মৃত্যুর চারশো বছর পরও কবর জোটেনি! রানিকে দেখতে এসে পর্যটকরা কেন খাবলে নিতেন হাড়?
Catherine of Valois: মৃত্যুকালীন অবস্থায় রানির যেমন চেহারা হয়েছিল সেই একইভাবে বানানো কাঠের পুতুলটি আজও চ্যাপেলে বর্তমান।
ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের মধ্যে চলা একশো বছরের যুদ্ধের অবসান হয়েছিল তাঁকে পণ হিসাবে ব্যাবহার করে, ক্যাথরিন অব ভ্যলোইস ছিলেন পঞ্চম হেনরির স্ত্রী ও ফরাসি রাজা ষষ্ঠ চার্লসের সব থেকে কনিষ্ঠ কন্যা। শুনে যতটা তাঁকে প্রভাবশালী মনে হচ্ছে ততটা আদৌ তিনি ছিলেন না। ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মতো পরাক্রমশালী দুই দেশের মধ্যে চলা ঝামেলার অবসান ঘটাতে ক্যাথরিন ব্যাবহৃত হয়েছিলেন প্রায় চুক্তি হিসাবে। কিন্তু ক্যাথরিন অব ভ্যালোইসের দুর্ভাগ্য এখানেই শেষ নয়, মৃত্যুর পরও পেয়েছিলেন সমান অসম্মান ও অযত্ন। ইংল্যান্ডের রানির কপালে জুটেছিল চরম অবহেলা। কী এমন কারণে মৃত্যুর ৪০০ বছর পরও প্রাপ্য কবরটুকুও জোটেনি তাঁর? ইংল্যান্ডের রানি হয়েও কেন সাধারণ মানুষের আকর্ষণ ও কৌতূহলের পাত্রী ছিলেন তিনি?
ক্যাথরিনের জীবন ছোটো থেকেই ছিল অবহেলায় ভরা। ফরাসি রাজা ষষ্ঠ চার্লস এবং রানি ইসাবেলা বাভারিয়ার সন্তান ছিলেন ক্যাথরিন, ছিলেন ইংল্যান্ডের মহারানি কিন্তু জড়িয়েছিলেন অবৈধ সম্পর্কেও। বেশিদিনের আয়ু ছিল না ঠিকই কিন্তুর মৃত্যুর পর তাঁর যাত্রা ছিল আরও ভয়ঙ্কর। ১৪০১ সালের ২৭ অক্টোবর জন্ম হয় তাঁর। বাভারিয়া ও চার্লসের বারো জন সন্তানের মধ্যে মাত্র আট জন বেঁচে ছিলেন যার মধ্যে ক্যাথরিন ছিলেন একজন। ক্যাথরিনের বড় বোনদের মধ্যে ইসাবেলা ছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় রিচার্ডের দ্বিতীয় স্ত্রী। ইসাবেলার যখন মাত্র ছয় বছর বয়স তখন ঊনত্রিশ বছর বয়সী রিচার্ডের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। ইসাবেলাকেও বিয়ে দেওয়া হয়েছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে। একই গতি হয়েছিল তাঁর বোন ক্যাথরিনেরও। পিতা রাজা চার্লস ছিলেন ‘পাগল’, লোকে তাঁকে বলত ‘ম্যাড চার্লস’ আর মা বাভারিয়া সন্তানদের প্রতি মনোযোগই দিতেন না। বাভারিয়া নয় রাজনৈতিক বিষয়, নয় তাঁর ব্যাক্তিগত জীবন নিয়েই ব্যাস্ত থাকতেন। ক্যাথরিন তাই ছোটো থেকেই ছিলেন অবহেলিত, উপেক্ষিত। তাঁর শিক্ষারও ঠিক মতো ব্যবস্থা করা হয়নি।
