কাতারের ময়দানে সুবোধবাবুর ত্রিশ হাজার ট্রান্সফরমার, বিশ্বকাপের মঞ্চে আলো জ্বালাচ্ছে বাংলা

Fifa world cup 2022 : অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, এবছর বিশ্বকাপের ৩০,০০০ ট্রান্সফারমারের নায়ক একজন বাঙালিই

নিত্যদিন এক ঘটনা। ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে চোখ থাকছে টিভির পর্দায়। দেশ, রাজনীতি, কূটনীতি, নির্বাচন এসব কিছুকে মাসখানেকের ছুটিতে পাঠিয়েছে বাঙালি। মন মজেছে বিশ্বকাপে। উত্তেজনা, ভয় অথবা উচ্ছ্বাস, এসবের মধ্যেই একটার পর একটা নব্বই মিনিট কেটে চলেছে দিব্যি।

ঝকঝকে স্টেডিয়াম, হাজার হাজার ওয়াটের আলো, স্টেডিয়ামের আশেপাশে বাহারি আলোকসজ্জা, সবই চাক্ষুস করছে গোটা বিশ্বের ফুটবল প্রেমীরা। কিন্তু জানেন কি, কাতারের এই নিখুঁত আলোকসজ্জার নেপথ্যের গল্পটা? অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, এবছর বিশ্বকাপের ৩০,০০০ ট্রান্সফারমারের নায়ক একজন বাঙালিই।

আরও পড়ুন :ব্যাড বয় না কি রাজপুত্র? মারাদোনাকে ছাড়া আজীবন ফিকে বিশ্বকাপের ময়দান!

বয়স ৬৬ ছুঁইছুঁই, একটা পা অকেজো, হাঁটেন ওয়াকার নিয়ে। অথচ ওড়বার স্বপ্ন আকাশছোঁয়া। শুধু স্বপ্নই বা আর বলি কি করে, সত্যিই তো হলোই। সশরীরে না হোক, কাজই তাঁকে পোঁছে দিল সুদূর কাতারে।

হুগলি জেলার উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সুবোধ কুমার বন্দোপাধ্যায়। ছোটো থেকেই তাঁর ফুটবলের প্রতি ঝোঁক। একসময় নিয়মিত যেতেন মোহনবাগান মাঠে। এবছর তাঁকে হাতছানি দিচ্ছিলো কাতারের বিশ্বকাপ, যাওয়া হবে না জেনেই প্রস্তুতি সার ছিলেন অনেকদিন আগে থেকেই। শুরুটা হয় ২০১৪ সালে। তারপর টানা চার বছর ধরে ১২০ জন কর্মীর নিরলস প্রচেষ্টার ফল এই কারেন্ট ৩০,০০০ ট্রান্সফর্মার।

দক্ষিণ কলকাতার ঠাকুরপুকুর এলাকায় 'বি এম সি ইলেকট্রোপ্লাস্ট' নামে সংস্থার কর্ণধার তিনি নিজেই। এখান থেকেই মালয়েশিয়ার টামকো সুইচগিয়ার সংস্থার মাধ্যমে কাতারে পৌঁছয় ট্রান্সফরমারগুলি।নিজের কারখানায় তৈরি এই বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিশ্বকাপ ফুটবলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বজায় রাখবার জন্য যে ভূমিকা পালন করছে তা নিয়ে গর্বিত সুবোধবাবু।

আরও পড়ুন : বারবার বাজিমাত! লেভ ইয়াসিন থেকে কান, ফিরে দেখা বিশ্বকাপের গোলরক্ষকদের

১৯৮০ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে কারখানা তৈরি করেন তিনি। এখন এই কারখানায় শতাধিক কর্মী। আমরা সাধারণত যে ট্রান্সফারমার দেখি, কাতারে পাঠানো ট্রান্সফরমার তার থেকে আলাদা, এগুলি সুইচ গিয়ার বোর্ডের সঙ্গে লাগানো থাকে। মূলত কোনো কারণে শর্ট সার্কিট হলে, এই ট্রান্সফরমার থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। শুধু তাই নয় বিদ্যুৎ খরচের পরিমানও করা যায় এর সাহায্যে।

কাতারের আল বায়েত স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার যে স্বপ্ন সুবোধবাবু দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন আজ পড়ি দিয়েছে অন্যরকম হওয়ায়। উত্তরপাড়ার বাড়ি, কলকাতার কারখানা ছড়িয়ে আজ সে সুদূরে দিশারি। বাঙালি তো বটেই এ ঘটনায় আজ গৌরবান্বিত সমগ্র ভারতবাসী।

More Articles