রামমন্দির: যে বড় সত্য লুকোনো হলো

Ram Mandir truth : সরকার ভালো কাজ করলে সেই কাজ নিয়ে আমরা কথা বলতে পারছি না কেন? কেন রামভক্তিই আমাদের মূলধন হয়ে উঠছে? বাংলা কী ভাবছে?

দেশ জুড়ে রামরাজ্যের প্রচার করছে বিজেপি। ২০২৪-এর নির্বাচনের আগেই অযোধ্যায় রামমন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়ে গেল রামলালার। দর্শকের আসন আলো করে বসে থাকতে দেখা গেল দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের। মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে আবেগে কেঁদেই ফেললেন গোবিন্দ গিরি দেব। অন্যদিকে, দেশ জুড়ে 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান আর শব্দবাজির উন্মাদনায় ঢেকে দেওয়া হলো বেশ কিছু সত্য।

বিজেপির রামরাজ্যে রামমন্দির নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৮০০ কোটি টাকা। রামমন্দিরের নামে শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট চাঁদা তুলেছে ৩৫০০ কোটি টাকা। ১৪ জানুয়ারি থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত টানা ৭০ দিন রামোৎসব পালনের জন্য মোদি সরকার বরাদ্দ করেছে ১০০ কোটি টাকা।

অযোধ্যার রামমন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে গেলেন না চার শঙ্করাচার্য। অসম্পূর্ণ মন্দিরে বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন আচার্য রাজীব নারায়ণ শর্মাও। তাঁদের দাবি, নির্বাচনের জন্যই রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠায় এত তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে।

রামমন্দির আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ লালকৃষ্ণ আডবানি। অথচ রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে তাঁকেই আসতে বারণ করে ট্রাস্ট। এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় চম্পত রাইকে। এরপর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে জানানো হয় লালকৃষ্ণ আডবানি ও মুরলি মনোহর যোশিকে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে তারা। কিন্তু রামমন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন শেষ পর্যন্ত দেখা গেল না আডবানিকে। বলা হল, প্রবল ঠান্ডার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারছেন না তিনি।

আরও পড়ুন- রাম মন্দিরে দ্রৌপদী মুর্মু নেই, কঙ্গনা রানাওয়াত আছেন! কেন?

'দ্য ওয়্যার' এবং 'নিউজ লন্ড্রি' বলছে, অযোধ্যায় তিন প্রধান পথ 'রাম পথ', ‘রাম জন্মভূমি পথ' ও 'ভক্তি পথ' নির্মাণের জন্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে চার হাজারেরও বেশি দোকান ও ঘরবাড়ি। বিবিসির মতে, সংখ্যাটা ৩০০০-এর কাছাকাছি। অভিযোগ, যোগ্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি বেশিরভাগ মানুষকেই। বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে বহু পুরনো মন্দির। হাজার হাজার স্থানীয় মানুষ এইসব মন্দিরে পুজো দিতেন।

এই সেই হাথরাস কাণ্ডের উত্তরপ্রদেশ। যেখানে ১৯ বছর বয়সি এক দলিত নারীকে গণধর্ষণ করে মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগে চারজন দোষীকে শনাক্ত করেন ধর্ষিতা। রাতের অন্ধকারে পরিবারের অমতেই মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেয় উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। এই সেই উত্তরপ্রদেশ যেখানে বাবা রাঘব দাস হাসপাতালে ২০১৭ সালের এক রাতে অক্সিজেনের অভাবে মারা যায় বহু সদ্যজাত শিশু। পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই করেন ডাক্তার কাফিল খান। তাঁকেই শান্তি বিঘ্নিত করার মিথ্যে মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। পরের মাসেই গোরখপুরে খুন হন তাঁর মামা নসরুতুল্লাহ ওয়ারসি। সেপ্টেম্বর মাসে এলাহাবাদ উচ্চ আদালত ঘোষণা করে, কাফিল খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। জেল থেকে মুক্তি পান তিনি।

