ঋণের তলায় বামেদের হাতের পাঁচ কেরল! যে ভাবে বোঝা বেড়েছে পাঁচ বছরে

Kerala: ৫ বছরে এই রাজ্যে তাদের আয়ের অনুপাতে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে

সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যের আর্থিক লেনদেনের একটি বিশ্লেষণ সামনে আসায় মাথায় হাত কেরলবাসীর। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে বামেদের মডেল রাজ্য কেরালার দেনার পরিমাণ বেড়েছে নজর কাড়া অঙ্কে। ২০১৬-১৭ সালের হিসেবে যেখানে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮৬৪৫৩.৮৬ টাকা, সেখানে গত বছর অর্থাৎ ২০২০-২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৫৬৪১.১৫ টাকা। অর্থাৎ ৮০.০১ শতাংশ বেশি। এই বৃদ্ধিতে স্বাভাবিক ভাবেই দুশ্চিন্তা চরমে পৌঁছেছে সরকারের।

বেশ কিছুদিন ধরেই আর্থিক সঙ্কট ভুগছে কেরল। তার ওপর ঘৃতাহুতি হয়ে এসেছিল ২০১৮ সালের বানভাসী পরিস্থিতি। তার পর থেকেই সামগ্রিকভাবে নড়ে যায় আর্থিক ভিত। বর্তমানে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে এগাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আর্থিক সঙ্কটের কারণেই ঋণ পায়নি রাজ্য সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন স্থগিত রাখারও সিন্ধান্ত নিতে অগ্রসর হয় পিনারাই বিজয়নের সরকার। প্রায় সব স্তরেই এই ঋণের পরিমাণকে নজির বিহুর বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এমনকী সরকার নিজেও সম্মত হয়েছে এতে।

আরও পড়ুন - হু হু করে বাড়ছে নতুন মায়েদের আত্মহত্যার প্রবণতা! কোন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছেন মেয়েরা

কিন্তু কী এর কারণ? কেন এভাবে ডুবতে বসেছে একটা রাজ্যের আর্থিক পরিকাঠামো? আরবিআইয়ের তরফে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ বছরে এই রাজ্যে তাদের আয়ের অনুপাতে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এর জন্য প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসছে বিনামূল্যে ভর্তুকিযুক্ত ভাতাগুলিই। তার ওপরে করোনাকালে আচমকা ধাক্কা আরও বিষ ফোঁড়ার মতো ঠেকেছে। শুধু কেরল বললে ভুল হবে এই তালিকায় রয়েছে খোদ বাংলাও। সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ মেটাতে হিমশিম অবস্থা। এমনকী রাজ্য বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলির বকেয়া পরিশোধ করতেও পারেনি সরকার। তার ওপর কেরালায় মোট রাজস্বের ৯০ শতাংশ ঋণ এবং ভর্তুকিতে ব্যয় করা হয়। অথচ তাতে কোনও পরিবর্তন করেনি সরকার। ফলে ক্রমশই পরিস্থিতি চলে গিয়েছে হাতের বাইরে।

প্রশ্ন উঠছে ভোট ব্যাংকের রাজনীতির দিকেই। এই ভাতা দিয়ে যে বিস্তর ভোট আদায় হয় সরকারের তা কিছুতেই হারাতে চাইছে না তারা। তার ফলে ভর্তুকি বন্ধের দিকেও এগতে চাইছে না, অথচ কী অবাক কান্ড, চাকরি নেই , চাকরি পেলে বেতন নেই! অদ্ভুত একটা সময়ে পর্যবসিত হচ্ছে সকলেই। আরবিআই ইতিমধ্যেই জানিয়েছিল, সময়মতো তাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে না পারলে চিত্রটা এরকমই হবে।

এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা KIIFB-এর মতো সংস্থার মাধ্যমে সরকার তহবিল সংগ্রহকেও দায়ী করেছেন এই বিষয়ে। “লোন পাওয়ার জন্য KIIFB-এর মতো এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করার সঙ্গে এর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে আর্থিক সংকটের”,এমনটাই বলেছেন অর্থনীতিবিদ মেরি জর্জ। এখনই রাশ টানতে না পারলে আরও বাড়বে ঋণের বোঝা। কেন্দ্রের দেওয়া অনুদান প্রাপ্ত রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কেরালা। ৫৩,১৩৭ কোটি টাকা পেয়েও ঘাটতি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে কেরালা। আর এরই ফল হয়েছে, আজকের বেহাল দশা।

More Articles