ক্ষমা চাইতে হয়েছিল খোদ সুচিত্রা সেনকে! স্বর্ণযুগের অবিশ্বাস্য যে ঘটনা ছিল আড়ালেই
Suchitra Sen: তরুণ মজুমদারেরও মেজাজটা গেল চড়ে। সুচিত্রাকে বললেন, "ওঁর সঙ্গে কাজ করা যায় কিনা তা পরের কথা। কিন্তু যা ব্যবহার করলেন, আপনার মতো আর্টিস্টের সঙ্গেও কাজ করা যায় না।"
অনুরাগ বসু একটি সাক্ষাৎকারে একবার বলেছিলেন, ক্যামেরার ওপারের অভিনয়ের আঁচ এপারেও লাগে বৈকি। অনেক অভিনেতাই সীমারেখাটা হয় বোঝেন না, অথবা ইচ্ছে করে এড়িয়ে যান। তখন কলাকুশলীদের সামনে, পরিচালকের সামনেও একটা বিশেষ ভাবমূর্তির অভিনয় করে যান তাঁরা। এতে আদতে সিনেমারই ক্ষতি। পরিচালক এক মুহূর্তেই বুঝে যান কে সৎ, কে অভিনয় করছেন। কিন্তু কাজটা অভিনেতা সঠিক ভাবে বুঝলেন কিনা, তাঁর সীমাবদ্ধতা কতটুকু, কীভাবে তাঁকে দিয়ে অভিনয় করানো যাবে—এ সম্বন্ধে সঠিক ধারণা করা মুশকিল হয়। তখন কাকে দিয়ে কীভাবে কতটা কাজ করানো যাবে তার আন্দাজটাও নড়বড়ে হয়ে যায়। অনুরাগ বসুর এই নিয়ে খেদ ছিল, আছে, থাকবেও। কারণ বর্তমানে গ্ল্যামারের পর্দায় আলো দেওয়ার হাজারটা মাধ্যম, যাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিল্পীদেরও চোখ ধাঁধিয়ে যায়। কিন্তু আগে গ্ল্যামারের এতখানি জোর ছিল না। একেবারেই যে ছিল না, তা নয়। সিনেমা ব্যাপারটাই তো অনুকরণ। কাজেই প্লেটোর সেই অভিযোগ খানিকটা এক্ষেত্রটিতেও বর্তায় বৈকি! এখানে সংলাপ মেকি, দৃশ্যায়ন মেকি, পারিপার্শ্বিক মেকি, চরিত্ররা মেকি। কাজেই খানিকটা ওপরচালাকি সিনেমার রক্তে মিশে গিয়েছে। তবে বাংলা সিনেমার গোড়ার দিকে, আঞ্চলিক ছবির লোকজনের মধ্যে তা ছাড়িয়েও একটা সৎ আত্মীয়তার জায়গা ছিল। এমনকি সুচিত্রা সেনের মতো শিল্পী একবার ক্ষমা চেয়েছিলেন অসিতবরণের কাছে। কেন? আজ সেই নিয়ে আড্ডা দেওয়া যাক।
উত্তম-সুচিত্রার ব্যক্তিগত সাহায্যেই যাত্রিকের তিন মাস্কেটিয়ার্স—তরুণ মজুমদার, দিলীপ মুখার্জি ও শচীন মুখার্জির পথচলা শুরু। পরিচালকের ভূমিকায় প্রথম ছবি করলেন 'চাওয়া পাওয়া', দ্বিতীয় ছবি 'স্মৃতিটুকু থাক'-এর শুটিং তখন চলছে। সেদিন সকাল থেকেই একটা বিশেষ দৃশ্যের রিহার্সাল চলছে। সুচিত্রা এবং অসিত বরণকে নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না, থাকার কথাও নয়, দু'জনেই নামকরা শিল্পী। সমস্যাটা হল একটা বাচ্চাকে নিয়ে। এক বছর বয়সের পুচকিটাকে কোলে নিয়ে সুচিত্রার অভিনয়। প্রতিসংলাপে কালোদা (অসিতবরণ)। কিন্তু