৯১ বছরেও পুরোদমে কাজ করছেন ক্যামেরার পিছনে, চেনেন গিনেস বুকে নাম তোলা এই পরিচালককে?
World oldest director : পুরোদমে কাজ করছেন থাইল্যান্ডের চ্যালং পাকদীভিজিৎ, সবচেয়ে বেশি বয়স্ক পরিচালক ইনিই
৫০ পেরোলেই শরীরের বেহাল দশা। হার্টের অসুখ, বেড়ে যাওয়া কোলোস্টরেল, হাঁটুর সমস্যা অথবা সুগার, প্রেসার ইত্যাদি, হাজার রোগের ফতোয়া জারি। এটা অবশ্য শুনতে নতুন কিছু লাগছে না, ঘরে ঘরে এখন এটাই দস্তুর। কিন্তু এ ঘটনা তো পুরো উলোটপুরাণ। শুনলে অবাক হবেন, বয়স নব্বই পেরিয়েছে তাঁর, এখনও দিব্যি বহাল তবিয়তেই আছেন। শুধু তাই নয়, পুরোদমে রোজ কাজ পর্যন্ত করে চলেছেন। বিশ্বের ইতিহাসে নজির গড়েছেন নিজের কাজের মাধ্যমেই। এমনকী গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নামও তুলেছেন ইতিমধ্যেই।
নাম চ্যালং পাকদীভিজিৎ। আদতে থাইল্যান্ডের বাসিন্দা হলেও, গোটা বিশ্বের চলচ্চিত্র ইতিহাসে উজ্জ্বল নাম তাঁর। আশেপাশে একগুচ্ছ কম বয়সী শিল্পীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিয়ত কাজ করে চলেছেন বছর একানব্বইয়ের এই ‘তরুণ’ শিল্পী। ক্যামেরার পিছনে থেকে দৃশ্যকে সাজিয়ে তোলাই তাঁর কাজ। চোখের দৃষ্টি এখনও তুখোড়। দৃশ্যের কোথাও কোনও ফাঁক খুব সহজেই ধরা পড়ে তাঁর ক্যামেরায়।
আরও পড়ুন - ঠাকুমার কাছেই আজীবন কৃতজ্ঞ রতন টাটা! টাটা সন্সের প্রথম মহিলা পরিচালক আজও আড়ালেই
নিশ্চিন্ত অবসরের প্রতি কোনও দিনই বিশেষ লোভ ছিল না তাঁর। আজীবন কাজের মধ্যেই থাকতে চেয়েছেন চ্যালং। শুধু বড়ো পর্দা নয়, ছোট পর্দায় কিছু পরিচালনার ক্ষেত্রেও সমান জনপ্রিয় তিনি। থাইল্যান্ডে সিনেমা মহলে তিনি পরিচিত কিং অফ অ্যাকশন নামে। চ্যালং-এর সিনেমা বা টিভি ধারাবাহিক মানেই তাতে টানটান রোমাঞ্চ, অ্যাকশন। তাঁর কাজের মধ্যে এই যে সবসময় একটা উত্তেজনা জমাট বেঁধে থাকে, সেটাই আকৃষ্ট করে দর্শকদের। আর ঠিক সেই কারণেই তাঁকে এই কিং অফ অ্যাকশন তকমা দেওয়া হয়।
আগাগোড়া কাজ পাগল এই মানুষটিই গোটা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক পরিচালক, যিনি এখনও কাজ করে চলেছেন। বলাই বাহুল্য যে, এখনও কোনও বার্ধক্যজনিত রোগ তাঁকে ছুঁতে পারেনি। রীতিমতো হেঁটে চলে বেড়ান শ্যুটিং পাড়ায়। এখনও তাঁর নির্দেশেই অভিনেতা অভিনেত্রী থেকে শুরু করে মেকাপ, লাইট, সাউন্ড সমস্ত কিছুই নির্দেশিত হয়।
১৯৫০ সালে ক্যামেরাম্যান হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন চ্যালং। এরও প্রায় আঠারো বছর পর অর্থাৎ ১৯৬৮ সালে জাও ইনসি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ। সত্তরের দশকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন থং (অনুবাদিত: গোল্ড) নামের একটি চলচ্চিত্র সিরিজের মাধ্যমে। এটিই প্রথম থাই চলচ্চিত্র যেখানে বিদেশী অভিনেতারা প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। গোটা কর্মজীবন জুড়ে আমেরিকান অভিনেতাদের কাস্ট করতে থাকেন তিনি। এই তালিকায় রয়েছেন গ্রেগ মরিস, জ্যান-মাইকেল ভিনসেন্ট, ক্রিস্টোফার মিচাম এবং অলিভিয়া হাসি সহ আরও অনেকেই।
আন্তর্জাতিক বাজারে থাইল্যান্ডের সীমানা ছাড়িয়ে আর্থিক ও সমালোচনামূলক সাফল্য অর্জনকারী প্রথম পরিচালক হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়।তাঁর কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে, ফন তাই (১৯৭০), ফন নুয়া (১৯৭০), গোল্ড রাইডারস (১৯৮২), আইস অফ দ্য কন্ডর (১৯৮৭), এবং ইন গোল্ড উই ট্রাস্ট (১৯৯০)।
আরও পড়ুন - অস্কারের মঞ্চে কলকাতার মেয়ে! ‘এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’-এর দৌলতে বিরল কৃতিত্ব বাঙালি কন্যার
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে যখন থাই সিনেমার টিকিট বিক্রি কমতে শুরু করে, তখন চালং টিভি শো পরিচালনার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন। নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করে তোলেন তাঁর কাজের পরিসরকে। ছোট পর্দায় তাঁর নির্দেশিত প্রথম শো, রায়া (১৯৯৮), সমালোচকদের বহুল প্রশংসা লাভ করে। এটি থাইল্যান্ডের চ্যানেল ৭ নেটওয়ার্কের সাথে চালং-এর দীর্ঘ সম্পর্কের সূচনা করে।
নিলসেন রেটিং অনুসারে, থাইল্যান্ডে প্রতি বছর শীর্ষ দশটি সর্বোচ্চ-রেটেড মিনিসিরিজের মধ্যে চলং-এর শো থাকেই। তিনিই একমাত্র পরিচালক যিনি থাইল্যান্ডের সর্বকালের শীর্ষ দশটি সর্বোচ্চ-রেটেড টিভি মিনিসিরিজ - চুম্পা (৩০০৭) এবং সাও হার (২০১১)-এর তালিকায় একাধিক শো করেছেন৷ আজ এই এতো বছর বয়সে এসেও সমান দক্ষতায় কাজ করে চলেছেন তিনি। শুধু তাঁর সিনেমা নয়, তিনিও যেন ভরপুর অ্যাকশন-প্যাকড।