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক 'ফেক এনকাউন্টারে'র অভিযোগ উঠেছে। বিবিসি রিপোর্ট জানাচ্ছে, করোনার সময় চউসা, কানপুর, উন্নাও, কনৌজ, প্রয়াগরাজ অঞ্চলে গঙ্গার তীর জুড়ে বহু মৃতদেহ পুঁতে ফেলা হয়েছিল। গঙ্গায় ভাসিয়েও দেওয়া হয়েছিল বহু মৃতদেহ। এই উত্তরপ্রদেশেই হাথরস গণধর্ষণের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত হন সিদ্দিক কাপ্পান। আড়াই বছর জেলে বন্দি করে রাখা হয় তাঁকে।

রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে দেখা গেল না রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকেও। মন্দিরের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাসেও দেখা যায়নি তাঁকে।

রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদের জমি সংক্রান্ত মামলায় রায় দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, বাবরি মসজিদ ফাঁকা জমির উপর নির্মিত হয়নি। যে কাঠামোটির ধ্বংসাবশেষের উপরে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল, তা ইসলামীয় কাঠামো নয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বা আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে কোথাও বলা হয়নি যে মন্দির ভেঙেই মসজিদ গড়া হয়েছিল।

আমাদের প্রশ্ন, আদিবাসী বলেই কি বিজেপির রামরাজ্যে ব্রাত্য দ্রৌপদী মুর্মু? রামরাজ্যে রাম ফিরলেন। কিন্তু যাঁরা বাড়িঘর হারালেন, উপার্জন হারালেন, তাঁরা ঘরে ফিরতে পারবেন তো? যে মন্দির-মসজিদগুলি ভাঙা হল 'রাম পথ' নির্মাণের নামে, তার কথা কেন তুলে ধরল না কেউ? কেন রামরাজ্যে বুলডোজার চালিয়ে চার হাজারেরও বেশি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো? মন্দিরের জাঁকজমকের আড়ালে উত্তরপ্রদেশের আসল চেহারা ঢেকে ফেলা হল না কি? আদালতের রায় বা এএসআই রিপোর্ট─ কোথাও বলা হয়নি মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়েছে। অথচ আমাদের মধ্যে মন্দির-পুনর্নির্মাণ তত্ত্বই সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করল বিজেপি। রাম জন্মভূমি আপনাকে মূল সত্য থেকে কত দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বিচার করতে হবে আপনাকেই। বাংলা যা ভাবছে-র আলোচনায় যে বিষয়গুলি তুলে ধরলেন আলোচকরা।

সম্বিত পাল

উত্তরপ্রদেশের সাক্ষতার হার কত? ভারতের সমস্ত রাজ্যের মধ্যে, নীচের দিক থেকে সাত নম্বর জায়গায় আছে উত্তরপ্রদেশ। সেখানে সাক্ষরতার হার ৬৭.৬৮%। যদি স্বাস্থ্যের দিকে, বেকারত্বের দিকে তাকাই, তাহলেও উত্তরপ্রদেশের চেহারাটা স্পষ্ট হয়। উত্তরপ্রদেশের লোকসভায় ৮০ টি আসন রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রাজ্য থেকে জিতে এলে সংসদের মসনদে বসা যায় এটা একটা প্রচলিত কথা ভারতের রাজনীতিতে। নরেন্দ্র মোদিরা এই উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাকে সামনে রেখে যা ঘটিয়েছেন তা অত্যন্ত সফল। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে আমন্ত্রণ জানানো, ভোগ তৈরির চাল দিয়ে আসা- সবটা মিলে জাতীয় উন্মাদনা দেখা গেছে। ভক্তিযোগের যে স্রোত ভারতে বইছে, তার বিপরীতে যে জ্ঞানযোগের দরকার ছিল, তা কোথায়! সব সমস্যার সমাধান কি হয়ে গেছে ভারতে যে এখন কেবল মন্দির নিয়েই ভাবব, এখন কেবল হিন্দু জাগরণের কথাই ভাবব? অপুষ্টির কথা ভাবব না? গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স বলছে ১২৫ টি দেশের মধ্যে ১১১ তম দেশ ভারত! দেশের মন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য বলছেন, ভারতের জেনেটিক গ্রোথ ইউরোপিয়ান গ্রোথের থেকে আলাদা, তাই এই হাঙ্গার ইনডেক্স ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাহলে ভারতের চিত্রটা কী? কে জানাবে? আমাদের তো সেনসাসই হয়নি, আমরা জানিই না এই মুহূর্তে বিভিন্ন মাপকাঠিতে ভারতের সঠিক অবস্থান কী?