ক্যাথরিন অবশ্য দিদি ইসাবেলার মতো বাল্যবধূ ছিলেন না। যখন ক্যাথরিনের তেরো বছর বয়স তখনই ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম হেনরির জন্য তাঁর সম্বন্ধ আসে। পঞ্চম হেনরি ক্যাথরিনের দিদি তথা ইংল্যান্ডের রানি ইসাবেলার রূপে পাগল ছিলেন কিন্তু ইসাবেলাকে যেহেতু তিনি বিয়ে করতে পারবেন না তাই তাঁর নজর গিয়ে পড়ে ফ্রান্সের রাজকন্যা ক্যাথরিনের উপর। ১৪১৫ সালে হেনরি তাঁর পিতা হেনরি চতুর্থের যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে রাজ সিংহাসনে বসেন। রাজা হওয়ার পরেই হেনরি দুই দেশের মধ্যে ঝামেলার সুযোগ নিয়ে ফ্রান্সের কাছে প্রচুর পণ ও সঙ্গে ক্যাথরিনের হাত দাবি করেন ও দুই দেশের মধ্যে শান্তি রক্ষার আহ্বান জানান। কিন্তু প্রচুর পরিমাণ পণ ফ্রান্স দিতে রাজি না হওয়ায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয়। দুই দেশের মধ্যে চলা যুদ্ধে ক্যাথরিন পরিণত হয়েছিলেন পণ্য সামগ্রীতে। যেন বিক্রেতা তাঁর যোগ্য দাম ছাড়া পণ্য বেচবেন না অন্যদিকে ক্রেতাও তাঁর মনের মতো দাম না পেলেও পণ্য না নিয়ে যাবেন না। অনেক ঝামেলা দরদামের পর অজিনকোর্টের যুদ্ধে হেনরি জিতলে অবশেষে ১৪২০ সালে স্বাক্ষরিত হয় ট্রয়েসের চুক্তি ও চুক্তি অনুযায়ী বিয়ে হয় রাজা পঞ্চম হেনরি ও ফরাসি রাজকন্যা ক্যাথরিন অফ ভ্যালোইসের।
পরের বছর রাজা ও রানি মহা সমারোহে ফিরে আসেন ইংল্যান্ডের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে। মহারানি পদে অভিষেক হয় ক্যাথরিনের। কিন্তু তাঁর এই প্রতিপত্তি ও সৌভাগ্য বেশিদিন টেকে না, কিছুদিন বাদেই অন্তঃসত্ত্বা রানিকে রেখে হেনরি যুদ্ধে যান। ১৪২১ সালের ডিসেম্বর মাসে জন্ম হয় হেনরি ষষ্ঠের কিন্তু পুত্রের মুখ আর দেখতে পারেননি রাজা। যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন হেনরি, মৃত্যুবরণও করেন। মাত্র বাইশ বছর বয়সে বিধবা হন ক্যাথরিন। একে বয়সে ছোট তার উপর ইংল্যান্ডের রানি হওয়া সত্ত্বেও রাজসভায় তাঁর কোনও অধিকার ছিল না। এমনকী নিজের ছেলের উপরও কোনও প্রভাব ছিল না তাঁর।
আরও পড়ুন- কীভাবে গৃহপালিত গাধা বদলে দিয়েছিল সভ্যতার ইতিহাস, বিবর্তনের এই কাহিনি আজও অজানা
ইংল্যান্ডের রাজসভার ভয় ছিল যে ক্যাথরিন যদি অন্য কাউকে বিয়ে করেন তাহলে ভবিষ্যৎ রাজার উপর তাঁর সৎ পিতার প্রভাব পড়তে পারে। তাই রানির নামে মিথ্যে প্রেমের গুজব ছড়িয়ে রাজসভায় বিল পাশ হয় যে, ক্যাথরিন অব ভ্যালোইসের সন্তান অর্থাৎ হেনরি ষষ্ঠ যতদিন না রাজ সিংহাসনে বসার যোগ্য হচ্ছে ততদিন রানি অন্য কাউকে বিবাহ করতে পারবেন না। ইংল্যান্ডের মহারানি হয়েও নিজের ইচ্ছার উপর কোনও জোরই ছিল না ক্যাথরিনের। কিন্তু বেশিদিন রানির এই একাকীত্ব থাকে না। হেনরি মারা যাওয়ার পরেই ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে থেকে অন্য স্থানে চলে যান রানি আর সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় ওয়েন টুডরের। এর সঙ্গেই ইংল্যান্ডের রাজ পরিবারে ভিত্তিস্থাপন হয় অন্য বংশের।
