সূর্যের চেয়ে ১০ হাজার গুণ বড় নক্ষত্র! উঠে এল যে ছবি...
celestial monster : সূর্যের চেয়েও ১০ হাজার গুণ বড় তারা রয়েছে মহাকাশে! সামনে এল বিরল দৃশ্য...
সূর্যের চেয়েও দশ হাজার গুণ বড় একটা নক্ষত্রের সন্ধান মিলল মহাকাশে, শুনতে অবাক লাগলেও সম্প্রতি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) প্রথম আবিষ্কার করেছে যে মহাকাশে সূর্যের ভরের থেকেও প্রায় ১০,০০০ গুণ বড় তারার অস্তিত্ব রয়েছে। যা কিনা সূর্যের থেকেই প্রায় পাঁচ গুণ বেশি উষ্ণতা সম্পন্ন। গত ৫ মে অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স জার্নালে প্রকাশিত একটি বিশেষ গবেষণার মাধ্যমে সামনে এসেছে এই তথ্য। গবেষকরা এই বিশাল দৈত্যাকার নক্ষত্রকে মনস্টার সান বা আকাশীয় দানব বলে অভিহিত করেছেন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক কোরিন চারবোনেল জানিয়েছেন, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দ্বারা সংগৃহীত তথ্যের জন্যই আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে বলে। পাশাপাশি তিনি এও জানান যে, অসাধারণ এই নক্ষত্রগুলির উপস্থিতির প্রথম সূত্র তারাই খুঁজে পেয়েছে সর্বাগ্রে।
গবেষকরা গ্লোবুলার ক্লাস্টারের অভ্যন্তরে একটি বিশালাকার নক্ষত্রের রাসায়নিক চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। এই গ্লোবুলার ক্লাস্টারগুলি সাধারণত আঁটোসাঁটো, প্রায় গোলাকার আকৃতিতে ঘনিষ্ঠভাবে প্যাক করা কয়েক হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ তারার সমষ্টি। যার মধ্যে অনেকগুলি আমাদের মহাবিশ্বে তৈরি হওয়া সবচেয়ে প্রাচীন। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ওপর ছড়িয়ে থাকা মোটামুটিভাবে ১৮০টি গ্লোবুলার ক্লাস্টার একসঙ্গে একই বিন্দুতে এসে মেলে। ফলে তা বিরাট দানবের আকার ধারন করে।
রহস্যজনকভাবে, আজ থেকে প্রায় ১৩.৪ বিলিয়ন বছর আগে প্রায় একই সময়ে এবং একই গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ থেকে তৈরি হওয়া সত্ত্বেও এই ক্লাস্টারের কিছু নক্ষত্রের উপাদানগুলি এক হলেই তাদের মধ্যে অনুপাত রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন। অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সোডিয়াম এবং অ্যালুমিনিয়াম এর মতো ধাতব কনার অস্তিত্ব প্রায় সবকটিতে মিললেও তা ভিন্ন ভিন্ন অনুপাতে। এগুলি ভরের দিক থেকে সূর্যের চেয়েও প্রায় ১০ হাজার গুণ বৃহৎ। উষ্ণতা ১৩৫ মিলিয়ন ডিগ্রি ফারেনহাইট। অর্থাৎ সূর্যের থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
আরও পড়ুন - মহাবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন গ্যালাক্সির খোঁজ বিজ্ঞানীদের! ইতিহাস সৃষ্টি করল যে আবিষ্কার
ওই বিবৃতিতে ইউনিভার্সিটি অব বার্সেলোনার অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক ড. মার্ক গিলেস বলেছেন, একটি গ্লোবুলার ক্লাস্টারের বয়স ১০ থেকে ১৩ বিলিয়ন বছরের মধ্যে, যেখানে সুপারস্টারদের সর্বোচ্চ আয়ুষ্কাল দুই মিলিয়ন বছর। তাই তারা বর্তমানে পর্যবেক্ষণযোগ্য ক্লাস্টারগুলি থেকে খুব তাড়াতাড়ি অদৃশ্য হয়ে গেছে। শুধুমাত্র পরোক্ষ চিহ্ন রয়ে গেছে।
প্রাচীন দানবদের বিক্ষিপ্ত রাসায়নিক অবশিষ্টাংশ খুঁজে বের করার জন্য, গবেষকরা GN-z11 গ্যালাক্সিতে JWST-এর ইনফ্রারেড ক্যামেরাকে ব্যবহার করেছেন। এটি পৃথিবী থেকে ১৩.৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে বসে থাকা সবচেয়ে দূরবর্তী এবং প্রাচীন ছায়াপথগুলির মধ্যে একটি। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই ছায়াপথে অবস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে আলো শোষণ করে এবং নির্গত করে, তাই সমগ্র GN-z11 জুড়ে পাওয়া বিভিন্ন গ্লোবুলার ক্লাস্টার থেকে আসা আলোকে ভেঙে দিয়ে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছিলেন যে এর তারাগুলি উচ্চ মাত্রার নাইট্রোজেন দ্বারা বেষ্টিত ছিল। এই আবিষ্কার নিয়ে ইতোমধ্যেই গবেষকরা যথেষ্ট উত্তেজিত। আগামীতে আরও দানবীয় নক্ষত্রের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া নিতে তাঁরা আশাবাদী। মহাকাশের ছায়াপথে উপস্থিত গ্লোবুলার ক্লাস্টার জুড়ে আরও নতুন কোনও নক্ষত্রের সন্ধান তাঁরা দিতে পারেন কিনা এখন দেখার সেটাই।