হাসপাতালে দীর্ঘ যুদ্ধ শেষ! প্রয়াত সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি

Sitaram Yechury Passes Away: বৃহস্পতিবার দুপুর ৩.০৫ মিনিটে প্রবীণ এই নেতার মৃত্যু হয়। অনেকদিন ধরেই দিল্লির এইমসে শ্বাসযন্ত্রের সহায়তায় ছিলেন প্রবীণ এই বাম নেতা।

এক দীর্ঘ সফর, দীর্ঘ অধ্যায়ের শেষ পাতাটি লেখা হলো যেন। দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগে প্রয়াত হলেন সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। প্রায় একমাস ধরে হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন তিনি। দীর্ঘ অসুস্থতার পরে, ৭২ বছর বয়সে বৃহস্পতিবার অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে (AIIMS) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত কয়েকদিন ধরে সঙ্কটজনক অবস্থায় ছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুর ৩.০৫ মিনিটে প্রবীণ এই নেতার মৃত্যু হয়। অনেকদিন ধরেই দিল্লির এইমসে শ্বাসযন্ত্রের সহায়তায় ছিলেন প্রবীণ এই বাম নেতা। তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের দল দিন কয়েক আগেই জানিয়েছিল, ইয়েচুরির শারীরিক অবস্থা গুরুতরই। খানিকটা নিউমোনিয়ার মতো বুকে সংক্রমণের জন্য সীতারাম ইয়েচুরিকে গত ১৯ অগাস্ট অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে ভর্তি করা হয়েছিল। একসময় প্রচুর ধূমপানের ফলে নিউমোনিয়া থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাঁকে।

১৯৫২ সালের ১২ অগাস্ট চেন্নাইতে জন্মগ্রহণ করেন সীতারাম ইয়েচুরি। ১৯৬৯ সালে দিল্লির প্রেসিডেন্ট এস্টেট স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। অর্থনীতিতে স্নাতক হন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি এই বিশ্ববিদ্যালয়েই। সিপিআইএমের ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া দিয়েই রাজনৈতিক জীবন শুরু করেম ইয়েচুরি। পরে ১৯৭৮ সালে এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক আর ১৯৮৪ সালে জাতীয় সভাপতি হন তিনি। ১৯৮৪ সালে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমন্ত্রিত হন তিনি এবং ১৯৮৫ সালে কলকাতায় ১২তম পার্টি কংগ্রেসে দলের প্রতিনিধি হন ইয়েচুরি। ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত হয়ে রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন ইয়েচুরি। 

মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী নীতি দিয়েই রাজনৈতিক অঙ্কগুলিকে ব্যাখ্যা করতেন ইয়েচুরি। রাজনৈতিক মহল বইলে, বরাবরই নরমপন্থী ছিলেন তিনি। অর্থনীতির ছাত্র হিসাবে রাজনৈতিক অর্থনীতিতে ছিল তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য। নির্বাচনে দলের অবস্থা যাই হোক না কেন, অর্থনীতি, জীবিকা এবং সামাজিক বাস্তবতার উপর ভিত্তি করেই সংগঠনকে বাঁধতে চাইতেন সীতারাম ইয়েচুরি। পি সুন্দরাইয়া, এম. বাসভপুন্নাইয়া এবং ই.এম.এস নাম্বুদিরিপাদের মতো মার্ক্সবাদীদের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন ইয়েচুরি।

আরও পড়ুন- আমাদের বড় হওয়ার সময়টাকে বুদ্ধদেব ভট্টচার্য তাঁর মূল্যবোধ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন

জাতীয় রাজনীতিতে যে কোনও বাহ্যিক প্রভাবকে রাজনীতির এনজিও-করণ বলে মনে করতেন ইয়েচুরি। সাংসদ থাকাকালীন ইয়েচুরি যুক্তি দিয়েছিলেন, কর্পোরেট হাউজ এবং এনজিওগুলিকে লোকপালের আওতায় আনতে হবে। তিনি বিশ্বাস করতেন, বেশিরভাগ এনজিও-স্পন্সরড বিশ্বায়ন বিরোধী আন্দোলন আসলে 'প্রেশার কুকারের সেফটি ভালভের মতো'। পরিচয়-ভিত্তিক রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলিরও প্রবল সমালোচক ছিলেন ইয়েচুরি। বিশ্বাস করতেন, জনগণ ইতিবাচক কর্মসূচি চায়। বিরোধী দলগুলির যদি বিকল্প কর্মসূচি এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প এজেন্ডা না আনতে পারে তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে নিছক বিরোধিতা করে মানুষের মধ্যে আস্থা জাগাতে পারবে না। দুই বছর আগে সিপিআইএমের রাজনৈতিক রেজোলিউশনে বাম ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচি সম্পর্কে তাদের মতামত প্রকাশ করার জন্য সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ইয়েচুরি।

ইয়েচুরির মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্র লোকসভার বিরোধী দলের নেতা, রাহুল গান্ধি বলেছেন, ভারতবর্ষকে গভীরভাবে বুঝতেন ইয়েচুরি। 'ভারতের দর্শনের রক্ষক' ছিলেন প্রয়াত বাম নেতা। লিখেছেন, “সীতারাম ইয়েচুরিজি বন্ধু ছিলেন। আমাদের দেশের গভীর উপলব্ধি ছিল তাঁর, ভারতের দর্শনর একজন রক্ষক ছিলেন। আমরা যে দীর্ঘ দীর্ঘ আলোচনা করতাম তা মিস করব।"

 

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, "ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসে তিনি নয় বছর সিপিআই(এম)-এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কঠিন রাজনৈতিক পর্যায় পেরিয়ে দলের নেতৃত্ব দেন। সীতারাম সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীদের জন্য এবং দলের নেতৃত্বের সুনির্দিষ্ট অবস্থান তৈরি করে সমগ্র ভারতীয় রাজনীতির জন্য একজন দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছিলেন।”

পণ্ডিত ও সুবক্তা এই বাম নেতার হাসপাতালে প্রায় ২৪ দিনের যুদ্ধ শেষ হলো। গত ৭ অগাস্ট ইয়েচুরির ছানি অপারেশন হয়েছিল। ফলে ৯ অগাস্ট প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষযাত্রাতেও থাকতে পারেননি সীতারাম ইয়েচুরি। ১৯ অগাস্ট থেকেই তাঁর শারীতিক অবস্থার অবনতি হয়। ফলে এইমসে ভর্তি হতে হয় তাঁকে। গত ২২ অগাস্ট প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভাতেও সশরীরে কলকাতায় হাজির থাকতে পারেননি তিনি। হাসতাপাতাল থেকেই একটি ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছিলেন। ২০২১ সালে সীতারাম ইয়েচুরির জ্যেষ্ঠ পুত্র আশিস ইয়েচুরি (৩৫) কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর ফুসফুসের জটিল সংক্রমণে মারা যান।

More Articles