রামকৃষ্ণ মিশন দখল করতে চায় জমি মাফিয়া? সত্যিই তৃণমূলের মদত আছে?

Siliguri Ramkrishna Mission: রামকৃষ্ণ মিশন-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণ, এই ইস্যু ঘিরে লোকসভা নির্বাচনের শেষাংশে এসে হিন্দুত্বের পালে হাওয়া তুলছে বিজেপিও।

কখনও পলাশী, কখনও সিরাজদৌল্লা, কখনও রামকৃষ্ণ মিশন- বাংলার রাজনীতি এখন এই আবর্তেই গোঁত্তা খাচ্ছে। তাতে ক্রমাগত ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছেন মোদি এবং মমতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সাধুদের সরাসরি গেরুয়া রাজনীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে আক্রমণ করেছেন। তাঁর নিশানায় রয়েছেন কার্তিক মহারাজ। মমতার অভিযোগ এই কার্তিক মহারাজই তৃণমূলের এজেন্ট বসতে দেননি বুথে, সাম্প্রদায়িক হিংসায় মদত দিয়েছেন। এই মন্তব্যের পর স্বাভাবিকভাবেই হইচই রাজ্যে। এই ডামাডোলের মধ্যেই শিলিগুড়িতে রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। মিশনের সন্ন্যাসীদের মারধর করে অপহরণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। এই সুযোগে আসরে নেমেছে বিজেপিও। সনাতন ধর্মের ধুয়ো তুলেছে তারা। সুকান্ত মজুমদার জোর গলায় বলছেন, এই রাজ্যে হিন্দু ধর্মের প্রতীক, সাধু, মিশন কিছুই সুরক্ষিত নয়।

শিলিগুড়িতে হঠাৎ রামকৃষ্ণ মিশনের জমিতেই কেন নজর পড়ল জমি মাফিয়াদের? রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের বিরুদ্ধে জমি জবরদখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ি শহরের সেবক রোডের চারমাইলে সেবক হাউজটি রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষকে দান করেছিলেন সুনীল কুমার রায় নামে এক ভক্ত। মূল রাস্তার উপর প্রায় আড়াই থেকে তিন একর জমিতে তৈরি সেবক হাউজে থাকেন রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের কিছু আবাসিক। পরে প্রদীপ রায় নামে এক ব্যক্তি ওই জমির মালিক হিসাবে নিজেকে দাবি করতে থাকেন। সেই জমির মালিকানা নিয়ে জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। আদালতের রায়ে সেই সম্পত্তি এখন মিশনের হাতেই রয়েছে। স্কুল তৈরির পরিকল্পনা করেছে মিশন কর্তৃপক্ষ। মিশনের বিরুদ্ধে জমি জবরদখলের চেষ্টার অভিযোগ করেছেন প্রদীপ। বলা হচ্ছে, আশ্রমের এই সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে ৩০-৪০ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতীকে নিয়ে সেখানে ঢুকে পড়েন প্রদীপ রায়। তিনিই নাকি জমি মাফিয়া। নিরাপত্তারক্ষী এবং আবাসিকদের খুনের হুমকি দিয়ে বাড়িছাড়া করা হয়। সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলা, মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন- রামকৃষ্ণ মিশন সত্যিই বিজেপির আজ্ঞাবহ? সাধু বিতর্কে ভোট হারাবেন মমতা?

রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রমের মতো প্রতিষ্ঠানের সাধুদের একাংশ 'পলিটিক্স' করে দেশের সর্বনাশ করছে বলে মনে করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই মন্তব্যের ঠিক পরেই উত্তরবঙ্গের এই রামকৃষ্ণ মিশনের ঘটনাটি সামনে আসে। উত্তরবঙ্গে গেরুয়া দাপট প্রবল। ফলে রামকৃষ্ণ মিশন-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণ, এই ইস্যু ঘিরে লোকসভা নির্বাচনের শেষাংশে এসে হিন্দুত্বের পালে হাওয়া তুলছে বিজেপিও। বারেবারে বিজেপি বোঝাতে চাইছে এই জমি দখলে মদত আছে তৃণমূলের। 

আরও পড়ুন- অধীরের লড়াইয়ে জল ঢালছে কংগ্রেস হাইকমান্ডই

রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ থেকে ভক্তিনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আবার রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রদীপ রায়। তিনি বলছেন, রামকৃষ্ণ মিশনেরই কয়েক জন সেবক হাউজে হামলা চালিয়েছেন। এই অভিযোগের পরেই পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের বের করে সেখানে তালা লাগিয়ে সিল করে দেয়। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, জমির মালিকানা নিয়ে যেখানে আদালতে মামলা চলছে, সেখানে পুলিশ কীভাবে সিল করতে পারে? পুলিশের ঝোলানো তালার সিলমোহরে ইংরেজিতে ‘ডিকে’ লেখা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শিলিগুড়ির সবচেয়ে বড় নির্মাণ সংস্থার নামে ওই সিলমোহর লাগানো হয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। মাঠে নেমেছে তৃণমূল। কার নির্দেশে তালা দেওয়া হলো সেবক হাউজে, প্রশ্ন তুলেছে দল।

এই গোটা ঘটনাটি এমন দিকে বাঁক নিয়েছে যে কলকাতা শহরে সাধুরা মিছিলের ডাক দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সুকান্ত মজুমদার, বুঝিয়ে দিয়েছেন সাধু-মিশন ইস্যুকে ব্যবহার করে আবারও এই রাজ্যে 'হিন্দু খঁতরে মে হ্যায়' জিগির তোলা সম্ভব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন মন্তব্য করে বিজেপিকেই কি সুযোগ করে দিলেন না জাঁকিয়ে বসতে?

More Articles