রিহার্সালের সময়েই মোটামুটি বোঝা গেল, ব্যাপারটা যতটা সহজ ভাবা হয়েছিল, মোটেও তা নয়। পুচকিটা চারদিকে এত আলো, লোকজন দেখে ভয় পেয়েছে। তার ওপর সুচিত্রাকে বলা হয়েছে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে সংলাপ বলতে হবে। ভিতরে দ্বৈরথ চলছে, যন্ত্রণায় ছটফট করছেন নায়িকা। আবেগে চোখের কোল ভিজে উঠছে। কিন্তু ওইটুকুই। সে জল যেন গড়িয়ে না পড়ে। চোখে জল উপচে পড়লেই টেক বাতিল করতে হবে। শুনে সুচিত্রা একটা অনুরোধ করলেন। মনিটরগুলোতে যদি ওপর ওপর অভিনয়টা করেন, যাতে সংলাপটা ঠিকঠাক হচ্ছে নাকি বোঝা যায়, আর ফাইনাল টেকে আবেগের সঙ্গে অভিনয়টা করেন, তাহলে পরিচালকের কি কোনও অসুবিধা আছে? সিনেমার ভাষায় আবেগহীন এই মনিটরগুলোকে বলে ড্রাই মনিটর। রাজি হলেন পরিচালক।
যথারীতি এক দু'বার রিহার্সালেই বোঝা গেল নির্ভুল সংলাপ, যথাযথ টাইমিং। প্রতিসংলাপেও চমৎকার অসিতবরণ। অতএব আসল শট নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হল। চলমান ক্রেনশট নেওয়া হবে। রিহার্সালে বাচ্চাটিকে রাখেননি পরিচালক। একেবারে ফাইনাল শটে ওকে সুচিত্রার কোলে দেবেন পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এতেই গোল বাঁধল। 'অ্যাকশন' বলার সঙ্গে সঙ্গে পুচকিটা সোজা ক্যামেরার দিকে তাকাল। ব্যাস। শট বাতিল। একে তো শটটা খুব একটা সহজ শট নয়। প্রচণ্ড মনযোগ দাবি করে, ইনভলভমেন্ট দাবি করে। তাই বারবার করা যে কতটা কষ্টসাধ্য, তা যাঁরা অভিনয় করেন তাঁরাই জানেন। পরের টেকের সময় ঠিক হল, আর শব্দ নয়, হাতের ইশারায় 'অ্যাকশন'-টা বুঝিয়ে দেওয়া হবে শিল্পীদের। বুদ্ধিটা কাজে লেগে গেল। চমৎকার শট এগোচ্ছে। সুচিত্রার চোখ চিকচিক করে উঠেছে। একদম সেই শেষপ্রান্তে এসে পুচকিটা এমন ছটফট করে উঠল আবার শট বাতিল করতে হল।
কী আর করা! ওইটুকু বাচ্চার অত আলো, লোকজন, অচেনা কোল…আলোর বৃত্তের বাইরে বসে থাকা মাকে দেখতে না পেয়ে ছটফট করে ওঠাই স্বাভাবিক। আবার টেক। এবার মাঝপথেই কেঁদে উঠল পুচকিটা। 'কাট কাট'। সেই শুরু। শট আর পাওয়া যায় না। কখনও বাচ্চাটা অস্থির হয়ে উঠছে। কখনও ক্যামেরা নড়ে যাচ্ছে। সাত-আট-নয়… একের পর এক বেড়েই চলেছে বাতিল টেকের সংখ্যা। সুচিত্রা এতে বিন্দুমাত্র অভ্যস্ত নন। বোঝাই যাচ্ছে প্রচণ্ড বিরক্ত হচ্ছেন। কিন্তু কাকে বলবেন, কীই বা বলবেন! কারোর দোষে তো আর টেক বাতিল হচ্ছে না। বারবার চোখে জল আনা, আবেগতাড়িত হয়ে সংলাপ মানুষটাকে ক্লান্ত ক্লিষ্ট