নদী-জঙ্গল মাখা রোদের আদর! এই শরতে ডাকছে পাহাড়ি মায়া-গ্রাম
Weekend Trip to Dooars: চারপাশে পাহাড় আর জঙ্গলে মোড়া সে এক অপূর্ব মায়াবি জায়গা যেন। প্রকৃতির পাঠশালা বললেও একে ভুল হয় না।
পাহাড়ের নাম শুনলেই যাঁদের মন আনন্দে নেচে ওঠে, ছুট্টে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছা করে বাক্স-প্যাঁটরা বেঁধে, তাদের জন্য রত্নভাণ্ডারে খোঁজ রয়েছে হাতের কাছেই। উত্তরবঙ্গ মানেই আসলে অপূর্ব কিছু ল্যান্ডস্কেপের সেরা ঠিকানা। আকাশে হেলান দেওয়া পাহাড়, উচ্ছ্বল ঝর্নার পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা, বুকে পাথর নিয়ে তিরতিরে করে বয়ে যাওয়া নদী। ঠান্ডার আমেজ আর ধোঁয়া ওঠা মোমোয় মিষ্টি কামড়। এসব গল্প শুনেই যাঁদের মন আনচান, তাদের জন্য সেরা ঠিকানা হতেই পারে ডুয়ার্সের সুনতালেখোলা।
কোনও মতে অফিস থেকে ছুটি বাগিয়ে বেরিয়ে পড়লেই হল। হাতে দিন পাঁচেক মতো সময় হলেই দ্বিতীয় ভূস্বর্গে পৌঁছে দেবে আপনাকে এনজেপিগামী যে কোনও ট্রেন। তবে মালবাজার জংশনে নামলে আরও কাছে পড়বে এই জায়গাটি। চারপাশে চা বাগান, মধ্যিখানে রাস্তা। মেটেলি থেকে গোটা রাস্তাটাই নিয়ে যাবে আপনাকে চা-বাগানের ভিতর দিয়ে। চারদিকে শান্ত, ঠান্ডা শিরশিরে হাওয়া ছুঁয়ে দিচ্ছে বুক-পিঠ-মন। চা গাছকে ছায়া দিয়ে দাঁড়িয়ে পর পর ছায়াবৃক্ষ। একে বলে শেড ট্রি। চা গাছের বেড়ে ওঠার জন্য় নাকি দারুণ জরুরি এই শেড-ট্রি। রোদ ছায়ার সমীকরণ ঠিকঠাক না হলে চা-বাগান নাকি মিছে। সেইসব শেডট্রির ডালে ডালে পাখিদের ওড়াউড়ি দেখতে দেখতে চোখ যাবে চা-বাগান শেষে দাঁড়িয়ে থাকা ভুটান পাহাড়ে। পাসপোর্ট না লাগলেও সে অন্য দেশ। তারই পাদদেশে ছোট গ্রাম। সুনতালেখোলা থেকে সামসিংয়ের দূরত্ব ৯ কিলোমিটার মতো। আর যদি সামসিংয়ের দিক থেকে আসেন, তাহলে সুনতালেখোলার আগেই পড়বে বন দফতরের চেকপোস্ট। সেই চেকপোস্ট পেরিয়ে আরও কিছুটা যেতে না যেতেই পৌঁছে যাবেন সুনতালেখোলা নেচার ক্যাম্পে। চারদিকে জঙ্গল, বুনো গন্ধ। হরেক রকম পাখি আর প্রজাপতির মেলা আশপাশে। শীতকাল আসতে আর বেশি বাকি নেই। এইবার আস্তে আস্তে গাছে ধরতে শুরু করবে কমলালেবু।
আরও পড়ুন: পাহাড়-সমুদ্র বোরিং! দু’হাত বাড়িয়ে আপনাকে ডাকছে অরণ্যসুন্দরী
