কোনওটা ১০ বছর, কোনওটা আবার ৫৭! যেসব বই লিখতে সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে

Longest time to write Books : সবচেয়ে বেশি সময় নিয়ে লেখা হয়েছিল বিখ্যাত কিছু বই, এক নজরে দেখে নিন তালিকা...

বই; দুই অক্ষর, দুই মলাট। অথচ এর মধ্যেই রয়েছে পৃথিবীর সমস্ত কিছুর হিসাব। যে কোনও বিষয়ে যা কিছু জানার পরিধি তার সন্ধান মেলে এই দুই মলাটের মধ্যেই। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে নেট দুনিয়ার দৌলতে ই-বুক এসেছে ঠিকই তবে বইয়ের পাতায় পাতায় যে গন্ধটা লুকিয়ে থাকে তার ঐতিহ্য আলাদা। একটা বই মানে তো কেবল কয়েকটা অক্ষর নয়, সেই অক্ষরগুলোর পিছনে জমে থাকা এক একটা লম্বা ইতিহাসও বটে। অনেক দিনের জমানো মুহূর্ত, যারা এতদিন কেবল একটা ক্যানভাস খুঁজছিল, তারা যেন লেখকের কলমের জোরে যথার্থ মুক্তি খুঁজে নেয়। একটা বই মনে তাই বহু বহু ইতিহাস। যা লিখতে কখনও কখনও লেগে গিয়েছে অনেকখানি সময়। টানা কয়েক বছর ধরে লেখা হয়েছে সেইসব কালজয়ী বই। আসুন জেনে নেওয়া যাক, বিশ্বের এমন কিছু বইয়ের নাম যেগুলি লিখতে সবথেকে বেশি সময় লেগেছিল।

‘লর্ড অব দ্য রিংস’ - জে আর আর টোকিয়েনের লেখা উপন্যাস। কেবল বইয়ের পাতা নয়, পর্দাতেও সমানভাবে সমাদৃত। ড্রাগন, কথা বলা গাছ থেকে ভয়ানক সব জন্তু— সব কিছু মিলিয়েই ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’। গ্যালাদ্রিয়েল চরিত্রটি এই গল্পের কথক।এক দিকে যেমন গ্যালাদ্রিয়েলের কাহিনি এগিয়ে চলে, একই সঙ্গে চলে হারফুর্ট, ডোয়ার্ফ, এল্ভস এবং মানুষের গল্প, তাদের বেঁচে থাকার কাহিনি। গল্প যত এগিয়ে যায়, ততই এক একটি চরিত্রের সঙ্গে আলাপ হতে থাকে। আর এই এতগুলি চরিত্র বলেই গল্প বুনতে অনেকগুলো বছর সময় লেগে যায়। প্রায় ১৭ বছর ধরে লেখা হয় এই অনবদ্য বইটি।

আরও পড়ুন - হোমার থেকে শেক্সপীয়র, কালের যাত্রায় চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে যে বিখ্যাত বইগুলি

‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ - ১৯৩৬ সালে লেখা মার্গারেট মিশেলের উপন্যাস। এই গল্পটি নিয়ে তৈরি ছবির নামও গল্পের নামেই, ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’। এটি মার্কিন দেশের দক্ষিণভাগের এক প্ল্যান্টেশন মালিকের মেয়ে স্কারলেট ওহারার গল্প। ১৮৬১-৬৫-র গৃহযুদ্ধের পটভূমিকে প্রেক্ষাপট করা হয়েছে এই গল্পে। একবার পায়ে চোট লেগে বেশ কিছুদিন যাবৎ ভুগেছিলেন লেখিকা মিশেল। এই আরোগ্যের সময়টাই ছিল তাঁর উপন্যাস লেখার শুরু। তবে উপন্যাসের সমগ্র গল্প গোছাতে তাঁর সময় লেগে গিয়েছিল টানা দশ বছর।