করছে। যত ক্লান্তি আসে, তত বিরক্তিও বাড়ে। পনেরো-ষোলাখানা টেক বাতিল হল। খানিক বিরতি। বাচ্চাটাকে একটু দুধ খাওয়ানো হল। ওর মা কী করবেন বুঝতে পারছেন না। দিশেহারা হয়ে সামান্য ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিতে বললেন। যদি টেকের সুবিধা হয়। ওইটুকু বাচ্চা! সেটের কেউ রাজি হলেন না। আজ হলে কী হত বলা যায় না।
কিন্তু যতই ক্লান্তি আসুক, যতই বিরক্তি জমুক, কাজ চালিয়ে যেতেই হবে। ফিল্ম তো আর কারও জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে না। ফের আলো জ্বলল। প্রসাধনের পরত পড়ল নতুন। আবার টেক। দেখা গেল দুধ খেয়ে পুচকিটা শান্ত হয়ে গিয়েছে। প্রায় সাড়ে তিনশো ফিটের শট। দারুণ হচ্ছে। কোনও ঝামেলা নেই। এইবার ঠিক ঠাক শট আসবে। এই হল বলে। সবাই অধীর আগ্রহে। একদম শেষ মাথায় এসে পুচকিটা এমনভাবে নড়ে উঠল, কোলে তাকে সামলাতে সামলাতে সুচিত্রা সংলাপ একটু অন্যভাবে বলে ফেললেন, স্ক্রিপ্টের বাইরে। মানেটা মোটামুটি একই। কিন্তু প্রতি সংলাপেও এসব ক্ষেত্রে ইম্প্রোভাইজেশনের দরকার পড়ে। নইলে তাল কেটে যায়। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে অনেক সময়েই বিপরীতের শিল্পী ম্যানেজ করে নেন। কিন্তু অসিতবরণ দুর্ভাগ্যবশত সেই সময়ে সেটা পারলেন না। স্ক্রিপ্টের সংলাপই বলে ফেললেন। তাল কেটে গেল গোটা দৃশ্যটার। এতে অসিতবরণের একেবারেই কোনও দোষ ছিল না। হঠাৎ করে বদলে দেওয়া সংলাপের প্রতিসংলাপ সবসময় যথাযথ দিতে পারবেন শিল্পী— এমন কোনও কথা নেই। বরং চিত্রনাট্য অনুযায়ীই তিনি সংলাপ বলেছেন। কিন্তু এইবারে সুচিত্রা আর নিতে পারলেন না। তাঁর মেজাজের কথা মোটামুটি সবাইই জানেন। মেজাজ হারিয়ে দুম করে বাচ্চাটিকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন অভিনেত্রী। তারপর পরিচালকের সামনে গিয়ে প্রচণ্ড উদ্ধতভাবে বললেন, "এমন আর্টিস্টের সঙ্গে কাজ করা যায়? অসম্ভব!" বিরক্তি জমে ছিল অন্য ব্যাপারে, কিন্তু তার কোপটা পড়ল গিয়ে অসিতবরণের ওপর।
আরও পড়ুন- বাথরুমে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল উত্তমকুমারকে! কী ঘটেছিল সেদিন
তখনও আলো নেভেনি। সেটের সবার সামনে অমন একটা কথা শুনে অসিতবরণের মুখটা কালো হয়ে গেল। বহু পুরোনো শিল্পী। বেতারের তবলচি থেকে রঙিন জগতে নিজের জায়গা করেছেন সম্পূর্ণ নিজের পরিশ্রমে, যোগ্যতায়। কোনও দিন কোনও জুনিয়রের কাছ থেকে এমন কথা শুনতে হবে বোধহয় তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। তাও বিনা দোষে। ব্যাপারটা দেখে তরুণ মজুমদারেরও মেজাজটা গেল চড়ে। বললেন, "ওঁর সঙ্গে কাজ করা যায় কিনা তা পরের কথা। কিন্তু যা ব্যবহার করলেন, আপনার মতো আর্টিস্টের সঙ্গেও কাজ করা যায় না।"
