হাড়ের ব্যথা থেকে ডায়াবেটিস, নিমেষে সারাবে, আজই খাদ্যতালিকায় যোগ করুন সস্তার এই শস্য

রাগির মতো প্রাচীন শস্য খাদ্য তালিকায় যোগ করে একাধিক রোগকে কাবু করুন। এই শস্যের গুণাগুণ হার মানাবে আটা, ময়দাকে। তাই সুস্থ থাকতে আজ থেকেই রাগি যোগ করতে পারেন খাবারে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই একাধিক রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে শুর করে। হাড়ের ব্যথা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, ডায়াবেটিসের মতো রোগ আজ ঘরে ঘরে। একটু বয়স বাড়লেই ওষুধ খেতে খেতে জীবন জেরবার। এমন অবস্থায় শরীর সুস্থ রাখতে খাদ্যাভ্যাসে বদল এবং শরীরচর্চা ছাড়া কোনও বিকল্প উপায় নেই। সঠিক খাবার খেলেই ডায়াবেটিস বা হৃদযন্ত্রর সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই রাগির মতো প্রাচীন শস্য খাদ্য তালিকায় যোগ করে একাধিক রোগকে কাবু করুন। এই শস্যের গুণাগুণ হার মানাবে আটা, ময়দাকে। তাই সুস্থ থাকতে আজ থেকেই রাগি যোগ করতে পারেন খাবারে।

রাগির গুণাগুণ
লালচে বাদামি রঙের দেখতে রাগি ময়দা প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালশিয়াম এবং আয়রনে পরিপূর্ণ। এই শস্যের সবচেয়ে উপকারী দিক হলো এটি গ্লুটেন-মুক্ত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গ্লুটেন ওজন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। আবার রাগিতে উপস্থিত ফাইবারও ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতেও সাহায্য করে এই শস্য। পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। রাগি কোলেস্টরল এবং সোডিয়ামমুক্ত হওয়ায় যেসব ব্যক্তি হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্য বিশেষ উপকারী। দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ করতে এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য রাগি অত্যন্ত জরুরি।

রাগি যে যে রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে
হাড়ের সমস্যা: দুধ ব্যতীত ক্যালশিয়ামের সেরা উৎস হলো রাগি। জাতীয় পুষ্টি সংস্থার মতে, ১০০ গ্রাম রাগিতে প্রায় ৩৪৫ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম উপস্থিত থাকে। ফলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে, হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমাতে, বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে রাগি। 

আরও পড়ুন: রান্না থেকে বিয়ে, সর্বত্র অপরিহার্য ‘গোল্ডেন স্পাইস’! হলুদের ইতিহাস জানলে চমকে উঠতে হয়

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস রুখতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। আর তাই খাদ্যগ্রহণের সময় অতিরিক্ত সচেতন থাকা জরুরি। রাগিতে উপস্থিত ফাইবারের কারণে রক্তে শর্করা শোষণের হার কমে যায়। ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস প্রতিরোধে রাগির বিকল্প নেই। পুষ্টিবিদরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে প্রায়শই ময়দা বা আটার পরিবর্তে রাগির রুটি খাওয়ার পরামর্শ দেন।

হৃদযন্ত্রের সমস্যা: সোডিয়াম-মুক্ত রাগি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাবারে রাগির তৈরি খাবার খেলে হাতেনাতে নিজেই প্রমাণ পাবেন আপনি।

অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ: রক্তে আয়রনের মাত্রা কমে যাওয়াকেই চিকিৎসকেরা অ্যানিমিয়া বলে থাকেন।আমাদের দেশের বেশিরভাগ মহিলাই অ্যানিমিয়ার সমস্যায় ভোগেন। রাগিতে আয়রন উপস্থিত থাকার কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে আজই এই দানাশস্য খাওয়া শুরু করুন।

কীভাবে প্রতিদিনের ডায়েটে রাগি অন্তর্ভুক্ত করা যায়?
বাঙালিরা খুব বেশি রাগি না খেলেও ভারতের অন্যান্য প্রান্তের মানুষরা কিন্তু রাগির তৈরি রুটি, চিপস, খিচুড়ি ইত্যাদি নানা উপায়ে এই দানা শস্য গ্রহণ করেন। রাগির তৈরি যে পদগুলি সহজেই বানিয়ে ফেলা সম্ভব,

১. রাগির রুটি
রাগির রুটি তৈরির জন্য রাগির আটার সঙ্গে পছন্দমতো সবজি, যেমন পেঁয়াজ, গাজর, বিট ইত্যাদি যোগ করতে পারেন। মিশ্রণটিতে পরিমাণমতো নুন যোগ করে ভালোভাবে মেখে নিন ও রুটির মতো করে বেলে নিন। ভালোভাবে চাটুতে ভেজে নিয়ে দই বা সহযোগে প্রাতঃরাশ সেরে ফেলতে পারেন এই দিয়ে।

২. রাগি বরফি
একটি প্যানে ২ টেবিল ঘি গরম করে তাতে রাগি ময়দা যোগ করে ভালোভাবে অল্প আঁচে ৩ থেকে ৫ মিনিট ভেজে নিন। এরপর একটি কাপের অর্ধেকের বেশি গুড় দিয়ে আবার ৫ মিনিট ভাজুন। এরপরও তাতে সামান্য পরিমাণে বাদাম-গুঁড়ো, ২ কাপ দুধ এবং সামান্য এলাচগুঁড়ো দিয়ে মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। গ্যাস বন্ধ করে মিশ্রণকে ঠান্ডা হতে দিন। তারপর তা থেকে ছোট ছোট বরফি কেটে নিন।

৩. রাগি লাড্ডু
একটি প্যানে ২ টেবিল ঘি গরম করে তাতে দেড় কাপ রাগি ময়দা যোগ করে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করুন। ময়দার কাঁচাভাব না যাওয়া পর্যন্ত এটিকে নাড়তে থাকুন। এরপর একে কিছুটা ঠান্ডা করে তার মধ্যে তিন কাপ গুড় ও এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে নিন ভালোভাবে রান্না করে নিন। অল্প গরম থাকতে থাকতেই গোল গোল লাড্ডুর মতো বানিয়ে এয়ারটাইট কন্টেনারে রেখে দিন।

৪. রাগি প্যানকেক
দু'কাপ রাগি ময়দা, ২ কাপ গমের আটা, পরিমাণমতো লবণ, ২ চা চামচ বেকিং সোডা এবং গুড় একটি পাত্রে মিশিয়ে নিন। এরপর একটি পাত্র ভালোভাবে গরম করে তাতে ঘি বা তেল মাখিয়ে নিন। পাত্রে তৈরি করা ব্যাটার যোগ করে ভালোভাবে দু'পাশেই রান্না করে নিলেই তৈরি রাগি প্যানকেক। ম্যাপল সিরাপ, কলা-র মতো ফল সহযোগে গরম গরম খেয়ে নিন এই প্যানকেক।

৫. রাগি কেক
একটি পাত্রে এককাপ রাগি ময়দা, এককাপ সাদা ময়দা, কোকো পাউডার, চিনি এবং দেড় চামচ বেকিং সোডা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার তাতে দু'কাপ দুধ, এক চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স, গলানো মাখন যোগ করুন। আবার ভালোভাবে ঘেঁটে নিন মিশ্রণটি। এবার কেক তৈরির জন্য মিশ্রণটিকে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৩৫ মিনিট মাইক্রোওভেনে রান্না করে নিন। সময়মতো বের করে ঠান্ডা হলেই খেয়ে ফেলুন সুস্বাদু রাগি কেক।

 

More Articles