প্রেমিকাকে টুকরো টুকরো করে কেটে খুন! ২০২২-এ যে নৃশংস ঘটনাগুলোয় শিউরে উঠল দেশ

2022 Horrific murders : ২০২২-এ এসেও এমন বেশকিছু নৃশংস অপরাধের ঘটনা ঘটেছে এই দেশে। সেগুলোর মধ্যেই কিছু ঘটনা ফিরে দেখা যাক।

হাসি কান্না, নানা ওঠা পড়ায় কেটে গেল আরও একটি বছর। ২০২২-এর শেষ লগ্নে চলে এসেছি আমরা। আর মাত্র কয়েকটা দিন, তারপরই নতুন একটি বছরের আগমন। নতুন স্বপ্ন, নতুন ঘটনার ঘনঘটা। করোনা পরবর্তী পৃথিবী নতুন করে আনন্দের মুহূর্ত খুঁজে চলেছে। উদযাপনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সবাই। ভারতও সেই ভিড় থেকে বাদ নেই।

কিন্তু সবটাই কি আনন্দের? ২০২২-এ বিভিন্ন ছোট বড় ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ভারত। ১৩০ কোটির এই দেশে প্রতিদিনই ঘটে চলেছে একের পর এক কাণ্ড কারখানা। থেমে নেই অপরাধও। খবরের কাগজ বা চ্যানেল খুললেই সেসব বোঝা যায়। তবে সেসবের ভিড়েও ২০২২ সাল সাক্ষী থাকল এমন কিছু ঘটনার, যা শুনলে শিউরে উঠতে হয় আমাদের। চোখ বুজে ভাবা, এরকমও ঘটতে পারে এই দেশে? ২০২২-এ এসেও এমন বেশকিছু নৃশংস অপরাধের ঘটনা ঘটেছে এই দেশে। সেগুলোর মধ্যেই কিছু ঘটনা ফিরে দেখা যাক।

বগটুই গণহত্যা

২০২২-এর শুরুর দিকে গোটা ভারতের সংবাদমাধ্যমের নজর পড়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। সৌজন্যে বীরভূম। ২১ মার্চের সন্ধ্যায় রামপুরহাটের ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বড়শুল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখের দিকে কয়েকজন বোমা ছোঁড়ে। আকস্মিক এই ঘটনায় গুরুতর জখম ভাদুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। এই একটি ঘটনা থেকেই তোলপাড় শুরু হয়।

ওইদিনই গভীর রাতে কয়েকজন লোক বগটুই গ্রামে ঢোকে। ভাদু খুনের বদলার আগুনে তাদের রক্ত ফুটছে। সেই সময়ই গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তখন বাড়ির মধ্যেই ঘুমিয়েছিলেন মহিলা, শিশুরা। একের পর এক বাড়ি জ্বলতে শুরু করার পর সবার নজর যায় বগটুইয়ের দিকে। কিন্তু চমকের তখনও বাকি ছিল। অভিযোগ, দমকল, পুলিসকে সময় মতো খবর দেওয়া হয়নি। ভাদু খুনের পর অশান্তি হওয়ার সম্ভাবনা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরদিন সকালে যখন আগুন নিভল, দেখা গেল ভয়াবহতার ছবি। অন্তত ১০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আটজন। একটি বাড়ি থেকেই সাতজনের দেহ উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে আরও দু’জন মারা যান। বগটুইয়ের এই ঘটনা চমকে দিয়েছিল পুরো পশ্চিমবঙ্গকে। রাজনৈতিক টানাপোড়েন আজও অব্যাহত।

শ্রদ্ধা ওয়ালকর হত্যাকাণ্ড

বাড়ির লোকজন বারবার আটকে রাখছিল তাঁকে। প্রেমিকের সঙ্গে লিভইন করা যাবে না, এই ফতোয়া মানতে পারেননি ২৭ বছরের মেয়েটি। সমস্ত বেড়া ভেঙে চলে গিয়েছিলেন প্রেমিকের কাছে। শ্রদ্ধা ওয়ালকর এবং আফতাব পুনেওয়ালার প্রেমকাহিনির গল্পটি অন্যরকম হতেই পারত, দৃষ্টান্ত হয়ে থাকত। ‘অন্যরকম’ হল বটে, কিন্তু সেই ব্যাপারটি যাতে আর কারও সঙ্গে নাঘতে সেই প্রার্থনাই করছে গোটা ভারত। যাকে ভালোবাসলেন শ্রদ্ধা, সেই আফতাবই তাঁকে খুন করবে, ভাবতে পারেননি। বিয়ের কথা বলায় ঝগড়া, তারপর গলা টিপে খুন। এখানেই থেমে থাকেনি সবটা। শ্রদ্ধার নিথর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে নেয় আফতাব। বাইরে গিয়ে কিনে আনে নতুন একটি ফ্রিজ। সেখানেই প্রেমিকার কাটা দেহ রেখে দেয় আফতাব! সময় সুযোগ বুঝে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে হাপিশও করতে থাকে! দিল্লির এই ঘটনার অভিঘাত এখনও কাটেনি। গোটা দেশ শিউরে উঠেছিল বর্ণনা শুনে। রাগের মাথায় খুন করার পর আফতাব যা করেছে, সেটা দুঁদে পুলিস অফিসারদেরও চমকে দিচ্ছে। শ্রদ্ধার কাটা মাথাও নাকি ফ্রিজে রাখা ছিল বলে জানা গিয়েছে।