আরও পড়ুন- হিন্দুরাষ্ট্রে ঠাঁই নেই সকলের? কেন রাম মন্দিরে আমন্ত্রিত নন শাহরুখ-সলমান-আমির-দীপিকা-করণ?

কর্মসংস্থান কী অবস্থায়? এই মুহূর্তে বেকারত্বের হার ৮.৭%। সরকার যদি ভালো কাজ করেই থাকে, তার প্রতিফলন কই? স্বনির্ভরতা, স্টার্টআপ নাকি প্রচুর হয়েছে দেশে। তার প্রচার নেই কেন? দেশের দারিদ্রের হার আরও ভয়াবহ, সরকারের কোনও তথ্য আমি অন্তত খুঁজে পাইনি! বলা হচ্ছে, অযোধ্যায় এই রাম মন্দিরের জন্য প্রচুর ভক্ত,পর্যটক আসবেন, নতুন কর্মসংস্থান হবে। অযোধ্যার যে দিকটা দেখানো হচ্ছে না তা হলো, বহু মানুষ এই মন্দির কর্মকাণ্ডে বাস্তুহারা হলেন। রাস্তা চওড়ার জন্য বহু মানুষকে উচ্ছেদ করা হলো, তারা ভিটেমাটি হারালেন রামের জন্য।

যোগী আদিত্যনাথ এবং বিজেপি একটা বিষয়কে প্রমাণ করেছে যে, সংখ্যালঘুদের ভোট না পেলেও আমরা ক্ষমতায় আসতে পারি। সংখ্যালঘু কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি না রেখে, রাখলেও তাঁদের মন্ত্রী না করেও ক্ষমতায় আসা যায়। বিরোধীদের আদর্শগত দেউলিয়াপনার জন্যই বিজেপির বিপরীত আখ্যান তৈরি করা যাচ্ছে না। সংখ্যালঘুদের নিয়ে কিছু বললেই সংখ্যালঘু তোষণকারী দল বলে দাগিয়ে দেওয়া হবে। সমগ্র উত্তরপ্রদেশ জুড়েই সংখ্যালঘুদের কোণঠাসা করার প্রচেষ্টা, বুলডোজার থেকে শুরু করে হালাল মাংস, লাভ জিহাদ, কী নেই! বিরোধীরা চুপ কারণ, তারা ওই 'তোষণকারী' হয়ে যাওয়ার ভয় পান।

