বায়ুদূষণ ঠেকাতে এয়ার পিউরিফায়ার! অজান্তেই ডেকে আনছেন কোন বিপদ

Air Purifier : বাতাসের বিষ কমাতে কি এয়ার পিউরিফায়ারই ভবিতব্য?

আজকের বিশ্বে ভয়ানক নানাকিছুর মধ্যে একটি হল বায়ুদূষণ। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় সাত মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা যায় এর প্রভাবে। এবং এই মৃত্যুর বেশিরভাগটাই ঘটে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে। কোনও দেশ যত বেশি উন্নত তত বেশি সেখানে দূষণ। এই সব জায়গায় খোলা জায়গায় প্রায়শই কঠিন জ্বালানী পোড়ানো হয়। যার থেকে তৈরি হয় মারাত্মক বায়ুদূষণ। সমীক্ষা বলছে, এই মৃত্যুর মধ্যে ২৬,০০০ থেকে ৩৮,০০০ জনই হচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। তবে বায়ুদূষণের প্রভাবে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যাটা সবথেকে বেশি বাংলাদেশে। ভারতেও অবশ্য সংখ্যাটা কিছু কম নয়।

সম্প্রতি করোনার দাপটে যখন সারা বিশ্ব তোলপাড় তখনই বেশি করে নজরে আসে বায়ুদূষণের দিকটি। বাতাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে মহামারী আকার নেওয়ায় গবেষকরা বায়ু দূষণ প্রতিরোধকারী মেশিন তৈরির দিকেও নজর দিতে শুরু করেন। এই যন্ত্রগুলির মধ্যে কিছু যন্ত্র তাপ বা ফটোক্যাটালিটিক অক্সিডেশন দ্বারা কাজ করে, অন্যগুলি শোষণ, পরিস্রাবণ, অতিবেগুনী জীবাণুনাশক বিকিরণ, আয়ন তৈরি এবং ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক বৃষ্টিপাত দ্বারা কাজ করে।

বায়ুদূষণে বর্তমানে নাভিশ্বাস উঠছে গোটা পৃথিবীর। স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক কুপ্রভাব ফেলছে এই দূষণ। পিছিয়ে নেই কলকাতাও। আর এরই উপজাত হিসেবে উঠে আসছে বহুজাতিক সংস্থার পণ্য এয়ার পিউরিফায়ার। মূলত করোনাকে কেন্দ্র করেই জাঁকিয়ে বসেছে এটি। বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রির হিসেব দেখলে লক্ষ্য করা যায় উর্ধমুখী গ্রাফটি। অদ্ভুত একটা সময়ে দাঁড়িয়ে গোটা সমাজ। যখন নিয়ত দূষিত হচ্ছে বায়ু অথচ তার প্রতিকার হিসেবে মানুষ পরিবেশের চেহারা বদলে দিকেও ফিরেও তাকাচ্ছে না বরং বিকল্প খুঁজে নিচ্ছেন ক্রমশ। আর দোকানগুলোতেও দেদার বিকোচ্ছে এয়ার পিউরিফায়ার।

আরও পড়ুন - এবার বাতিল জিনিস থেকে তৈরি প্লেনের জ্বালানি! কতটা কমবে পরিবেশ দূষণ?

একটা সময় পর্যন্ত পিউরিফায়ার বলতে কেবল জলের মেশিন বুঝত সকলে, এখন তার সঙ্গে এসে জুড়েছে বাতাসের অনুষঙ্গও। পরিবেশের দূষণ যেভাবে মাথাচাড়া দিচ্ছে, তবে কি মুক্ত বাতাস পেতে মেশিনই ভবিতব্য?

‘ল্যান্সেট কমিশন অন পলিউশন অ্যান্ড হেলথ' একটি সমীক্ষায় দেখিয়েছে, ২০১৭ সালে সারা পৃথিবীতে যত মানুষ মারা গিয়েছে, তার মধ্যে ১৫ শতাংশ মৃত্যুর কারণই এই বায়ুদূষণ। ​​​আর এই হিসেবে ভারতের অবস্থানটিও যথেষ্ট চিন্তার। এমনকী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর মারিয়া নায়রা জানিয়েছেন, ভারতে অকালমৃত্যুর জন্যও দায়ী এই বায়ুদূষণ। বহু শহরেই চিত্রটা বিপদসীমার অনেক উপরে।

কিন্তু এই যে অতিরিক্ত হারে পিউরিফায়ার কিনছি আমরা, তার জেরে অজান্তেই ডেকে আনছি না তো বিপদ? জেনে নিন এই যন্ত্র কেনার সময় কোন কোন বিষয়ের দিকে নজর রাখা আবশ্যক।

১. নিয়মিত মেশিনপরিষ্কার করতে হবে নচেৎ, বায়ু পরিশোধনের পরিবর্তে দুষণকেই বাড়িয়ে দিতে পারে।
২. ঘরের সাইজের ওপর নির্ভর করে পিউরিফায়ার কেনার ধরন। ঠিক যেভাবে বড় ঘরের ক্ষেত্রে বেশি লিটারের এসি লাগে ঠিক তেমন। এর অন্যথা হলে কোনও লাভই হয় না পরিবেশের অথচ মাসের শেষে বিদ্যুতের লম্বা বিল আসে।

আরও পড়ুন - এবার বাতিল জিনিস থেকে তৈরি প্লেনের জ্বালানি! কতটা কমবে পরিবেশ দূষণ?

৩. বাতাসে দূষিত গ্যাস এবং রাসায়নিক পদার্থ শোধনের জন্য সব এয়ার পিউরিফায়ারের মধ্যে ‘অ্যাক্টিভেটেড কার্বন লেয়ার’ বা ‘কার্বন ফিল্টার’ থাকে। এই ফিল্টার যত ভাল হবে পিউরিফায়ারের কার্যক্ষমতা তত বাড়বে। তাই এর দিকেও নজর দেওয়া আবশ্যক।

৪. এছাড়াও একধরনের পিউরিফায়ার বাজারে প্রচলিত আছে যেটি বায়ু পরিশোধনের পাশাপাশি ডেকে আনে শরীরের ভয়ানয় রোগ। ‘ইউভি ফিলট্রেশন’ বা ‘আয়োনাইজড বেসড’ পিউরিফায়ার থেকে ওজন গ্যাস নির্গত হয় যা ফুসফুসের সমস্যা তৈরি করে।

৫. আর দামের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে ভুলেও সস্তা খুঁজে বিপদ ডাকবেন না। দেখে নেবেন ভারী কিনা। নচেৎ দূষিত বায়ু পরিশোধনের বদলে অন্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।

সব শেষে যে কথাটি না বললেই নয়, তা হল খুব প্রয়োজন ছাড়া কেবল শৌখিনতার বশে এই যন্ত্রের প্রতি আসক্ত হয়ে না পড়াই ভালো। কারণ আমরা ঘরের বাইরে যে পরিবেশে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাই সেখানে বায়ুদূষণের মাত্রাকে ঠেকাতে কোনও যন্ত্রের ছাদ থাকে না। ফলে শরীরের নিজস্ব অভিযোজন ক্ষমতাকে জিইয়ে রাখা প্রয়োজন।

More Articles