চারপাশে পাহাড় আর জঙ্গলে মোড়া সে এক অপূর্ব মায়াবি জায়গা যেন। প্রকৃতির পাঠশালা বললেও একে ভুল হয় না। নেপালি ভাষায় সুনতালের অর্থ নাকি কমলালেবু আর খোলা শব্দের মানে নাকি নদী। বর্ষা গিয়ে সবে। এখনও বর্ষার সবুজ লেগে রয়েছে প্রকৃকির কোলে। এখনও পর্যন্ত অনাবিষ্কৃতই বলা যায় এই জায়গাটিতে। তাই পর্যটকদের তেমন ভিড় নেই এই জায়গাটিতে। নেওড়াভ্যালির গহন অরণ্যে মিশেছে এসেছে এখানে সমতলের সঙ্গে। চারদিকটা ছোটবড় জঙ্গল আর চা-বাগানে ঘেরা। আর তাদের ঘিরে রেখেছে ছোটবড় একগাদা পাহাড়।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই জায়গাটার উচ্চতা প্রায় ৩০০০ ফুট। মূর্তি নদী বয়ে গিয়েছে সুনতালেখোলার বুকের উপর দিয়ে। এই নদীর বুকে রয়েছে কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি একটি ঝুলন্ত সেতু। নদীর দু-পাড়কে বেঁধে রেখেছে এই সেতু। চারপাশে ঘন জঙ্গল। সেখান দিয়ে এগেলেই বনদফতরের মূল ফটক। এই মূর্তি নদীর তীরে নিস্তরঙ্গ অবসর কাটাতে চাইলে সুনতালেখোলার চেয়ে আদর্শ জায়গা আর কী-ই বা হতে পারে।
চারপাশে রয়েছে একাধিক হোমস্টে। সেখানে থেকে ঘুরে আসতে পারেন সামসিং থেকে। সুনতালেখোলা থেকেই পেয়ে যাবে গাড়ি। মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে রকি আইল্যান্ড। ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও। মূর্তি নদীর ধারে পাহাড় আর জঙ্গল নিয়ে রকি আইল্যান্ড। যদি হাঁটাহাঁটির ইচ্ছে থাকে, তা হলে সেখান থেকে গাইড নিয়ে চলে যেতে পারেন নাগাভ্যালি। সেখান থেকে ৫ কিমি দূরে ফুলে ফুলে সেজে থাকা মোহময়ী সুন্দরী গ্রাম। আরও এগিয়ে পথ গিয়েছে আরণ্যক সাকাম-এ। তাছাড়া যেতে ঝালং এবং প্যারেন-এও। এ দু'টি জায়গাও খুব বেশি দূরে নয় সুন্তালেখোলা থেকে। ঘুরে আসতে পারেন বিন্দু থেকেও। একই রুচটে পড়বে চাপড়ামারি জঙ্গল, গরুমারা ন্যাশনাল পার্কও। এমনকী হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন ঝান্ডি থেকেও।
আরও পড়ুন:রোজের চাপে চিড়েচ্যাপ্টা! অক্সিজেন নিয়ে আসুন এই সস্তার স্বর্গ থেকে
সব ঋতুতেই আলাদা আলাদা রকমের সুন্দর সুনতালেখোলা। গ্রীষ্মের ছাপ তেমন নেই এখানে। তবে বর্ষায় ফুলেফেঁপে ওঠে মূর্তি। পাহাড় থেকে নামা ঝর্নাগুলোর শরীরেও লাগে আলাদা স্রোত। বর্ষার জল গায়ে পড়তে না পড়তে অন্যরকম ভাবে সেজে ওঠে গোটা জঙ্গল। ঝাউ, দেবদারু, মেহগিনি, অর্জুন বা কমলালেবু গাছেদের তখন পায় কে! শীতের ছোঁয়া লাগতে না লাগতেই প্রজাপতির মেলা বসে। কুয়াশামাখা পাহাড়েরা দাঁড়িয়ে থাকে রোদের আশায়। পাখিদের ওড়াউড়ি বাড়ে। শীত আর বর্ষার মাঝখানের এই সময়টা তো সবদিক থেকেই আদর্শ। ফলে সারাবছরের যে কোনও সময় তো যেতেই পারেন সুনতালেখোলা, তবে শরতের মায়ামাখা রোদ্দুরে গা ভেজাতে চাইলে আর দেরি করার সময় নেই। আজই ব্যাকপ্যাক তুলে বেরিয়ে পড়ুন সুন্দরী সুনতালেখোলার উদ্দেশে।