NRC হলে কী হবে, বাংলা ভাষায় লস্কর-ই-তৈবার চিঠি কি বিজেপিরই দুর্বল চাল?
Shantanu Thakur Laskar-e-taiba: এত সুবিশাল জঙ্গিগোষ্ঠী চিঠি পাঠাতে ভারতীয় ডাকব্যবস্থাকে ভরসা করছে বিষয়টি খটকার নয় কি?
সিএএ চালু হয়ে গিয়েছে দেশে। এর পর যদি পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালু করে দেওয়া হয়, আর তাতে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের উপর কোনওরকমের অত্যাচার হয় তাহলে 'ঠাকুরবাড়ি' উড়িয়ে দেওয়া হবে! ঠাকুরবাড়ি মানে মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা শান্তনু ঠাকুরদের বাড়ি। বিদায়ী কেন্ত্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের কাছে নাকি এমনই এক হুমকি চিঠি এসেছে। তাও যে কোনও বেনামি উড়ো চিঠি নয়। চিঠির প্রেরক নাকি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সদস্য বলেও দাবি করেছে নিজেকে।
লোকসভা ভোট শিয়রে। এবারের ভোটে বনগাঁ আসনে মতুয়াদের ভোট ছিল বিজেপির বড় মাথাব্যথার কারণ। অমিত শাহ বহুকাল আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সিএএ-র মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে এদেশে আসা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। শান্তনু ঠাকুর নিজেও বহুবার এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমর্থন ও ভোট কুড়িয়েছেন। কিন্তু সিএএ-র দেখা মেলেনি। ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে তাই শান্তনু ঠাকুরের আসন ধরে রাখা জটিল হয়ে গিয়েছিল। ঠিক তখনই বিজেপি সরকার সিএএ অস্ত্র প্রয়োগ করে মতুয়া ভোট ও বনগাঁ আসন নিশ্চিত করতে চায়।
আরও পড়ুন- কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহার মোদির ভুয়ো ‘গ্যারান্টি’-র জবাব দিতে পারবে?
নিশ্চিত কি করা যায়নি? তাই এমন উড়োচিঠির দরকার পড়ল? বনগাঁ আসনে মূল বিরোধী তৃণমূলের বিরুদ্ধে বরাবরই মুসলমান তোষণের অভিযোগ ওঠে। সেই তোষণকে 'ভয়ঙ্কর' প্রমাণ করতে, ঠাকুরবাড়ি তথা মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে তাই মুসলিম বিরোধিতার জিগির কি তুলতেই হতো বিজেপিকে?রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন বিষয়টি খুবই দুর্বল চালের খেলা হয়ে গিয়েছে। মুসলমান মানেই জঙ্গি বিষয়টি বিজেপি অন্যত্র কাজে লাগিয়েছে ঠিকই তবে বাংলাতে এমন অযৌক্তিক চালে চিঁড়ে ভিজবে কি? সরাসরি লস্কর-ই-তৈবার নাম ব্যবহার করে ঘৃণা আর ভয় জাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কেন?
সোমবার দুপুরে ডাকব্যবস্থার মাধ্যমে নাকি শান্তনু ঠাকুরকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। লস্কর-ই-তৈবার চিঠি, তাও স্পষ্ট বাংলা ভাষায় তাও আবার ছাপার হরফে! লস্কর-ই-তৈবার মতো এক জঙ্গি গোষ্ঠী উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার হাদিপুর গ্রাম থেকে হুমকি চিঠি পাঠাচ্ছে, জঙ্গি গোষ্ঠীর দুই সদস্য নজরুল ইসলাম সাহেব আলি এবং ফজের আলির নাম দিয়ে? এত সুবিশাল জঙ্গিগোষ্ঠী চিঠি পাঠাতে ভারতীয় ডাকব্যবস্থাকে ভরসা করছে বিষয়টি খটকার নয় কি?
ওই উড়োচিঠিতে শান্তনু ঠাকুরের উদ্দেশে লেখা হয়েছে, "পশ্চিমবংলায় যদি এনআরসি হয় এবং এনআরসি-র ফলে যদি মুসলমানদের উপর কোনওরকম অত্যাচার হয়, তাহলে পশ্চিমবাংলা তথা সমগ্র ভারত জ্বলবে এবং আপনাদের ঠাকুরবাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হবে। কেউ আপনাদের ঠাকুরবাড়ি বাঁচাতে পারবে না। লস্কর-ই-তৈবার নাম শুনেছেন তো, আমরা লস্কর-ই-তৈবার সদস্য।' চিঠির নীচে প্রেরকের নাম ও ঠিকানাও উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানাবেন বলেছেন শান্তনু ঠাকুর। সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন তুলেছেন, মমতা নিজে পুলিশমন্ত্রী হওয়ার পরেও, কীভাবে এইরকম লস্কর-ই-তৈবার মাধ্যমে হুমকি আসে একজন প্রাক্তন মন্ত্রী, প্রাক্তন সাংসদের বাড়িতে।'
আরও পড়ুন- অপরিপক্ক নৌশাদের হাতে কীভাবে ঘোল খেয়ে গেলেন পক্ককেশ বামেরা?
তৃণমূলের প্রার্থী তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের দাবি, বিষয়টি সাজানো। চিঠি লেখানো, তা পাঠানো সবটাই শান্তনু ঠাকুরই লোক দিয়ে করিয়েছেন। মমতাবালা ঠাকুর বলছেন, ‘‘আমার মনে হয় শান্তনু নিজে তাঁর লোক দিয়ে এই চিঠি পাঠিয়েছেন। সিএএ প্রায় এক মাস হল চালু হয়েছে। এত দিন কিছু হয়নি। এখন লোকসভার আগে মানুষের সহানুভূতি ভোট পাওয়ার জন্য এই চিঠি নিজের লোক দিয়েই পাঠিয়েছেন তিনি। আমি মনে করি এই চিঠি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। এই ধরনের হুমকি ঠাকুরবাড়িতে কোনও দিন আসেনি। দেগঙ্গা থেকে যদি কেউ এ চিঠি পাঠিয়ে থাকেন, তা হলে তার সঙ্গে শান্তনুর যোগ রয়েছে। এর আগেও শান্তনু এই ধরনের মিথ্যা কথা বলেছেন। এটা সম্পূর্ণ নাটক।’’
মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যেই দুই শিবিরের লড়াই নতুন নয়। মমতাবালা ঠাকুর শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে বড়মা বীণাপানিদেবীর ঘর ও মন্দির ভাঙার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন। শান্তনুও পাল্টা বলেছেন, বড়মা বীণাপানি দেবীর স্মৃতিবিজড়িত ঘর কারও কুক্ষিগত হয়ে থাকা ঠিক নয়। তাই মতুয়া ভক্তরা ওই ঘরটিকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। ঘর হোক বা লোকসভা- দখলে মরিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল। ফলে এই চিঠির বয়ানকে উস্কানিমূলক করে তোলা হলে তাতে লাভ আখেরে বিজেপিরই।