তথ্যঋণ-আদিম কলকাতার ভুতুড়ে বাড়ি, বারিদবরণ ঘোষ
(উল্লেখ্য উপরোক্ত ঘটনাটি নেহাতই একটি ব্যক্তিস্মৃতি। ভূতপ্রেত সংক্রান্ত কুসংস্কার ছড়ানোর উদ্দেশ্যে এই নিবন্ধটি লেখা হয়নি।)