সেটে যেন বজ্রাঘাত হল। আজকালকার সিরিয়াল হলে বার পাঁচেক সবার মুখের উপরে ক্যামেরা ফোকাস হত। কিন্তু বাস্তব তো আর ক্যামেরার বয়ান মেনে চলে না, শুধু সুচিত্রার চোখ দপ করে জ্বলে উঠল। কোনও কথা না বলে গটগট করে বেরিয়ে গেলেন ফ্লোর ছেড়ে। সবাই হতভম্ব। সেটের নিস্তব্ধতাটা অস্বাভাবিক ভারি হয়ে উঠেছে। ঠিক সে সময় বাইরে থেকে লাঞ্চ ব্রেকের ঘণ্টা। তাতেও খুব একটা ঘোর কাটে না। একটিও কথা না বলে একে একে বেরিয়ে এলেন সবাই। ফ্লোরে তরুণ মজুমদার একা। প্রবীণ চিফ ইলেকট্রিশিয়ান প্রভাস ভট্টাচার্য বড় বড় আলো গুলো নিভিয়ে দিচ্ছেন। সেট অন্ধকার হয়ে আসছে। ভবিষ্যৎ! মাথার ওপরের কম পাওয়ারের আলোটা জ্বেলে দিয়ে গেলেন ভদ্রলোক। একা একটি কাঠের কেদারায় পরিচালক বিধ্বস্ত। ভিতরে প্রবল দ্বন্দ্ব। কাজটা কি ঠিক হল? ভুল তো কিছু বলেননি, তবুও! এই সবে তাঁদের দ্বিতীয় ছবি। আর সুচিত্রা তখন খ্যাতির শীর্ষে। এর মাঝে দিলীপ মুখার্জি একবার এলেন।
—কাজটা বেচাল হয়ে গেল। ম্যাডাম এখনও মেকআপ রুমে। গুম হয়ে বসে। যান না, একটু মিটমাট করে নিন না।
—কী মিটমাট?
—তা কী করে বলব? এমন কিছু করা যাতে শুটিংটা অন্তত চালু থাকে। বলা তো যায় না, এমন 'মুডি' আর্টিস্ট, যদি বলে বসেন, "এ ছবি আর আমি করবই না"?
ব্যাপারটা তরুণবাবুকেও ভাবাচ্ছিল। তাঁর একার তো সিনেমা নয়। এতগুলো মানুষ জড়িয়ে রয়েছেন। প্রযোজকদের এতগুলো টাকা! দিলীপ মুখার্জিকে ফোন করে প্রযোজকদের ডাকতে বললেন তরুণবাবু। শচীন মুখার্জিকেও ডাকতে বললেন। তাঁর কিছু কথা বলার আছে। সবার সামনেই বলবেন। দিলীপ বাবু বেরিয়ে গেলেন টেলিফোন করতে। সেট শুনশান। আবার পরিচালক একা। এইবার সেই শুনশান সেটের অন্ধকার প্রান্ত থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে এল একটি ছায়ামূর্তি। সেই প্রভাস ভট্টাচার্য। এতক্ষণ মিশে ছিলেন বিশাল মেইন সুইচ বোর্ডের পিছনের দিকটায়। স্নেহে খেতে ডাকলেন। গেলেন না পরিচালক। ধীরে ধীরে সেই ছায়ামূর্তিও বেরিয়ে গেল। এই সময় ক্যামেরাম্যান অনিল গুপ্ত এলেন। জ্যোতি লাহাকে পাকড়াও করে এনেছেন। অনিল বাবু সুচিত্রার প্রিয়পাত্র। কাছে এসে বললেন,
—যাইবেন নাকি আমার লগে?
—কোথায়?
