বিজেপির সঙ্গে কতদিন থাকবেন নীতীশ? ভবিষ্যদ্বাণী প্রশান্ত কিশোরের...

Prashant Kishor on Nitish Kumar : পিকে নির্দিষ্ট করে বলছেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে এই জোট ভেঙে যাবে।

২০২৪ ভারতের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে এক বড় বছর। বিজেপি রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা করে সবচেয়ে বড় পাশার দানটি দিয়ে ফেলেছে। আর বিজেপি বিরোধীরা এখনও টলমল! সারা দেশে 'হিন্দুত্ব ও বিজেপি’- ন্যারেটিভ ক্ষমতা তৈরির পথে এগোচ্ছে আর ঠিক সেই চরম মুহূর্তে বিরোধী জোট ভাঙলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। জেডিইউ নেতা ফের বিজেপির হাত ধরেছেন, ইন্ডিয়া জোট ত্যাগ করেছেন। তবে বিজেপি আর জেডিইউয়ের এই সখ্য বেশিদিন নাকি টিকবে না। অন্তত এমনটাই দাবি করেছেন রাজনৈতিক কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোর। পিকে বলছেন, বিহারে গঠিত জনতা দল (ইউনাইটেড)-বিজেপি জোট বেশি দিন টিকবে না।

রবিবার নীতীশ কুমার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। রাজ্যে নতুন করে সরকার গঠনের জন্য বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটেই ফের যোগদান করেছেন। নীতীশের এই দলবদলের ঘটনা তো নতুন নয়। এই নিয়ে আটবার দলত্যাগী হয়েছেন তিনি। ক্ষমতায় থাকতে এমনটা তিনি যে করবেনই তা বিহার থেকে শুরু করে সারা দেশই জানে। কিন্তু পিকে কেন মনে করছেন বিজেপির হাতে হাত ধরে বেশিদিন চলতে পারবে না জেডিইউ?

প্রশান্ত কিশোর বলছেন, বিহারে এই যে বিজেপি-জেডিইউ নবগঠিত জোট তা ২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্তও স্থায়ী হবে না। অর্থাৎ জেডি(ইউ)-বিজেপি সরকারের আয়ুষ্কাল এক বছর বা তারও কম হবে। তাহলে কি কেবল ২০২৪-কে মাথায় রেখেই নীতীশ এমন করলেন?

আরও পড়ুন- আবার প্রতারণা নীতীশের! যেভাবে এগোয় পল্টুরামের পাল্টির কিসসা

পিকের ব্যাখ্যা, বর্তমানে যে জোটটি তৈরি হলো, নীতীশ কুমার এনডিএ-র মুখ হলেন এবং বিজেপির সমর্থন পেলেন তা বিহার বিধানসভা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্তও টিকবে না, "আমি একথা লিখে দিতে পারি,” কিশোর বলেছিলেন। পিকে আরও নির্দিষ্ট করে বলছেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে এই জোট ভেঙে যাবে।

নীতীশ এবার সত্যিই রেকর্ড গড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে ফের নবমবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নীতীশ কুমার। রবিবার বিকেলে তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। এবার তিনি সঙ্গে পেয়েছেন দুই উপমুখ্যমন্ত্রী - সম্রাট চৌধুরী এবং বিজয় সিনহাকে। এই তিনজন ছাড়া আরও ছয়জন মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীও শপথ নেন।

২০২২ সালেও নীতীশ কুমার এনডিএ জোট ছেড়েছিলে। প্রশান্ত কিশোর সেবার বলেছিলেন, তিনি আশাবাদী যে বিহারে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। নীতীশ সেবার বলেছিলেন, নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছেন। বিহারের মানুষের চাওয়া-পাওয়া মেটাবেন তিনি। অথচ সরকারটাই শক্তসমর্থভাবে টিকে থাকতে পারল না। ২০১৩-১৪ সাল থেকে এই নিয়ে বিহারে সরকার গঠনের ষষ্ঠ প্রচেষ্টা ছিল এটি। পিকে বলছেন, কারও রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রত্যাশা পূরণ না হলেই এমন বদল হয়।

গতবারও একই কথা বলেছিলেন পিকে। প্রশান্ত বলেছিলেন, মহাগঠবন্ধন জোট অর্থাৎ লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং কংগ্রেস নিয়ে গঠিত সেই জোট ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত টিকবে না। ২০২৫ বিধানসভা নিয়েও একই কথা বলছেন পিকে। নীতীশ কুমার এবার কেন দল বদলালেন তার কারণ হিসেবে বলেছেন, জোটে কেউ কাজ করছে না। ২০২৪ সালের নীতীশের মূল সমস্যা হয় আরজেডির সঙ্গে। লালুর কন্যা রোহিণী আচার্য নীতীশের 'পারিবারিক রাজনীতি' মন্তব্যের জন্য নিন্দা করেন। বলেন, হাওয়া যেদিকে বয় নীতীশের আদর্শ সেদিকেই বেঁকে যায়। সেই থেকেই শুরু হয় তিক্ততা। সূত্র বলছে, ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, বিশেষত কংগ্রেসের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগের সঙ্কটই নীতীশের এই পদক্ষেপের মূল কারণ। আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করতে ঢিলেমি এবং বিরোধী জোটের নেতা হিসাবে নীতীশ কুমারকে তুলে না ধরার জন্যই বিজেপির হাত ধরলেন পল্টুরাম। কিন্তু কতদিনের জন্য? পিকে কি সত্যিই ভবিষ্যতদ্রষ্টা?

More Articles