মৃত বেড়ে ১১, রোজই চোখ রাঙাচ্ছে অ্যাডিনোভাইরাস, বিপদ এড়াতে যা যা খেতে দেবেন শিশুদের

Adenovirus : ঠিক কোন কোন খাবার খেলে রোগ ছড়াতে পারবে না খুদের শরীরে, কিসে বাড়তে পারে ইমিউনিটি সিস্টেম?

করোনা, ডেঙ্গুর পর ফের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নতুন ভাইরাস। এবারে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। পরিস্থিতি এতটাই লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছে যে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থায় পড়েছেন চিকিৎসকেরা। আইসিইউ উপচে পড়েছে রোগীদের ভিড়ে। কলকাতায় শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১। নয়া এই আতঙ্কের নাম অ্যাডিনোভাইরাস। তবে মূল সমস্যা হল এখনও পর্যন্ত কোনও টিকার খোঁজ পাওয়া যায়নি এই রোগের। ফলে চিকিৎসা বলতে শুধু লাইফ সাপোর্ট কেয়ার।

শীতের শেষ আর বসন্তের শুরু, এই সময়টায় প্রতিবছরই ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশির সমস্যায় ভোগে শিশুরা। সোয়াইন ফ্লু বা অন্যান্য ভাইরাল ফিভারের মতোই ভাইরাস সংক্রমণজনিত রোগ এটি। অ্যাডিনোভাইরাসের ক্ষেত্রেও প্রাথমিক উপসর্গ বলতে এটুকুই। তাই মামুলি সর্দি জ্বর ভেবে এড়িয়ে গিয়ে ঘনাচ্ছে বিপদ। চেনা রোগ অচেনা হচ্ছে প্রতি নিয়ত। একবার কাশি শুরু হলে সেই জের থাকছে মাসখানেক। ভিতরে ভিতরেই দানা বাঁধছে নয়া ভাইরাসের আতঙ্ক। যেহেতু এখনও কোনও টিকা আবিষ্কৃত হয়নি তাই রোগ যাতে ছড়াতে না পারে আগে থেকেই সতর্ক করেছেন চিকিৎসকেরা। যেহেতু এটিও একটি বায়ু দ্বারা সংক্রমিত রোগ তাই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডা. অঞ্জন চৌধুরী, কোভিডের মতোই মাস্ক পরা, হাত ভালো করে ধোওয়া, যেখানে সেখানে থুতু না ফেলা, এগুলোই মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিকভাবে।

আরও পড়ুন - অ্যাডিনোভাইরাস কী, কেন এত শিশু আক্রান্ত হচ্ছে বাংলায়

কিন্তু এই সব ব্যতিরেকে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন আরও একটি দিক, ঠিক কোন কোন খাবার খেলে রোগ ছড়াতে পারবে না খুদের শরীরে, কিসে বাড়তে পারে ইমিউনিটি সিস্টেম, সে কথাও জানাচ্ছেন তাঁরা। জানুন সেগুলি কী কী -

১. তেতো জাতীয় খাবার - ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রতি দিন ভাতের সঙ্গে তেতো জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। উচ্ছে অথবা করলার পাশাপাশি এই সময় বাজারে পাওয়া যায় নিম পাতা। নিমের মধ্যে রয়েছে ঔষধি গুণ, যার অ্যান্টিভাইরাল উপাদান শরীরকে মজবুত রাখে এবং বাতাসে উড়ে বেড়ানো রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

২. প্রোটিন জাতীয় খাবার - শরীর সুস্থ রাখতে এমনিতেও চিকিৎসকেরা ডায়েট তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন খাবার খাওয়ার দিকে জোর দেন। প্রোটিন খেকে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম চাঙ্গা থাকে। তাই মাছ, মাংস, সয়াবিন, মুসুর ডাল, ডিমের সাদা অংশ ইত্যাদি খাওয়াতে হবে শিশুদের। এতে আপনার শিশুটিও থাকবে সুস্থ।

৩. লবঙ্গ, দারচিনি, কাঁচা হলুদ - আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বেশ কিছু মশলার রয়েছে বিবিধ গুণাগুণ। করোনার সময়েও ঘরে ঘরে নিয়মিত লবঙ্গ, দারচিনি, কাঁচা হলুদ এবং টকদই খাওয়ার হুজুগ দেখা যায়। তার পর সেই রোগ কিছুটা থিতিয়ে পড়লে অভ্যাসে ঘাটতি দেখা যায়, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আবারও ওই অভ্যাস ফিরিয়ে আনার দিকে জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বাচ্চাদের নিয়মিত এগুলি খাওয়ানোর কথাও বলা হচ্ছে যাতে, সাম্প্রতিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের মধ্যেই গীরে উঠতে পারে প্রতিরোধ ক্ষমতা। এই সব মশলাতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।

আরও পড়ুন - সাড়ে ৪৫ হাজার বছরের পুরনো ভাইরাস ডেকে আনছে সর্বনাশ! আবার ঘনাবে মহামারীর কালো ছায়া?

৪. টকদই - টক দইয়ের ফারমেন্টেড এনজাইম খাবার হজমের জন্য ভীষণ উপযোগী। এর প্রোবায়োটিক উপাদান লিভারকে সুস্থ রাখতে এবং ব্যাড কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

৫. রসুন - রোগ প্রতিরোধে রসুন খুবই উপকারী। খালি পেটে তাই এক কোয়া রসুন খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট সহ যে কোনও ভাইরাস জনিত রোগ প্রতিরোধে এটি দারুণ কাজ করে।

৬. জল - জলের ওপর নাম জীবন, তাই শরীরকে চাঙ্গা রাখতে দিনে চার থেকে পাঁচ লিটার জল খাওয়া জরুরী। জলের অনেক রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে পারে। এই সময় বাতাসে ছড়ানো ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে শিশুদের দিনে অন্তত তিন লিটার জল খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

More Articles