—'মেকআপ' রুমে। আমি এতক্ষণ ম্যাডামরে সব বুঝাইয়া কইতেছিলাম। আপনে যা কইছেন সেইটা হইল পিওর 'স্লিপ অফ টাং'। আপনে শুধু একবার গিয়া কন "যা কইছি সেইটা আমার ভুল হইয়া গেছে। আই অ্যাম সরি।" তাইলেই বোধ হয়…
আরও পড়ুন-স্টিয়ারিং বুকে লেগে স্পট ডেথ— সিনেমায় আর ফেরা হয়নি ছবি বিশ্বাসের
শেষ করতে দিলেন না পরিচালক। বললেন, "আমি ছবিটা ছেড়ে দিচ্ছি।" চমকে উঠলেন বাকি দু'জনেই। কিছুতেই রাজি করানো গেল না পরিচালককে। তিনি সরে গেলেও বন্ধুরা কাজ ঠিক চালিয়ে নেবে। শুধু শুধু আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবেন প্রযোজকরা। হতাশ হয়ে ওঁরা চলে গেলেন। ফের ছায়ামূর্তির প্রবেশ। জোর করে এক কাপ চা আর কটা বিস্কুট দিয়ে গেলেন। তাই খাচ্ছেন পরিচালক, এমন সময় একটা আওয়াজ শোনা গেল। অনেকে যেন এদিকেই আসছেন। ফ্লোরের চওড়া গেটের ওপারে রোদ। ভেতরে আবছায়া। সেই আবছায়া গায়ে মেখে কতগুলি ছায়ামূর্তি এদিকেই এগিয়ে এল। এতক্ষণে সামনের জনকে চিনলেন পরিচালক। সুচিত্রা। নিশ্চয়ই ক'টা কড়া কথা শুনতে হবে। দাঁড়ালেন পরিচালক। তেমন পরিস্থিতি হলে আগেই ছবিটা ছেড়ে দিচ্ছেন বলে দেবেন। সুচিত্রা গটগট করে এগিয়ে এসে একেবারে পরিচালকের মুখের সামনে দাঁড়ালেন। তারপর…
তারপর যেটা ঘটল, তার জন্য গোটা সেটের কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। পরিচালকের হাত ধরে সুচিত্রা বললেন, "প্লিজ একবার কালোদাকে ডাকুন। আমি সবার সামনে ক্ষমা চেয়ে নেব।" আবার সেট নিস্তব্ধ। কে কী বলবেন! 'মিসেস সেন' তখন 'মহানায়িকা'। তাঁর মেজাজকে সমঝে চলেন বড় বড় প্রযোজকেরাও। তিনি এ কথা বলছেন! কালোদাকে ডাকা হল। সুচিত্রা ওঁর হাত ধরে ক্ষমা চাইতেই একেবারে বাচ্চার মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন অসিতবরণ। শুধু তাই নয়, এই ঘটনার পর থেকে পরিচালকের ছবিতে কাজের সময় বেশিরভাগ দুরূহ শট দিয়েই তাঁর মতামত চাইতেন সুচিত্রা। গড়ে উঠেছিল এক অন্য রকম সম্পর্কও।
এই পার্থক্য। আজকের গ্ল্যামারের সঙ্গে সেকালের খ্যাতির। তখন জগত অনেকখানি মধুর ছিল, এখন খারাপ হয়ে গিয়েছে— এমন ভাবনা আজগুবি। কিন্তু তখন কাজের সম্পর্কেও সততা ছিল। আন্তরিকতা ছিল। ছিল ভুল করলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার সৎ সাহস। আজকের ছবির জগতে মেকি ব্যাপারটাই বড্ড বেশি। আজকের দিনে ওইরকম গ্ল্যামারাস কোনও নায়িকা সেই অনুতাপের আন্দাজটুকুও করতে পারবেন না। সেই শিল্পীর সঙ্গে কাজ করাই বন্ধ করে দেবেন। বরং যেখানে গ্ল্যামার নেই, বা যাঁরা চাকচিক্যকে নিজের হাতে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন, এমন মানুষদের মধ্যে সততা রয়েছে বৈকি! সেদিন সুচিত্রার ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল না। ছবি করুন আর নাই করুন— কারও কিছু বলার ছিল না। কেবল এক নব্য পরিচালকের মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া কয়েকটি কথা তাঁকে তাড়া করে ফিরেছে এতখানি, অনুতাপের জ্বালায় সেটের সবার সামনে নির্দোষ সহকর্মীর কাছে ক্ষমা চাইতে তাঁর বাধেনি। বরং মুক্তি। আদতে অনুতাপের ভারের মতো ওজন নেই। কোনও দিন ছিল না। কারণ অন্যকে ক্ষমা করা সহজ, আয়নার দাগ সম্পূর্ণ মোছা যায় না কোনওদিনই— যদি বিন্দুমাত্র সংবেদ থেকে থাকে!
তথ্যঋণ-
সিনেমা পাড়া দিয়ে, (দু'খণ্ড)