মুসলিম সম্প্রদায়ের ফুল বেল পাতায় পূজিত হন দুর্গা, অমলিন রামকৃষ্ণের স্মৃতিধন্য এই পুজো!
Durga Puja 2022: এখানে একটি ৩২৩ বছরের প্রতিমার পুরোনো কাঠামো রয়েছে। সেখানেই দুর্গাকে নবরূপে সাজানো হয় ডাকের সাজে।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব চেয়েছিলেন পুজোয় মানুষের মিলন যেন বাধা না পায়। “দেখিস এই পুজো যেন বন্ধ না হয়,” বলেছিলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ। সেই থেকে কাহার পরিবারে হাতের তৈরি নাড়ু আর মুসলিম সম্প্রদায়ের ফুল বেল পাতায় পূজিত হন দুর্গা। শিকড়া কুলিগ্রাম ঘোষ বাড়ির এই পুজোর সূচনা আসলে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে। আকবরের রাজত্বে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে আজ অবধি ৩২৩ বছর ধরে স্বমহিমায় এই পুজো হয়ে আসছে। এই পুজো শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের মানসপুত্র রাখাল মহারাজের ঘোষ বাড়ির পুজো। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস, নানা লোককথাও।
রাখাল মহারাজ ছিলেন এই বাড়িরই আদরের সন্তান। রামকৃষ্ণ দেবের মানস পুত্র, বলা ভালো বেলুড় মঠের প্রথম অধ্যক্ষ রাখাল মহারাজ অর্থাৎ স্বামী ব্রহ্মানন্দ ঘোষ ছিলেন এই বাড়ির মেজো সন্তান। সেই পরম্পরা বজায় রেখে আজও পুজো করে চলেছেন রাখাল মহারাজের বংশধররা।
আরও পড়ুন-গণেশের কাটা মাথা লুকিয়ে রয়েছে এখানেই! চমক আর রহস্যে মোড়া পাতাল ভুবনেশ্বর গুহা
বাড়ির বর্তমান সদস্য দিলীপ ঘোষ, মিতালী ঘোষ, ডলি ঘোষ, মঞ্জু ঘোষদের কথায়, এই বাড়ি প্রথমে ছিল মাটির আটচালা ঘর। তারপর ঠিক ১০০ বছর পরে এই ঠাকুরদালান তৈরি হয়। এই ঠাকুরদালানেই পরম্পরা বজায় রেখে আজও দুর্গা পূজিত হন। করোনা মহামারী সময়েও এখানে পুজো হয়েছে।
স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব এই বাড়ির পুজোতে আসতেন। এই বাড়ি থেকেই রামকৃষ্ণ বাংলাদেশে গিয়েছিলেন ভক্তদের সঙ্গে দেখা করতে। তখন রাখাল মহারাজ ছোটো, এই বাড়ির ঠাকুরদালানের আনাচে-কানাচেই খেলা করে বেড়াতেন তিনি। শোনা যায়, পুজো আরম্ভ হলেই তিনি ধ্যানে মগ্ন হয়ে যেতেন।
আরও পড়ুন-আফ্রিকা থেকে চিতা আসছে বাঘমুখো বিমানে! ভারতের নতুন অতিথিদের নিয়ে যে তথ্য জানতেই হবে
আজও সেই বসিরহাটের শিকড়া কুলিনগ্রাম ঘোষ বাড়ির পুজো প্রাচীম উপাচার মেনেই আয়োজিত হয়ে থাকে। এখানে একটি ৩২৩ বছরের প্রতিমার পুরোনো কাঠামো রয়েছে। সেখানেই দুর্গাকে নবরূপে সাজানো হয় ডাকের সাজে। পুজোর ক’টা দিন সব সম্প্রদায়ের মানুষই ঠাকুরদালেন ভিড় জমান। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও ফুল, বেলপাতা নিয়ে আসেন পুজোর আয়োজনে। জাতি ভেদাভেদহীন উৎসবে মাতেন সব শ্রেণির, সব ধর্মের মানুষ। একসঙ্গে পুজোর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তাঁরা।
প্রসাদ থেকে বিভিন্ন ভোজের অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেন সকলে। এখানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হল দুর্গার বিসর্জন। আটজন বেয়ারার কাঁধে চড়ে নিজেদের গ্রামের পুকুরেই কলার ভেলায় চাপিয়ে দুর্গার বিসর্জন হয়। মেলাও বসে। সব মিলিয়ে ঘোষ বাড়ির পুজোর ইতিহাস আর ঐতিহ্য আরও অম্লান।

Whatsapp
