গ্রামের পুজো কাটান রাজার হালে! এলাহি বন্দোবস্ত নিয়ে অপেক্ষায় সুন্দরগ্রাম

Sundargram: পুজোর চারটে দিন সেখানে মিলবে একেবারে গ্রামবাংলার পুজোর স্বাদ। আর পুজোর মরসুমে সেটাই ইউএসপি এই সুন্দরগ্রামের। যার টানে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে যান মানুষ।

পুজো মানেই কলকাতা! আবার পুজো মানেই ছুটি ছুটি, ব্যাগ গুছিয়ে গুটি গুটি বেরিয়ে পড়া অজানার সন্ধানে, অচিনের খোঁজে। কিন্তু তাতে আবার বাদ পড়ে যায় পুজোর আনন্দ গোটাটাই। সব কি আর একসঙ্গে হয়! অতএব একটা না একটা ছাড়তেই হয়। কিন্তু যদি একই পাতে মেলে দুয়ের স্বাদ, কেমন হয় বলুন তো? মানে ধরুন প্রকৃতিও মিলল, পুজোও। কে বলল, এমনটা সম্ভব নয়। বাড়ির একদম পাশেই রয়েছে এমন সুযোগ, শুধু চোখ খুলে দেখবার পালা।

আরও পড়ুন: শহরের ক্যাকাফোনি থেকে দিন তিনেকের মুক্তি, পুজো কাটান এবার ‘ঘুটঘুটানন্দজি’-র ডেরায়

প্রকৃতির সান্নিধ্যে বিশুদ্ধ গ্রামবাংলার পরিবেশে মিলবে পুজোর স্বাদ। এবছরের পুজো কাটুক বরং তেমনই সুন্দর কোনও গ্রামে। সুন্দর গ্রাম, নামের মতোও সাজানো সুন্দর এক এলাকা, যেখানে একই সঙ্গে মিলবে গ্রামবাংলার আস্বাদ এবং আউটিংয়ের মজা। কলকাতা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দুরে উত্তর ২৪ পরগনার রাজেন্দ্রপুরের এই গ্রাম যেমন হতেই পারে আপনার পুজোর চারদিনের আস্তানা, তেমনই হতে পারে সপ্তাহান্তের গন্তব্যও।

সবে সবে বর্ষা কেটেছে কি কাটেনি। সবুজের রং লেগেছে গ্রামের আনাচে কানাচে। সবুজ গাছগাছালিতে ভরা সুন্দরগ্রামে তাই চেনা-অচেনা পাখিদের ভিড়। গ্রাম থেকে একটু দূরেই বয়ে চলেছে বিদ্যাধরী নদী। তার পাশেই রয়েছে মালঞ্চ গ্রাম। মৎস্যপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ এই মালঞ্চ গাঁ।

গোটা গ্রামের একটা বিস্তৃত অংশ জুড়ে গড়ে উঠেছে হোমস্টে। তাতে কলকাতার কাছেই সপ্তাহ শেষে বেড়াতে যাওয়ার ঠিকানা যেমন মিলেছে, তেমনই স্থানীয় মানুষের জন্য় জীবিকার ব্যবস্থাও করেছে সুন্দরগ্রাম। রীতিমতো পরিকল্পনা করে পর্যটকদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে সাজানো হয়েছে জায়গাটিকে। রয়েছে পুকুর। চাইলে পর্যটকেরা সেখানে মাছ ধরতে পারেন। চারদিকে খেলে বেড়াচ্ছে হাঁস-মুরগির ঝাঁক। গ্রামীণ জীবনে যা যা দেখার মেলে, তার সবকিছুই মিলবে ছোট্ট এই গ্রামটিতে।

কলকাতার সায়েন্স সিটি থেকে ঘটকপুকুর হয়ে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে এগোলেই চন্ডীপুর। সেখান থেকে ডানদিকে ঘিরে কিছুটা এগোলেই রাজেন্দ্রপুর গ্রাম, সেখানেই মিলবে সুন্দরগ্রামের হদিশ। বাসে গেলে কলকাতা থেকে উঠে পড়ুন মালঞ্চগামী, মিনাখাঁ বা ধামাখালীগামী কিংবা ঘটকপুকুরগামী যে কোনও বাসে। ঘটকপুরে নামলেই মিলবে অটো বা ভ্যান। যা ধরে পৌঁছে যাবেন আপনার স্বপ্নের ঠিকানায়।

পুজোর সময় একটু বেশি রকম মনকাড়া এই সুন্দরগ্রাম। না, শুধুমাত্র নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, কাশের ঢেউ কিংবা শিউলি ফোঁটা ভোরের কারণে নয়। সুন্দরগ্রাম রিসর্টে পর্যটকদের জন্য থাকে পুজোয় মেতে ওঠার সুযোগ। দুর্গাপুজোর চারটে দিন দুর্দান্ত ব্যস্ততা সুন্দরগ্রাম জুড়ে। দুর্গাপুজোর আয়োজন বলে কথা। কোনও খুঁত থাকতে দেন না কর্তৃপক্ষ। পুজোর চারটে দিন সেখানে মিলবে একেবারে গ্রামবাংলার পুজোর স্বাদ। আর পুজোর মরসুমে সেটাই ইউএসপি এই সুন্দরগ্রামের। যার টানে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে যান মানুষ। কটা দিন শহরের দুশ্চিন্তা, চিৎকার থেকে দূরে কাটিয়ে আসেন মানুষ নিশ্চিন্ত প্রকৃতির কোলে।

সুন্দরগ্রামে যাওয়ার জন্য আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো। গুগলের দ্বারস্থ হলেই মিলবে ওয়েবসাইটের খোঁজ। সেখান থেকে সরাসরি বুকিং করতে পারেন। প্রয়োজনে ফোন করে জেনে নিতে পারেন খুঁটিনাটিও। সুন্দরগ্রামের এই ঠিকানায় মিলবে মাটির ঘরে থাকার সুযোগ। রয়েছে বাঁশের তৈরি বিছানা। প্রয়োজনে অবশ্য মিলবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরও। মোট পাঁচটি ঘরকে প্রকৃতি ও গ্রামীণ বাদ্যযন্ত্রের নামে সাজিয়েছেন তারা। আকাশ, বাতাস, ধামসা, মাদল ও দোতারার মধ্যে থেকে বেছে নিতে পারেন মনপসন্দ ঘর।

আরও পড়ুন: উত্তর কলকাতায় নামছে বিক্রম ল্যান্ডার! দুর্গাপুজোয় যে বিশাল চমক পাচ্ছে কলকাতাবাসী

তবে এবারের পুজো কাটুক না তবে একটু অন্যভাবে, অন্য়স্বাদে। এক্কেবারে গ্রামের পটভূমিতেই কাটুক আপনার বাংলা ও বাঙালির প্রাণের উৎসব।

More Articles