এই মুহূর্তে পুলিসের হেফাজতে আফতাব পুনেওয়ালা। লাগাতার চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। সমস্ত রকম পরীক্ষা করা হচ্ছে। ঘটনার একের পর এক তথ্য উঠে আসছে সামনে। তবে শ্রদ্ধা খুনের ঘটনা অপরাধের জগতেও প্রভাব ফেলেছে। একই পদ্ধতিতে খুনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে তারপরই। সবদিক দিয়ে দেখলে, দিল্লির এই একটি হত্যাকাণ্ড গোটা সমাজকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।

কেরালা নরবলি

শিরোনাম পড়ে চমকে ওঠাই স্বাভাবিক। ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে এমন ঘটনার কথা শুনতে হবে, সেটাই ভাবেননি অনেকে। তার ওপর রাজ্যের নাম কেরালা। বলা হয়, ভারতের সবচেয়ে শিক্ষিত রাজ্য। কিন্তু সেখানেই নৃশংসতার সীমা পেরিয়ে গেল একটি ঘটনায়। কেরালার এলানতুরের এক দম্পতি অনেকদিন ধরেই আর্থিক কষ্টে ভুগছিলেন। নাম ভাগবল সিং ও লায়লা। তাঁরাও টাকা কামাতে চান, নিজেদের স্বপ্নপূরণ করতে চান, বড় জায়গায় যেতে চান। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। শেষমেশ তাঁদের সঙ্গে আলাপ হল মহম্মদ শাফি নামের একজনের সঙ্গে। এখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।

দীর্ঘদিন কথাবার্তা বলার পর ভাগবল আর লায়লার বিশ্বাস অর্জন করে শাফি। তাঁদের আর্থিক সমস্যার কথাও অজানা থাকে না। সে সবকিছু মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু কীভাবে? দুই মহিলার বলি দিতে হবে। এমনকী এই দুই মহিলাকে খুঁজেও আনে শাফি। রোজেলিন ও পদ্মা নামের দুই মধ্যবয়স্কা লটারির টিকিট বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তাঁদের অপহরণ করে আনে শাফি। তারপর ভাগবল ও লায়লাকে বুঝিয়ে তিনজনে মিলে ওই দুজনকে খুন করে। এখানেই থেমে থাকেনি। তারপর দুজনের দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে রান্না করে খায়ও! বাকি দেহাবশেষ পুঁতে দেওয়া হয়। ঘটনাটি সামনে আসার পর পুলিসও হতচকিত হয়ে যায়। সাইকোপ্যাথ মহম্মদ শাফির জালে পড়ে ওই দম্পতিও কী করে এই ঘটনা ঘটাল, ভাবতে পারেনি কেউ। শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নামায় এই ঘটনা।

রাজস্থানে তিন বোনের একসঙ্গে আত্মহত্যা

পণ দেওয়া ভালো নয়, বাড়ির মধ্যে ভয়াবহ হিংসার ঘটনা রুখতে সবসময় সতর্ক থাকুন। প্রশাসন ও পুলিসের এমন সাবধানবাণী অনেক সময়ই শোনা গিয়েছে। কিন্তু একবিংশ শতকের ভারতেও যে এমন ঘটনা জ্বলজ্যান্ত বাস্তব, প্রমাণ দিল রাজস্থান। মমতা, কালু, কমলেশ – তিন বোনের একই বাড়িতে বিয়ে হয়েছিল। মে মাসে তাঁদের তিনজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কালুর দুই সন্তানও নিখোঁজ। কোথায় গেল তাঁরা?

শেষমেশ বাড়িরই পাতকুয়ো থেকে পাঁচজনের দেহ উদ্ধার করা হয়। তিন বোন, সঙ্গে দুই সন্তান। একজনের বয়স চার বছর, আরেকজনের মাত্র এক মাস! তিন বোনই আত্মহত্যা করেছে বলে জানা যায়। মমতা তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে আগেই লিখে রেখেছিলেন, ‘এভাবে বাঁচার থেকে মরে যাওয়া ভালো’। জানা গিয়েছে, পণের জন্য অত্যাধিক চাপ তো ছিলই, তার সঙ্গে প্রতিদিন মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারও চলছিল। এসব আর সইতে পারছিলেন না তিনজন। চেয়েছিলেন পড়াশোনা করে কাজ করবেন। সেটাও হল না। আরও মর্মান্তিক ব্যাপার, আত্মহত্যার সময় মমতা ও কমলেশ দুজনেই অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

সিধু মুসেওয়ালা হত্যাকাণ্ড

পাঞ্জাবের বিখ্যাত গায়ক সিধু মুসেওয়ালার খুন রীতিমতো লাইমলাইটে চলে আসে। মে মাসে নিজের এসইউভিতে, ভাই-বোনেদের সঙ্গে জাওয়াহারকে গ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন মুসেওয়ালা। হঠাৎই দুটো গাড়ি এসে তাঁকে বাধা দেয়। তারপরই শুরু হয় গুলিবৃষ্টি। ঝাঁঝরা হয়ে যায় মুসেওয়ালার শরীর। জানা যায়, লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গ্যাং এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তাও তিহার জেলের ভিতর বসে কানাডার আরেক গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই কাজটি করা হয়। পাঞ্জাবের কুখ্যাত গ্যাং ওয়ারের ঘটনা ফের সামনে চলে আসে। বিখ্যাত এই গায়কের হত্যাকাণ্ড রীতিমতো সাড়া ফেলে দেয় ভারতে।

More Articles