রানির পোশাক ও গৃহকর্মের দায়িত্বে ছিলেন ওয়েন। কিন্তু খুব দ্রুত তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক বিস্তার লাভ করে, জন্ম হয় ওয়েন ও ক্যাথরিনের পাঁচজন সন্তানের। তিন ছেলে ও দুই মেয়ে হয় তাঁদের। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কের কথা ঘুণাক্ষরেও যাতে কেউ জানতে না পারে তাই রাজপরিবার থেকে দূরে থাকার জন্য ক্যাথরিন ও ওয়েনের সম্পর্ক ও তাঁদের সন্তানদের কথা গোপনই থাকে। তবে বেশিদিন স্থায়ী হয় না সুসময়। ১৪৩৬ সালে মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে ক্যাথরিন অসুস্থ হয়ে পড়েন আর তাঁদের অবৈধ সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে চলে আসে। তবে ক্যাথরিন এই অবৈধ সম্পর্কের জন্য শাস্তি পাওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন আর টুডরকে গ্রেফতার করা হয়। তবে হেনরি ষষ্ঠ কিন্তু তাঁর অবৈধ ভাই বোনদের দূরে সরিয়ে রাখেননি, তাঁদেরকে কাছে টেনে নেন এবং দুই ভাই এডমন্ড ও জ্যাস্পারকে সসম্মানে রাজসভার সদস্য করেন।
অবৈধ সম্পর্কের জন্য কালিমালিপ্ত হওয়ার পরেও ক্যাথরিনের শ্রাদ্ধকাজ খুবই ধুমধাম করে করা হয়। ইংল্যান্ডের রানিকে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে ওল্ড লেডি চ্যাপেলে হেনরি পঞ্চমের পাশেই সমাহিত করা হয়েছিল। রানির সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বার করে তাতে মশলা ও জড়িবুটি ভরে কফিনবন্দি করা হয়। তাঁর নিষ্কৃত অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে জারে ভরে ভরে তাঁর সঙ্গেই সমাহিত করা হয় এবং একটি কাঠের পুতুল বানিয়ে সমাধিস্থানে রাখা হয়। মৃত্যুকালীন অবস্থায় রানির যেমন চেহারা হয়েছিল সেই একইভাবে বানানো কাঠের পুতুলটি আজও চ্যাপেলে বর্তমান। ক্যাথরিন অব ভ্যালোইসের গল্প এখানেই শেষ হতে পারত যদি না টুডর বা তাঁর সন্তানেরা ক্যাথরিনের জীবনে আসত।
হেনরি ষষ্ঠ ছিলেন তাঁর দাদু রাজা চার্লসের মতোন ‘পাগল’। হেনরি পঞ্চমের যোগ্য উত্তরসূরি তিনি কখনই হতে পারেননি। গোলাপের যুদ্ধ চলাকালীন হেনরি ষষ্ঠকে খুন করা হলে ইংল্যান্ড পুনরায় রাজাহীন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ইংল্যান্ডকে বাঁচাতে এডমন্ডের পুত্র হেনরি সপ্তম হিসাবে সিংহাসনে বসেন ও ভিত্তিস্থাপন করেন টুডর রাজবংশের। পরবর্তী দেড়শ বছর এই টুডররা ইংল্যান্ড শাসন করেছিল। ক্যাথরিন অব ভ্যালোইস ছিলেন সেই টুডর বংশের মা কিন্তু নিজের বংশ থেকেই পেয়েছিলেন চরম অপমান ও অযত্ন।
