রাতের পর রাত ঘুম নেই, জানেন আপনার সামান্য গাফিলতিই ডেকে আনতে পারে যে মারণ ঝুঁকি
Lack of deep sleep : রাতে ঘুমের অভাব, মামুলি ভেবে এড়িয়ে যাচ্ছেন? অজান্তেই যে ভয়ানক ক্ষতি ডেকে আনছেন আপনি...
সারাদিনের ব্যস্ততার পর রাতে যখনই শুতে যাচ্ছেন কিছুতেই ঘুম আসছে না? এপাশ অপাধ করেই কাটছে অর্ধেক রাত? মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে হাজারটা চিন্তা। জানেন কি এই কম ঘুমই ডেকে আনতে পারে ভয়ানক বিপদ! ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের তরফে বলা হয়েছে, একাধিক হার্টের সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে রাতে ঘুমের অভাব। এ ছাড়াও ঘুমের অভাবে শরীরে দেখা দিতে পারে কোলেস্টরলের সমস্যা, হার্ট অ্যাটাক, মেদবৃদ্ধি, মধুমেহ বা ডায়াবিটিস এবং স্ট্রোকের মতো সমস্যাও।
ঘড়িতে রাত দশটা মানে, সবে সন্ধ্যা! এটাই আজকের প্রজন্মের সিংহভাগের জন্য দস্তুর। রাত জেগে পড়াশোনা করার অভ্যাসের পাশাপাশি আজকের এই মোবাইল কম্পিউটারের যুগে সারাদিনের ব্যস্ততার পর ওই রাতের সময়টাকে অনেকেই বেছে নেন অবসর হিসেবে। একদিকে নেট দুনিয়ার আসক্তি অন্য দিকে চোখের সামনে মোবাইল একনাগাড়ে ধরে রাখার জন্য চোখের ওপর বাড়তি চাপ, দুয়ের প্রভাবে ঘুমের দারুণ ক্ষতি হতে পারে।
আরও পড়ুন - ব্রেকআপ হয়েছে সদ্য! জানেন, হার্ট অ্যাটাকের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আপনি?
টুং করে একটা শব্দ, নতুন কোন মেসেজ অথবা নোটিফিকেশন। অথবা নতুন বদল করা ছবিতে ঠিক কটা লাইক পড়ল সেটা দেখার কৌতূহল কিংবা কারোর সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথন, এ সবই থাবা বসাচ্ছে রাতের ঘুমের ওপর। এদিকে চিকিৎসকদের মতে, যে কোনও বয়সেই নির্দিষ্ট এবং পরিমিত ঘুম হল যে কোনও রোগ নিরাময়ের অন্যতম চাবিকাঠি। অন্যদিকে, ঘুমের অভাব ডেকে আনতে পারে শরীরের জটিল সমস্যা। যার মধ্যে একটা বড় সমস্যা হল সাডেন হার্ট অ্যাটাক অর্থাৎ আচমকা হৃদরোগ জনিত সমস্যা।
ইউরোপীয় হার্ট জার্নালে প্রকাশিত ওয়ারউইক মেডিকেল স্কুলের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, ঘুমের অভাবে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিওভাসকুলার ডিসঅর্ডার-এর মতো একাধিক মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। এমনকী এইসব রোগের মধ্যে একাধিকই ডেকে আনতে পারে মৃত্যুর ঝুঁকিও। চিকিৎসকদের মতে, রাতের ঘুমের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হার্টের। রাতে অন্তত ৭ ঘণ্টা জোরালো ঘুম যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য আবশ্যিক। অন্যদিকে ঘুমের পরিমাণ কম হলে বেড়ে যেতে পারে কার্ডিও-ভ্যাসকুলার ডিসিজের সমস্যা। আপনি হয়তো ভাবছেন, সারাদিনের মধ্যে যে কোনও সময় খানিক ঘুমিয়ে নিয়ে রাতের ঘুমের ঘাটতি মেটাবেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাদিনের ঘুম রাতের ঘুমের বিকল্প হতে পারে না। রাত নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে খাওয়া সেরে অন্তত আধঘন্টা সময় ঘোরাফেরা করে তারপর রাতে ঘুমোতে যাওয়া স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। এই সময় বাড়তি অশান্তি অথবা নেট দুনিয়ার সঙ্গে সংযোগ যত কম হবে ততই ঘুম ভালো হবে। খেয়াল রাখবেন, উচ্চ রক্তচাপ অথবা ব্লাড সুগার থাকলে ঘুমের সময়ের সঙ্গে কোনও আপোষ করা যাবে না। কারণ এই দুই রোগ থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কম ঘুম অজান্তেই ডেকে আনতে পারে হার্ট অ্যাটাক। এছাড়াও সমীক্ষায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ঘুম কম হলে সেরিব্রাল স্ট্রোকের সম্ভাবনাও বাড়ে।
আরও পড়ুন - অল্প বয়সেই কাবু হচ্ছে হৃদয়! যৌবনেই কেন বারবার নেমে আসছে প্রাণঘাতী হার্ট অ্যাটাক?
ভালো ঘুমের জন্য কী কী করবেন?
১. রাতে ঘুমের সময় ফোন খানিক দূরত্বে রাখুন, যাতে হাতের নাগালে সহজে না পান। এমনকী এলার্ম দেওয়ার প্রয়োজন হলেও ফোনের বদলে ছোট টেবিল ঘড়ি ব্যবহার করার কথা ভাবুন।
২. রাতে খাওয়ার পর হাত আধ ঘণ্টা হাঁটাচলা করে তারপর শুতে যান।
৩. সারাদিন ছোটখাটো কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন যাতে ক্লান্তি থেকে সহজেই ঘুম আসে।
৪. অ্যাসিড জাতীয় খাবার রাতের দিকে একেবারেই এড়িয়ে চলুন।
৫. এছাড়াও চা কফি ইত্যাদি উত্তেজক পানীয় রাতের দিকে খেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
৬. মাথায় রাখবেন, অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন এবং ধূমপান কেড়ে নিতে পারে রাতের ঘুম। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগুলি এড়িয়ে চলুন।