লাল-নীল সব টিফিন বক্স

Children's Day: কিন্তু আমি কি অত খেতে পারি নাকি! কিন্তু সবার থেকেই একটু একটু করে খেতেই হয়! নাহলে তো ওদের খারাপ লাগবে।

স্কুলে আমার সবচেয়ে পছন্দের সময় টিফিন টাইম। ছোটবেলা থেকেই টিফিনের ঘণ্টা পড়লেই মনটা যেন উড়ু উড়ু করে, কখন যে সবাই মিলে খেতে বসব। টিফিন বক্স খোলার ঠিক আগে আগে শুরু হয় আমাদের এক মজার খেলা। কে কী টিফিন এনেছে বলো দেখি? কার পাতে লুচি-আলুভাজা, কার পাতে ম্যাগি, কার পাতেই বা মজাদার কেক? তার পর টিফিন বাক্স যে-ই না খোলা, অমনি একটা-দুটো পদ হাপিস!

না, সবসময়ই যে ওইভাবে হাওয়া হয়ে যায় তা না... কেউ কেউ নিজে থেকেই ভাগ দিয়ে যায়। কেউ আবার ভাগ নিয়েও যায়। তবে সব থেকে মজার বিষয় কী জানো? যখন প্রিয় বন্ধু নিয়ে আসে আমার সবচেয়ে পছন্দের খাবার, আর আমি ওর প্রিয় টিফিন। আর অমনি তড়িঘড়ি বাক্সবদল করে ফেলি আমরা। তখন ওর টিফিন বাক্স হয়ে যায় আমার আর আমারটা ওর।

আরও পড়ুন: শিশুদের কাছে বিজ্ঞানকে সহজ করে তুলেছিলেন, বাঙালি মনে রাখেনি গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যকে

টিফিনের সময় খাওয়া হয়ে গেলে মাঝেমধ্যেই খেলা শুরু হয় আমাদের। নানা রকম খেলা। মাঝেমধ্যে টিফিন খেতে খেতেও আমরা দৌড়োদৌড়ি করে ফেলি। মাঝেমধ্যে না খেলতে খেলতে বা দৌড়োদৌড়ি করতে করতে টিফিন হাত থেকে পড়েও যায়। আর তখন কী হয় ভাবতেও পারবে না। অমনি না স্কুলের সমস্ত বোন, বন্ধু, দিদিরা সব্বাই ছুটে আসে। সকলেই কেমন যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ে আমাকে খাওয়ানোর জন্য। যে যার টিফিন বাক্স এগিয়ে দেয় আমার দিকে।

আভিরীর আঁকা গৌতম বুদ্ধ

কিন্তু আমি কি অত খেতে পারি নাকি! কিন্তু সবার থেকেই একটু একটু করে খেতেই হয়! নাহলে তো ওদের খারাপ লাগবে। জানো, এই জন্যই না করোনার সময়টা খুব কষ্ট হত আমার। সকলের টিফিনের সেই আলাদা আলাদা গন্ধ, কাকিমাদের হাতের রান্নার স্বাদ— সব খুব মনে পড়ত। মন কেমনও করত মাঝেমধ্যে।

তার পর স্কুল খুলল। খুব মজা হল। আমরা আবার স্কুলে যেতে লাগলাম। কিন্তু সবাই কেমন যেন দূরে দূরে। একসঙ্গে টিফিন খাওয়া বন্ধ, বন্ধুর গায়ে গা লাগিয়ে গল্প করাও বারণ। করোনার পরে অন্তত এক থেকে দু'বছর আমাদের টিফিন ভাগ করে খাওয়াও নিষেধ ছিল। তবে এখন তো আবার সব আগের মতোন হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: “প্লিজ হাতি পাঠান না,” কেন নেহরুকে হাজার চিঠি লিখেছিল টোকিও, বার্লিনের শিশুরা?

ফিরে এসেছে আমাদের টিফিন টাইমের হইহল্লা। এখন আমার পোলাও আবার বন্ধুর পাতে, বন্ধুর পরোটা চলে আসে আমার বাক্সে। আমরা জমিয়ে সবাই মিলে টিফিন খাই। আর যদি টিফিন শেষ করতে না পারি! চিন্তা কীসের? বন্ধুরা আছে না! ঠিক ঝাঁপিয়ে পড়বেই সকলে। আর মুহূর্তে উধাও হয়ে যাবে লাল-নীল সব টিফিন বক্স।

 

আভিরী মজুমদার

ষষ্ঠ শ্রেণি

গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল

(পরিবারের সম্মতিক্রমে ছবি ব্যবহার করা হল)

More Articles