আমাদের তো এটা উত্তরসত্যের যুগ। সত্যটা কী তা আমাদের গুলিয়ে গেছে। আমাদের আবেগ ও বিশ্বাসকে যা ইন্ধন জোগায়, তাকেই আমরা বিশ্বাস করে নিই। তথ্য যাচাই করার দরকার পড়েও না। নরেন্দ্র মোদি এই জায়গাটি তৈরি করে ফেলেছেন। নিজের ইমেজকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন, বিরোধী স্বর উঠে আসার জায়গা রাখেননি। বিরোধী দলগুলির কী হাল সবাই জানে। মিডিয়ার কাজ ছিল প্রশ্ন তোলা। তা একেবারেই অকেজো, ‘মুড অব দ্য নেশন' বলে চলা আবেগেই গা ভাসায় সংবাদমাধ্যমও। উল্টোপিঠের কথা আসে না। আমরা বায়ুদূষণ নিয়ে কথাই বলি না। সরকারও ভাবে না। দুর্বল বিরোধী, শাসক তোষণকারী সংবাদমাধ্যম, আপোস করে নেওয়া বিচারব্যবস্থার মধ্যে বিরোধী স্বর, প্রশ্ন-যুক্তি খোঁজা কঠিন হয়ে গেছে। ভারতে তো বলিউডের বড় ভূমিকা রয়েছে। এর আগে সিনেমা তো সেই সময়টাকেই তুলে ধরেছে। ১৯৮০-র দশকে অ্যংরি ইয়াংম্যান অমিতাভ তৈরি হলেন তো সময়ের দাবিতেই। এখন ইন্দিরা, নরেন্দ্র মোদি, জয়ললিতা, অটল, বায়োপিকের ছড়াছড়ি। বলিউড বিপ্লব করার জন্য সিনেমা করে না। নিজের লাভের জন্যই করে। কেউ কেউ অন্য চেষ্টা করেন ঠিকই। কিন্তু ভারতের সমাজ-রাজনীতি-বিনোদন কোথাওই প্রশ্ন তোলার সংস্কৃতি আর নেই। সরকার ভালো কাজ করলে সেই কাজ নিয়ে আমরা কথা বলতে পারছি না কেন? কেন রামভক্তিই আমাদের মূলধন হয়ে উঠছে?

সুমন সেনগুপ্ত

একদিকে রাম, আর অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান বিহারের মানুষ ইজরায়েলে যাচ্ছেন, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে। কারণ উত্তরপ্রদেশে, দেশে চাকরি নেই। বিজেপির নির্বাচনের আগে 'ধামাকা' লাগে। ২০১৪ সালে 'ধামাকা' ছিল 'বহুত হুয়া নারী পর ওয়ার, আব কি বার মোদি সরকার’, 'বহুত হুয়া ভ্রষ্টাচার, আব কি বার মোদি সরকার'। সেই দুর্নীতির কী হলো? ‘কালা ধন' কোথায় গেল? বেকারত্বের এমন হাল কেন? কেন প্রাণের ভয় নিয়ে ইজরায়েলে যেতে হচ্ছে বেকার যুব সম্প্রদায়কে? ২০১৪ সালে ভারতের বেকারত্বের হার ছিল ৫.৪৪%। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তা ১০.০৫%! দ্বিগুণ বৃদ্ধি প্রায়! ভারতের শিশুরা পড়তে শেখেইনি, যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ পারছে না, বইয়ের একটা বাক্য পড়তে পারছে না এমন শিশুর হার গ্রামাঞ্চলে ৮৩%! রাম মন্দির দিয়ে এই নিরক্ষরতা, বেকারত্ব ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে। কোভিডের সময়ে সবচেয়ে বেশি অব্যবস্থা ছিল উত্তরপ্রদেশে। তাও মানুষ ভুলে গেল! ভুলিয়ে দেওয়া হলো রামরাজ্য দিয়ে। মণিপুরে মহিলাদের নগ্ন করে হাঁটানো সারা বিশ্ব দেখছে। এই দেশকে রামরাজ্য দিয়ে ঢাকা যাবে? বছরে ২ কোটি চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি রামরাজ্য দিয়ে ঢাকা যাবে? মোদির রামরাজ্য নারীদের দুর্গতি, অপরাধ সব কিছুর দিকেই এগিয়ে! ২০১৪ সালের আগে এই অমিতাভ বচ্চন, সচিন-সহ বহু তারকা একটি ভিডিও করেছিলেন ইউপিএ-র আমলে, ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য নিয়ে। আজ সেই তারকারাই রামরাজ্যের পক্ষে! ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই মানুষরাই দেশের তারকা, এরাই বুদ্ধিজীবী, আর আমরা এদেরই অনুসরণ করি।

More Articles