মেয়েদের শরীরে নিঃশব্দে হানা দিচ্ছে এই রোগ, উপসর্গ চিনে আজই সতর্ক হোন

ধীর গতিতে হলেও ক্রমশ থাবা বসাচ্ছে এই রোগ। মূলত ১৫ থেকে ৮৫ বছরের মহিলাদের মধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। পুরুষদের তুলনায় মহিলারা প্রায় নয় গুণ বেশি এই রোগে আক্রান্ত হন।  তবে যে কোনো সময়ে ও বয়সেই মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে রোগটি।

রোগের নাম ' সিস্টেমেটিক লুপাস ইরাথেমেটাস'(এসএলই)। ১৯৯৫ সালে ভারতে প্রথম এই রোগে আক্রান্ত রোগীর হদিশ মেলে। তারপর থেকে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের নানা জায়গায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী,এ যাবৎ ভারতে প্রায় ১৩৬৬ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বাড়বে বলেই ধারণা সংস্থার। পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন স্বয়ং এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দীর্ঘ ২৩ বছর চিকিৎসা চলেছে তাঁর। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই রোগের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা -

সিস্টেমেটিক লুপাস ইরাথেমেটাস বা এসএলই কী?

এসএলই হল এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী অটোইমিউনজনিত রোগ যা শরীরের ত্বক,রক্ত, কিডনি এমনকি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ কারণ অল্প দিনের চিকিৎসায় এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।এরজন্য দীর্ঘদিন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। অটোইমিউন কথাটির অর্থ এর ফলে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমাদের  ইমিউন সিস্টেম শরীরে প্রবেশকারী রোগজীবাণুকে ধ্বংস করার বদলে নিজের দেহেরই বিভিন্ন কোষ ও কলাকে আক্রমণ করে তা ধ্বংস করার চেষ্টা করে। ফলস্বরূপ আক্রান্ত অংশে ব্যাথা অনুভব হয় এবং ফুলে ওঠে। আক্রান্ত অংশের কাজ ব্যাহত হয় এই কারণে।

রোগের কারণ

অনেক জন্মসূত্রে এই রোগে আক্রান্ত হন। অর্থাৎ পরিবারের কোনো সদস্য সিস্টেমেটিক লুপাসে আক্রান্ত হলে পরবর্তী প্রজন্মের শিশুদের মধ্যেও এই রোগ সঞ্চারিত হতে পারে। তবে পারিবারিকভাবে রোগের ইতিহাস থাকলেই যে কেউ লুপাসে আক্রান্ত হবেন এমন নাও হতে পারে। চিকিৎসকদের অনেকেই একে জিনগত সূত্রে প্রাপ্ত হিসেবে মানতে নারাজ। কিন্তু তাঁরা মেনে নিয়েছেন এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে বেড়ে যায়। লুপাসকে অনেকেই সংক্রামক বলে ভাবেন,কিন্তু তা একেবারেই ঠিক নয়। আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ যৌনজীবনও বজায় রাখতে পারেন।

পড়তে পারেন-শরীরে নিঃশব্দে বাড়ছে ক্যানসার! এবার যন্ত্র জানান দেবে এক দিনেই

রোগের লক্ষণ

চিকিৎসকদের মতে প্রথম থেকেই লুপাসের উপসর্গ দেখেই সাবধান হোন। এক্ষেত্রে চিকিৎসা না করালে ক্রমেই গাঢ় হবে এই রোগ এবং নিত্যনতুন উপসর্গ দেখা দেবে শরীরে।তবে লুপাসের মূল উপসর্গগুলি হল -


• এই রোগের প্রধান লক্ষণ শরীরের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ও ফোলাভাব। খুব বেশিদিন তা স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
• ঘন ঘন দীর্ঘমেয়াদি জ্বর
• ক্ষুধামান্দ্য ও ক্রমশ ওজন হ্রাস
• শারিরীক অবসাদ ও হাত পা কামড়ানো
• হাতের আঙুল বা পায়ের আঙুলের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে যায়
• চুল পড়ে যাওয়া
• এক্ষেত্রে নাকের উপর এবং গালের দুপাশে প্রজাপতির পাখনার মত লাল ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ দেখা দেয়, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে 'বাটারফ্লাই র‍্যাশ' নামে পরিচিত ।
• শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়তে পারে।অনেকসময় দীর্ঘশ্বাস নিলে বুকের ব্যাথা বাড়তে পারে।
• খিঁচুনি
• সূর্যের আলো সংবেদনশীলতা

চিহ্নিতকরণের উপায়

এই অসুখের ক্ষেত্রে প্রাথমিকেভাবে ব্যক্তির মূত্রের রং রোগ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এসময় আক্রান্ত ব্যক্তির প্রস্রাবের রঙ লালচে হয়ে যায়, অনেক ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তও দেখা যায়।
তবে এই রোগ নির্ণয় করা খুব কঠিন। অনেক সময়ও রোগ চিহ্নিত করতে সময়ও প্রয়োজন হয় কারণ অন্য রোগের সাথে প্রায়ই এই রোগের লক্ষণগুলিকে এক করে ফেলা হয়। রোগে নির্ণয়ে সাহায্যকারী বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে -

• বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে উপস্থিত অনুচক্রিকা,শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ যাচাই করা হয়।
• ত্বকের বায়োপসি পরীক্ষা
• কিডনির বায়োপসি পরীক্ষা
• লিভারের কার্যক্ষমতা ও মাংসপেশির এনজাইমের পরিমাণ পরীক্ষা
• এছাড়া ইএসআর ( এরিথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশন রেট) এবং  সিরিএকটিভ প্রোটিনের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়। এগুলির পরিমাণ বাড়লে তা শরীরে ইনফেকশনকে নির্দেশ করে।

রোগের চিকিৎসা

লুপাসের স্থায়ী কোনো নিরাময় নেই, তাই এই রোগের  চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হল এর লক্ষণগুলোর প্রাবল্য কম করা বা রোধ করা এবং অঙ্গগুলিকে আরও ক্ষতিসাধন থেকে রক্ষা করা।এই রোগের চিকিৎসায় যেসব সমস্যাগুলি কম করা যায় সেগুলি হল:

• অস্থিসন্ধির ক্ষতি হ্রাস করা বা প্রতিরোধ করা।
• ব্যথা বা ফোলাভাব কমানো।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানো।
• হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা।

More Articles