হেনরি ষষ্ঠ চেয়েছিলেন তাঁর মায়ের জন্য আরও উপযুক্ত স্মারক বা স্মৃতিসৌধ বানাতে কিন্তু সেই আশা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই হেনরির মৃত্যু ঘটে ও তাঁর ইচ্ছাকেই পূর্ণতা দিতে আসরে নামেন হেনরি সপ্তম। অনেকে বলেন হেনরি সপ্তম তাঁর অবৈধ জন্ম বৃত্তান্তকে মুছে ফেলতে তাঁর দিদার কফিনকে দূরে সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন ও পুরনো লেডি চ্যাপেলটি ভেঙে ফেলেন। খননকার্য চলার সময় রানির দেহকে বার করে আনা হয়। কিন্তু খোঁড়াখুঁড়ি চলার জন্য রানির কফিনটি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়, উপরের ডালাটি ভেঙে যায়। কিন্তু তা ঠিক করা তো দূরস্ত একপ্রকার খোলা অবস্থাতেই রানির মৃতদেহকে মাটির উপর ফেলে রাখা হয় দীর্ঘদিন।
স্মৃতিসৌধের কাজ চলাকালীনই মারা যান রাজা সপ্তম হেনরিও। এরপর সিংহাসনে আসেন রাজা অষ্টম হেনরি কিন্তু তিনি নিজের প্রমাতামহের কফিনকে সমাহিত করার কোনও উদ্যোগ নেন না ফলে ক্যাথরিনের উন্মুক্ত কফিন ধীরে ধীরে চলে যায় দর্শকদের গ্রাসে। রানির মৃতদেহ হয়ে ওঠে খেলনার সামগ্রী মাত্র। তৎকালীন রানির এহেন দশা কেউ কীভাবে উপেক্ষা করতে পেরেছিল তা সত্যিই অবাক করা! এইভাবে তিনশো বছর তিনি পৃথিবীর সামনে মজার পাত্র হয়ে পড়েছিলেন। পর্যটকরা এসে রীতিমতো ক্যাথরিনের দেহ নিয়ে টানাটানি শুরু করেন, তাঁর বুক ও মুখের উপর থেকে সেরেক্লথ (ভারী মোমের আস্তরণ দেওয়া কাপড়) ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বোঝা যায় যে প্রায় নগ্ন অবস্থাতেই সমাহিত করা হয়েছিল তাঁকে। হাড়ের সঙ্গে চামড়াও লেগেছিল খুবই আলতোভাবে। বলা হয় যে, অ্যাবে ট্যুর গাইডরা রানির মৃতদেহ দেখানো ও তাঁকে ধরতে দেওয়ার লোভে বেশি করে টাকা আদায় করতেন এবং তাঁর দেহ তিনশো বছর ধরে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় আকর্ষণ ছিল।
আরও পড়ুন- ডালে দোল খাওয়া বালিকাই আসলে কালী! কিংবদন্তি কথা বলে সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের মন্দিরে
এমনকী ক্যাথরিনের মৃতদেহকে চুম্বন করাও হয়ে উঠেছিল একটি ঐতিহ্যের মতো। বিখ্যাত ডায়েরিস্ট, স্যামুয়েল পেপসি অ্যাবে ভ্রমণ করে আসার পর বর্ণনা দেন যে তিনি রানির দেহকে চুম্বন করেছেন- “মঙ্গলবার ১৬৬৯-এ আমি অ্যাবেতে গিয়েছিলাম এবং সৌভাগ্যের সহিত ভ্যালোইসের রানি ক্যাথরিনের দেহটি দেখতে পেরেছিলাম। তাঁর শরীরের একটি অংশ আমার হাতে ছিল এবং আমি তাঁর ঠোঁটে চুম্বন করেছিলাম। আমার জন্মদিনে, ছত্রিশ বছর বয়সে আমি একজন রানীকে চুম্বন করেছি।”
