আরজি কর কাণ্ডে আদালতে নিজের বক্তব্য জানাতে পারবে ধৃত সঞ্জয়? কী বলছে ভারতের আইন?

RG Kar Case: ধৃত সিভিক ভলিন্টিয়ার সঞ্জয় রায় সিবিআইয়ের প্রথম চার্জশিট দেখার পর ভরা আদালত চত্বরে জানালেন, তাঁর কিছু বলার আছে।

আরজি কর কাণ্ডে ধৃত সিভিক ভলিন্টিয়ার সঞ্জয় রায় সিবিআইয়ের প্রথম চার্জশিট দেখার পর ভরা আদালত চত্বরে জানালেন, তাঁর কিছু বলার আছে। এর আগেও তিনি আদালতে নিজের সমর্থনে মুখ খুলেছেন। এমনকী নার্কো পরীক্ষা করার জন্য সিবিআই যে দাবি আদালতে জানিয়েছিল, তা-ও খারিজ হয়ে যায় সঞ্জয়ের অনুমতি না পাওয়ায়।

গত ৯ অগস্ট আরজি কর কলেজের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও অত্যাচারের ভয়ঙ্কর প্রমাণ মেলে। সেই ঘটনার পরেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত সন্দেহে সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলিন্টিয়ারকে। সিবিআইয়ের প্রথম চার্জশিটে তাঁকে মূল দোষী হিসেবে দেখানো হয়েছে।

আরজি কর কাণ্ডে সঞ্জয় রায় ধরা পড়ার পরেই বারবার আলোচনায় এসেছে ধনঞ্জয় কাণ্ড। আরজি করের ঘটনায় আদৌ সঞ্জয়ই দোষী, নাকি তাঁকে দোষী হিসেবে সাজানো হয়েছে, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তদন্তকারীরা বারবার সঞ্জয়ের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। এমনকী লাই ডিটেক্টর পরীক্ষাতেও তাঁর বক্তব্যে যথেষ্ট অসমাঞ্জস্য খুঁজে পান তাঁরা।

ছাতনার কুলুডিহা গ্রামের বাসিন্দা ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এক স্কুলছাত্রীকে আবাসনের ভিতরেই ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছিল। ভবানীপুরের ওই আবাসনে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন তিনি। ১৯৯০ সালের ওই ঘটনায় ২০০৪ সালে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল ধনঞ্জয়কে। যে মামলা এখনও রীতিমতো আলোচনার বিষয়।

আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের চার্জশিট দেখে চরম প্রতিক্রিয়া আরজি কর অভিযুক্তের, কোর্টে যা জানাল ধৃত সঞ্জয়

ধনঞ্জয়ের পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা আজও মনে করেন, ধনঞ্জয় আসলে এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। ধর্ষিতা ও নিহত ছাত্রী এক প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে ছিল। সেই কারণেই ধনঞ্জয়ের উপর ঘটনার পুরো দায় চাপিয়ে 'আসল অপরাধী'কে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়। সেই মামলা রিওপেনেরও আর্জি উঠেছে বহু বার। আরজি করের ঘটনার প্রসঙ্গে বারবার আলোচনায় এসেছে ধনঞ্জয়ের ফাঁসির ঘটনা। এমনকী আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ পাননি ধনঞ্জয়, অভিযোগ এমনটাও।

যেমন সুযোগ দেওয়া হয়নি পার্লামেন্ট বিস্ফোরণ কাণ্ডে ধৃত আফজল গুরুকে। ২০১৩ সালে কাশ্মীরী যুবক আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়। অথচ খোদ পুলিশের চার্জশিটেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল না। প্রাণভিক্ষার আবেদন পড়েছিল রাষ্ট্রপতি ভবনে অনেকদিন। এই মামলাতেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পায়নি আফজল, এমন অভিযোগ ওঠে। এই ফাঁসি যথাযথ নয়, এমন আলোচনাও শোনা যায়।

The main accused in the RG Kar case will get a chance to defend himself in court?

তবে কি ভারতীয় সংবিধান দোষীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয় না? আলবাত দেয়। ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২২ (১) অনুযায়ী, প্রতিটি ব্য়ক্তির তাঁর পছন্দের আইনি অনুশীলকারী ব্যক্তির দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থন ও নিজেকে বাঁচানোর অধিকার রয়েছে। এটা তাঁর মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। অনুচ্ছেদ ১৪ অনুযায়ী, আইনের সামনে সমতা ও ভারতের ভূখণ্ডের মধ্যে আইনের সমতা পাওয়ার সুরক্ষাও কিন্তু তাঁর অধিকার। একই সঙ্গে অনুচ্ছেদ ৩৯এ, DPSP-এর অংশ বলে যে অর্থনৈতিক বা অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণেও কোনও নাগরিক ন্যায়বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। সেসব ক্ষেত্রে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পেতে বাধ্য তিনি। যে কারণে সমস্ত আইনজীবী আরজি কর অভিযুক্তের হয়ে লড়তে না চাইলেও শেষমেশ সরকারি আইনজীবী জুটেছিল ধৃত সঞ্জয়ের ভাগ্যেও।যে কোনও অভিযুক্ত তো বটেই, এমনকী প্রমাণিত অপরাধী-সহ প্রত্যেক মানুষেরই মৌলিক মানবাধিকার রয়েছে, যাতে তাঁরা নিজের কথা আদালতে জানাতে পারেন, এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের পুরোপুরি সুযোগ পান। হাজার অপরাধী আইনের ফাঁক গলে যদি বেরিয়ে যায় তো যাক, এক জন নিরপরাধ ব্যক্তিও যেন শাস্তি না-পায়। ন্যায়বিচারের চিরাচরিত বিধানে এ ভাবেই নির্দোষের রক্ষাকবচ নির্দিষ্ট করা আছে। আর তা নির্দিষ্ট করতে গেলে প্রতিটি অভিযুক্ত, প্রতিটি দোষীসাব্যস্তের কথা শোনাটাই দস্তুর। 

আরও পড়ুন: ৫৮ দিন পর আরজি কর কাণ্ডে প্রথম চার্জশিট সিবিআইয়ের! কী রয়েছে ২১৩ পাতার সেই চার্জশিটে?

বহু ক্ষেত্রেই বহু মামলাতেই সেই মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ উঠলেও, সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হওয়ার মামলাও এ দেশেই ভুরি ভুরি রয়েছে। ফলে সংবিধানের উপর আস্থা রেখেই বলা যায়, সেই সুযোগ ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না আরজি কর অভিযুক্তও। যেমনটা তাঁকে বলা হয়েছে শিয়ালদহ আদালতের বিচারকও। মঙ্গলবার আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চাইলে তাঁকে আশ্বস্ত করে বিচারক জানান, তিনি সময় পাবেন নিজের বক্তব্য পেশের। তার পরেই ধৃতকে অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারকের কাছে আনা হয়। নির্ভয়া মামলার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট দোষীসাব্যস্তদের আবেদন খারিজ করে দিলেও নিজেদের কথা জানানোর সুযোগ তারা পেয়েছিল আদালতের সামনে। আরজি করের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল।

More Articles