‘দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই’ - ১৯৫১ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই’ জে.ডি. স্যালিঞ্জারের একমাত্র প্রকাশিত উপন্যাস। এর আগে তিনি ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকায় কয়েকটি ছোট গল্প লেখেন এবং কয়েকটি উপন্যাসিকা প্রকাশ করেন। তবে সাফল্যের পরও স্যালিঞ্জার আর কোনো উপন্যাস প্রকাশ করেননি। ‘দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাজে আলোড়ন ওঠে। এতে হোল্ডেন কৌলফিল্ড নামের একজন বিক্ষুদ্ধ বিদ্রোহী কিশোরের ভুতুরে কর্মকাণ্ডের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। গল্পটি অনেক পাঠকের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে আবার অনেককে অসন্তুষ্ট করে। শোনা যায়, উপন্যাসটি প্রকাশের পর অধিকাংশ বিদ্যালয় এটি নাকি নিষিদ্ধও করে দিয়েছিল। এটি শেষ করতে লেখকের টানা দশ বছর সময় লেগে যায়।

লা মিজারেবল - এই পৃথিবীতে, এমনকী আমাদের চেনা গন্ডিতেই এমন বেশ কিছু মানুষ আছে যারা ভাগ্যের পরিহাসে সারাজীবন শুধু দুঃখই পেয়ে যান, সুখ তাদের কাছে বহুদূরের এক মরীচিকা হিসেবেই থেকে যায়। এমনই এক চিরদুঃখী মানুষকে নিয়ে প্রখ্যাত ফরাসি ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগো রচনা করেন সর্বকালের অন্যতম সেরা উপন্যাস, নাম ‘লা মিজারেবল’। ১৮৩০ সালে প্রথম এই উপন্যাসটি লেখার ভাবনা মাথায় আসে লেখকের। তবে লেখা শুরু করতে সময় লেগে যায় আরও ১৫ বছর। অবশেষে ১৮৪৫ সালে প্রথম শুরু। এরপর টানা ১২ বছর লাগে লেখার কাজ সম্পূর্ণ হতে। তারও আবার পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ১৮৬২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এই বিখ্যাত উপন্যাসটি।

আরও পড়ুন - খোদ মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো মলাট! আজও রহস্য বয়ে বেড়াচ্ছে ৫০০ বছরের পুরনো পাণ্ডুলিপি

স্ফেয়ার - প্রখ্যাত লেখক মাইকেল ক্রিচটনের এই বইটিকে ঘিরে প্রকথম সিনেমা তৈরি হয় নব্বইয়ের দশকে। এটিও বিশ্বের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক স্মারক। এই বইটি শেষ করতে লেখকের প্রায় ২০ বছর সময় লেগে গিয়েছিল।

ক্যান্টোস - টানা কয়েক দশক ধরে প্রখ্যাত লেখক এজরা পাউন্ডের লেখা টুকরো টুকরো অংশের মিশেল এই বই। পাউন্ড ১৯১৫ সালে দ্য ক্যান্টোস বইটি লেখার কাজ শুরু করেন এবং প্রথম তিনটি পর্ব আগামী দুই বছর অর্থাৎ ১৯১৭ সালে পোয়েট্রি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে পরবর্তী পর্বগুলি লিখতে সময় লেগে যায় আরো অনেকখানি শোনা যায় কিছু পর্বের খসড়া নাকি তিনি টয়লেট পেপারে লিখেছিলেন। সম্পূর্ণ কাজটি শেষ করেন অর্ধেক জীবনেরও বেশি সময় ধরে। সময়টা ৫৭ বছর।

জুরাসিক পার্ক - মাইকেল ক্রিচটনের দ্বিতীয় বিখ্যাত উপন্যাস এটি। প্রায় আট বছর সময় লেগেছিল এই বিখ্যাত বইটি লিখতে। এই মূলত একটু সায়েন্স ফিকশন। এই বইটিকে ঘিরে সিনেমা থেকে শুরু করে বেশ কিছু ওয়েব সিরিজ হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে। প্রতি ক্ষেত্রেই এই গল্পের জনপ্রিয়তা জানান দিয়েছে আজও ঠিক কতটা প্রাসঙ্গিক এই লেখনী। এটিও শেষ করতে লেখকের একটা লম্বা সময় লেগেছিল।

More Articles