এরপরে যতদিন গেছে রানির শরীরের সঙ্গে দুর্ব্যাবহার কমেনি বরং বেড়েছিল। ১৭৮৬ সালে রিচার্ড গফ লিখেছিলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ওয়েস্টমিনিস্টারের তরুণ স্কলাররা ক্যাথরিনের দেহকে নিয়ে ডাক্তারি খেলায় মেতে উঠেছিলেন। লেখক নিজে যখন তাঁর দেহ দেখতে যান তখন তা একটি সাদা মাংসপিণ্ড ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ১৭৮৮ সালে, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তৎকালীন বাকিংহামের মৃত কাউন্টেসকে সমাধি দেওয়ার জন্য ভিলিয়ার্স ভল্ট খোলা হলে ওই একই সময়ে ক্যাথরিনের দেহকেও সেই ভল্টে সমাধিস্থ করা হয়। বিগত তিনশো বছরের টানাহ্যাঁচড়ার পর রানি ক্যাথরিন হয়তো একটু শান্তি পেয়েছিলেন। পরের একশো বছর রানি ওই ভল্টেই সমাধিস্থ থাকেন ও তাঁর স্মৃতি বিবর্ণ হতে শুরু করে।
ভিলিয়ার্স ভল্টেই হয়তো রানির দেহ বাকি সময়ে সমাহিত থাকতে পারত কিন্তু বাধা এল এখানেও! তবে এইবার পাকাপাকিভাবে রানির দেহের একটা গতি হল। ১৮৭৭ সালে লর্ড পার্সি মারা গেলে তাঁর মৃতদেহ সমাধি দেওয়ার জন্য পারিবারিক সমাধি খোলা হয়। এই সমাধির পাশেই ছিল ভিলিয়ার্স ভল্ট, তৎকালীন রানি ভিক্টোরিয়ার অনুমতি নিয়ে ভিলিয়ার্স ভল্ট থেকে অনেক কষ্টে বের করে আনা হয় রানি ক্যাথরিনের কফিনকে। কিন্তু এতদিন বাদে তা বাইরের পরিবেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকঘণ্টার মধ্যেই কফিন ঝুরঝুরে বালিতে পরিণত হয়। আর ক্যাথরিনের দশা দেখেও মাথায় হাত পড়ে সকলের। একটি হাড়গোড়ও সঠিক অবস্থায় ছিল না, সব হাড়ই শোচনীয় অবস্থায় পাওয়া যায়। একটি দাঁতও রানির মুখে পাওয়া যায়নি। শুধু দাঁতই না, মৃতদেহের খুলির পেছনের অংশও ছিল বেপাত্তা। পাওয়া যায়নি মেরুদণ্ডের একাধিক হাড়ও। অনুমান করা হয়, পর্যটকরা রানিকে দেখতে এসে তাঁর এক একটি হাড়কে স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে নিয়ে গেছেন।
লর্ড পার্সির শেষকৃত্য সম্পূর্ণ হলে সূর্যাস্তের পর রানির দেহকে নিয়ে যাওয়া হয় হেনরি পঞ্চমের চ্যাপেলে এবং ইংরাজি ওক দিয়ে তৈরি কফিনে রানির দেহকে শোওয়ানো হয়। অনেক অসম্মান অবহেলা ও অযত্নের পর রানি ক্যাথরিন অবশেষে চিরতরভাবে সমাধিস্থ হন। পরে এক প্রত্যক্ষদর্শী লিখেছিলেন, “দিনের আলো তখন ম্লান অয়ে গেছিল, আমরা অ্যাবেতে একা ছিলাম। দু’জন কর্মী রানির কফিনকে নিয়ে উত্তর দিকে চেন্ট্রি চ্যাপেলের দিকে নিয়ে গেল। এ যেন এক অন্য দৃশ্য। মিঃ জর্জ স্কার্ফ ও আমি নিঃশব্দে তাঁদের পেছন পেছন গেলাম যেন মনে হচ্ছিল আমরা এক নিঃশব্দ মিছিলে চলেছি। আমি তাঁকে মন্তব্য করলাম ‘আমরা রানির তৃতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিচ্ছি’।” সেদিনের সেই সূর্যাস্তের সঙ্গে রানির সংগ্রামও শেষ হয়েছিল।