পূর্বপুরুষের তৈরি হাসপাতাল! আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় কর পরিবারও

R G Kar Medical College And Hospital Incident: সেই গৌরবের প্রতিষ্ঠানে এই ধরণের নারকীয় ঘটনা এত বছরের গরিমাকে নষ্ট করছে বলে জানান প্রতিষ্ঠাতা রাধাগোবিন্দ করের পরিবারের লোকজন।

গত কয়েক দিন ধরে শিরোনামে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। গত শুক্রবার আরজি কর হাসপাতালের বক্ষ বিভাগের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় এক চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। ময়নাতদন্তে তাঁর শরীরে মেলে একাধিক ধর্ষণের চিহ্ন। ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভের ঝড় ওঠে। এমনকী সেই ঘটনায় আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে যায় দেশ জুড়ে। ঘটনার পর থেকেই আন্দোলনে নেমেছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাতের শহর দখল করতে বুধবার রাতে আন্দোলনে নেমেছিলেন মেয়েরা। সেই সময় এক দল দুষ্কৃতী হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন।

১৯১৬ সালের ৫ জুলাই বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজ নামে এই হাসপাতালটির উদ্বোধন করেছিলেন ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম খ্যাতনামা চিকিৎসক রাধাগোবিন্দ কর। তাঁর নাম অনুসারে পরবর্তী কালে এই মেডিক্যাল কলেড ও হাসপাতালের নাম রাখা হয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। সেই হাসপাতালের প্রথম সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সেই রাধাগোবিন্দ করের স্মৃতিবিজড়িত আরজি কর হাসপাতালের পরিকাঠামোই এখন দেশের সবচেয়ে বেশি চর্চিচ বিষয়। সে নিয়ে কী বলছেন কলকাতার পশ্চিম পাড়ে হাওড়ার বেতরের কর পরিবার? একদিন সেই পরিবারেরই কৃতি সন্তান কলকাতাকে উপহার দিয়েছিল এই হাসপাতাল।

আরও পড়ুন: ‘কী করছে পুলিশ?’ আরজি করে ভাঙচুর নিয়ে হাইকোর্টের প্রবল ভর্ৎসনার মুখে রাজ্য

অবশ্য সেই হাসপাতালের ইতিহাস আরও দীর্ঘ। সেই পরিবারের বর্তমান সদস্য পার্থ কর জানালেন, ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে দেশে ফেরেন রাধা গোবিন্দ কর। কলকাতায় একটি জাতীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি ডাক দেন এক বৈঠকের। ১৮ অক্টোবর সেই বৈঠকে ডঃ মহেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, ডঃ অক্ষয় কুমার দত্ত, ডঃ বিপিন বিহারী মৈত্র, ডঃ এম্. এল. দে, ডঃ বি. জি ব্যানার্জী এবং ডঃ কুন্দন ভট্টাচার্য্যের মত কলিকাতার বিখ্যাত চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে ঠিক করা হয়, ব্রিটিশ শাসকদের অধীনতা থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ণ পৃথক একটি মেডিক্যাল স্কুল তৈরি করা হবে। সেই ভাবনা মতোই ওই বছরই ১৬১, বৈঠকখানা বাজার রোডে তৈরি করা হল ক্যালকাটা স্কুল অব মেডিসিন, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম বেসরকারি হাসপাতাল। কয়েকদিনের মধ্যেই ১১৭ নম্বর, বৌবাজার স্ট্রিটে উঠে এল হাসপাতালটি। ডঃ রাধাগোবিন্দ কর প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হলেন সেই হাসপাতালের।

এরই মধ্যে ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে মিশে গেল সেই ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল এবং আরও একটি বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার নাম কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল। তৈরি হল ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের সেটিরই নাম পাল্টে উদ্বোধন করা হল বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজ নামে উদ্বোধন করা হয়। পরে রাধা গোবিন্দ করের নামে নামকরণ করা হয় প্রতিষ্ঠানটির। কার্যত সেই সময় মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে তিলে তিলে গড়েছেন তিনি এই স্বপ্নের হাসপাতাল।

আরও পড়ুন: আরজি করে ভাংচুর করল কারা? সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে গ্রেফতার বহু

চিকিৎসা ক্ষেত্রে শিক্ষা পরিষেবা ও পঠন পাঠনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দিতে তৈরি হয়েছিল এই মেডিকেল কলেজ। আর সেই গৌরবের প্রতিষ্ঠানে এই ধরণের নারকীয় ঘটনা এত বছরের গরিমাকে নষ্ট করছে বলে জানান পরিবারের আর এক সদস্য স্বাগতা ঘোষ। এই ঘটনা রাজ্য, দেশ ছেড়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইস্যু হয়ে উঠেছে। ইংল্যান্ডের প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমেও এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কথায়, এই ধরনের ঘটনা ঘটলে তার দায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে। ভুল থাকলে তা শুধরে নিয়ে রাজ্যের মানুষের পাশে থাকতে হবে। এ ঘটনা নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাতে সমর্থন জানিয়ে রাধা গোবিন্দ করের উত্তরসূরিরা বলেন এই আন্দোলনের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। বুধবার আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাত দখলের কর্মসূচীতে নেমেছিলেন রাজ্যের মহিলারা। সেই আন্দোলনে সামিল হন কর পরিবারও। তাঁদের বাড়ির সদস্যারাও পথে নেমেছিসেন সে রাতে। বর্তমান প্রজন্মের ওই বাড়ির পুত্রবধূ শমিতা কর জানান, গোটা ঘটনায় তাঁরা কার্যত বাকরুদ্ধ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি উঠেছে গোটা পরিবারের তরফেই।

More Articles