রোজের চাপে চিড়েচ্যাপ্টা! অক্সিজেন নিয়ে আসুন এই সস্তার স্বর্গ থেকে
Shivkhola: দার্জিলিং, গ্যাংটক তো অনেকবার গিয়েছেন। তবে সেই সব চিরাচরিত গন্তব্য ছেড়ে বেরিয়ে আসুন বরং একেবারে ছক ভাঙা গন্তব্যে।
শহরের এই ভিড়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন। অফিসের কাজ, বাড়ির একশোটা ঝামেলা সামলাতে সামলাতে নাভিশ্বাস। এই সময় একটাই ওষুধ আপনাকে বাঁচাতে পারে। না, দাওয়াইখানায় মিলবে না সেই ওষুধ। তবে আগেকার দিনের কবিরাজ মশাইরা প্রায়শই শরীর সারাতে এই অব্যর্থ দাওয়াইটির কথা বলতেন। ঠিকই ধরেছেন, মন খারাপ-একঘেয়েমির কঠিন অসুখ থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে প্রকৃতির স্পর্শ। দিনকয়েকের ছুটি বাগিয়ে বেরিয়ে পড়ুনই না একবার। চট করে টিকিট কেটে উঠে পড়ুন হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নিউজলপাইগুড়িগামী যে কোনও ট্রেনে। সবুজ পাহাড়ের স্বপ্ন দেখতে দেখতে লাগান এক ঘুম। দেখবেন চোখ খুলতে না খুলতে পৌঁছে গিয়েছেন সেই স্বপ্নের স্টেশনে।
এই এনজেপি থেকে দার্জিলিং, গ্যাংটক তো অনেকবার গিয়েছেন। তবে সেই সব চিরাচরিত গন্তব্য ছেড়ে বেরিয়ে আসুন বরং একেবারে ছক ভাঙা গন্তব্যে। চারদিকে পর্যটকদের বাঁধভাঙা ভিড় নেই, কোলাহল নেই। বরং ঝরনার অবিরাম বয়ে যাওয়ার শব্দ আর পাখির ডাক আপনার বন্ধু হবে এখানে। যা শহরের দূষণ, ক্যাকাফোনির কথা আপনাকে ভুলিয়ে ছাড়তে বাধ্য। কী যেতে রাজি? তবে এনজেপি স্টেশনে নেমে একটা গাড়ি বুক করে সোজা চলে যান শিবখোলায়।
আরও পড়ুন: দিঘা-পুরী বাসি! বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরে নির্জনে হোক সস্তার সমুদ্রস্নান
রংটং থেকে সোজা এগোলেই রাস্তায় পড়বে শিবখোলা। কার্শিয়াং থেকে বেশ কাছে এই জায়গাটি। শিলিগুড়ি শহর থেকে শিবখোলার দূরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। সুকনা থেকে গেলে আরও কম, আঠারো কিলোমিটার মাত্র। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আপনাকে পৌঁছে দেবে আপনার প্রিয় গন্তব্যে।
হালকা ঠান্ডা ছুঁয়ে থাকে শিবখোলাকে সর্বক্ষণ। চারদিক শান্ত, নির্জন। পাশ দিয়ে আপনাকে ছুঁয়ে নেমে যাচ্ছে খরস্রোতা নদী। নদীটির নামও শিবখোলা। পাশেই পাহাড়ের গায়ে গায়ে মনমাতানো চা-বাগান। হোমস্টেগুলি বাগান ঘেঁষা, সে পরিবেশ এতটাই মনোমুগ্ধকর, যে দেখবেন ঘরের ভিতরে ঢুকতেই ইচ্ছা করবে। অন্ধকার নামতে না নামতেই জ্বেলে ফেলুন বনফায়ারের আগুন। নদী-ঝরনার শব্দ, শিরশিরে ঠান্ডার সে রাতের মধ্যে যে কী মোহময় রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, তার হদিশ পাওয়া এ শহরে বসে কঠিন।
থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা এই শিবখোলায় অভাব হবে না কথা দিচ্ছি। চাইলে থাকতে পারেন শিবখোলা অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পের ডিলাক্স রুমেও। অন্যান্য থাকার জায়গাও পেয়ে যাবেন সহজেই। এই ক্যাম্পে নাকি রান্না হয় কাঠের উনুনে। যা খাবারে মাখিয়ে দেয় এক অকৃত্রিম প্রকৃতির স্বাদ। শহরের কোত্থাও যার নাগাল পাবেন না আপনি!
তবে শুধুই কি শিবখোলাতেই বসে থাকবেন নাকি। গাড়ি ধরে টুক করে চলে যান কার্শিয়াং। কার্শিয়াং ঘোরার পাশাপাশি পাখি দেখার শখ থাকলে চলে যান রংটং-এ। পাখি দেখার স্বর্গ এই রংটং। না, শুধু পাখির জন্যই নয়, চা বাগান ঘেরা এই পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যখন দেখবেন পাশ দিয়ে কু ঝিক ঝিক করতে করতে চলে গেল নীল ট্রয়ট্রেনখানা, তখন রাজেশ-শর্মিলা জুটির কথা মনে পড়তে বাধ্য। তাছাড়া রংটংয়ের মোমোর স্বাদ নাকি একবার চাখলে ভোলেন না কেউ! ফলে সেটাও বাদ দেবেন না।
আরও পড়ুন:শহর ছেড়ে অনেক দূরে: মন মাতাবেই সবুজে মাখা পাহাড়ি স্বপ্ন-গ্রাম
তবে পাখিপ্রেমীদের জন্য শুধু রংটং নয়, এই শিবখোলাও কিন্তু পাখিপ্রেমীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় জায়গা। শিবখোলায় অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পের পাশাপাশি রয়েছে বহু পুরনো একটি শিবমন্দির। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এ মন্দির নাকি দারুণ জাগ্রত। ফলে একেবারে নাস্তিক না-হলে একবার ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন সেখান থেকেই। আর বাকি প্রকৃতির মায়াবি আঁচল তো রইলই। পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখুন শিবখোলার আশপাশটাও। আর তারপর এত সবুজ-সুন্দরের মধ্যে দু-একদিন থাকার পর যদি শহরে ফেরার না ইচ্ছা না হয়, তার জন্য কিন্তু লেখক দায়ী নয় মোটেই।