৮০০০০ টাকায় একজোড়া মোজা, কোটের মূল্য ১২ লাখ! চেনেন বিশ্বের সবথেকে দামী এই উল?

Vikuna wool : ভেড়ার পশমিনার উল পাওয়া যায় প্রতি কেজি প্রায় ৬,৬০০ টাকায় সেখানে ভিকুনার পশমের প্রতি কেজির দাম প্রায় ৫০,০০০ টাকা

জাঁকিয়ে শীত পড়েছে এই বছর। হিমাঙ্কের কাছাকাছি একাধিক শহর। এমনকী সম্প্রতি কলকাতাতেও বরফ পড়া নিয়ে সামনে এসেছে মিম। তাতে দেখা গিয়েছে, হলুদ ট্যাক্সির গায়ে ভর্তি সাদা বরফ। হাওড়া ব্রিজও ঢাকা হয়েছে বরফে। তবে মিমের কথা বাদ দিলেও শীতের দাপটকে খাটো করা যায় না মোটেই। আর শীতকাল মানেই গরম পোশাকের বাজার। হাল আমলে বিভিন্ন রকমের জ্যাকেট পাওয়া গেলেও উলের জিনিসের বিকল্প নেই।

মা ঠাকুমাদের হাতে উল কাঁটার চল এখন অতীত, তবে বাজারে আজও মেলে উলের সোয়েটার, মোজা, মাফলার। কাঁটায় একটার পর একটা ঘর তুলে বোনা হতো এইসব জিনিস। এখনও মেশিনের চল। তাতেই তৈরি হয়ে রং বেরঙের সোয়েটার, টুপি, মোজা। কত আর দাম হবে সেসবের, খুব বেশি হলে কয়েক হাজার। ডিজাইন এবং উলের প্রকৃতির ওপর দামের হেরফের হয়। তবে কিনা যদি শোনেন একটা উলের মাফলেরের দাম প্রায় ছয় লক্ষ টাকা, তবে তো চোখ কপালে উঠবে নিশ্চিত। খুঁজে দেখতেই হবে কী এমন উপকরণ ব্যবহার করা হয় তাতে, কতোই না দাম তার! জানেন কি এইসব শীত পোশাকের মূল উপকরণ যে উল তার মধ্যে সবথেকে দামী কোনটি? কোথায় পাওয়া যায় এটি? জেনে নিন।

আরও পড়ুন - হাড়হিম করা সঙ্গীত! কাকার হাড়গোড় দিয়ে মেটাল গিটার তৈরি করলেন ইউটিউবার!

এক জোড়া মোজার দাম আশি হাজার টাকা। মাফলারের দাম ছয় লক্ষ ছুঁইছুঁই। সোয়েটার হলে আরও বেশি। এমন উলের নাম হল ভিকুনা। এই উল ভেড়া বা ছাগল থেকে নয়, পেরুতে পাওয়া ভিকুনা নামক প্রাণীর শরীরে গজানো পশম থেকে তৈরি হয়। এদের দেখতে অনেকটাই বামন উটের মতো। লামা প্রজাতির অন্তর্গত। পেরুর আন্দিজ পর্বতমালায় পাওয়া যায় এই প্রাণীদের। তবে ভেড়া অথবা ছাগলের লোমের থেকে এদের লোমের মূল্যের তফাৎ এতো হওয়ার আসল কারণ হল ভিকুনা বিলুপ্তির পথে। প্রায় তিন ফুট সমন উচ্চতা এদের। বিশ্বে এইমুহূর্তে ২ লাখ ভিকুনা অবশিষ্ট আছে মাত্র।

ভিকুনার গায়ের পশম এতটাই সূক্ষ্ম হয় যে তা খুবই আরামদায়ক। তাই সাধারণ ভেড়া বা ছাগলের লোমের থেকে এর এতো বেশি কদর। যেখানে ভেড়ার পশমিনার উল পাওয়া যায় প্রতি কেজি প্রায় ৬,৬০০ টাকায় সেখানে ভিকুনার পশমের প্রতি কেজির দাম প্রায় ৫০,০০০ টাকা। এরপর সেই কাঁচামাল কিনে তাকে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে মেশিনে বানানো হয় শীত পোশাক। যার ফলে অত দাম হয় পোশাকের।

একদিকে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর লোম, তায় আবার মারাত্মক আরামদায়ক। স্বাভাবিক ভাবেই দাম বেশি হয় ভিকুনার পশমের। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাইবারগুলির একটি ভুল ভিকুনার পশম। তার ওপর আবার ভিকুনা উল খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। তাই জোগানও কম। একবার ছাঁটাইয়ের পর নতুন করে লোম গজাতে প্রায় তিন বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায় এদের। আর একটি ভিকুনা থেকে একবারে মাত্র পাঁচশ গ্রাম লোম মেলে যা দিয়ে একটা মোজাও তৈরি হয় না। খুব ঠান্ডাতেও রক্ষা করতে পারে ভিকুনার পোশাক। কাশ্মীরি পশমিনার তুলনায় ১০ শতাংশ হালকা এবং হাইপোঅ্যালার্জেনিক হল ভিকুনার পশম। লোরো পিয়ানা নামে ইতালীর একটি কোম্পানি অনলাইনে বিশ্বব্যাপী ভিকুনা উলের তৈরি পোশাক বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে। উক্ত ওয়েবসাইটের তথ্য থেকেই জানা যাচ্ছে, এই উলের তৈরি পোশাকের দাম। কখনও মোজা জোড়ার দাম লাখ খানেক, কখনও আবার একটা শার্টের দামই ৫ লাখ আর কোর্ট হলে সেই দামই ছুঁয়ে ফেলেছে ১১ লাখের কোটা। তাই মধ্যবিত্তের এমন বিলাসিতা করার সুযোগ না থাকলেও সমাজের উচ্চবিত্ত অনেকেই এমন পোশাক কিনে শীতের দেশে পা বাড়াতে শুরু করেন।

More Articles