এ পানপাত্র নিদারুণ বিষে ভরা
Holy Grail: গল্পের খোঁজে এক চিররহস্যাবৃত পানপাত্রের মুখোমুখি দাঁড়ানো। খ্রিস্টধর্মীদের মধ্যে যা হলি গ্রেইল বলে পরিচিত। কী এই পানপাত্র? দু'হাজার বছর ধরে আলোচনা করছে খ্রিস্ট উৎসাহীরা।
যিশুকে আমি ভালবাসি। কারণ তিনি ঈশ্বর নন। একজন সাধারণ মানবপুত্র হিসেবে তাঁর আবির্ভাব। মানুষের অধিকারের পক্ষে তাঁর লড়াই। তাঁর লীলাময়তা অপার। অথচ কোনো অলৌকিক বিভূতিকে তিনি বড় করে দেখাতে চাননি। যিনি তাঁর কোনো দিব্যভাব দেখেছেন, তাঁকেই তিনি বলেন, এ ঘটনার কথা কাউকে বোলো না। ম্যাজিকের পরিবর্তে সকলের সামনে তিনি রেখেছেন অহিংস দ্রোহ, মানবতা, অপার ভালবাসা। রবীন্দ্রনাথ হোন বা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি, বিশ্বের তামাম কবি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, দার্শনিক যিশুর ভক্ত। ক্যাথলিক ধর্মের নানা গোঁড়ামি, চার্চের খবরদারি কেউ অপছন্দ করতে পারেন। কিন্তু যে মানুষ ভালবাসার জন্যে ক্রুশ কাঁধে পথে পথে ঘোরে, মাথায় কাঁটার মুকুট পরে নেয়, তাঁকে ঘোর নিন্দকও শত্রু ঠাওরাতে পারবে না।
গান্ধি মিলটন নিউবেরি ফ্রানজকে লেখা এক চিঠিতে যিশুকে মানবতার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক বলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ 'খ্রিস্ট'-তে যিশুকে মহাত্মার স্থান দিয়ে লিখছেন,
কেবল তাঁহাদের দীপ্তনেত্রের দৃষ্টিপাতে আমাদের জীবনের মধ্যে তাঁহার সেই চিরকালের আলোক নিক্ষেপ করেন যাহার আঘাতে আমাদের দুর্বল জড়তার সমস্ত ব্যর্থ জাল বুনানির মধ্য হইতে আমরা লজ্জিত হইয়া জাগিয়া উঠি।
আমার ক্ষেত্রে, যিশুকে ভালো লাগার প্রথম কারণটা অবশ্য ছিল ব্যক্তিগত। আমার শিক্ষক শ্রীশিবায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় খ্রিস্টীয় আচার রীতিনীতির মধ্যে বড় হয়েছিলেন। আমার ছোটবেলা কেটেছে তাঁর স্নেহচ্ছায়ায়। ২৪ ডিসেম্বর রাতে এ চার্চ সে চার্চে যিশুকীর্তন শুনে, ওঁর উঠোনে নাজারেথের যিশুর জন্মের ঝুলন সাজিয়ে, ২৫ ডিসেম্বর কমলালেবু হাতে ব্যান্ডেল অথবা কৃষ্ণনগর ঘুরে। ধর্মে আমার মতি নেই। কিন্তু প্রথম কৈশোরের সেই ভাললাগা, চার্চের ভিতরবাড়ির সেই গমগমে আবহ, আলোআঁধারির দুরন্ত রহস্য আমাকে বিবশ করে রেখেছে। আজও সুযোগ পেলেই আরও একবার দেখে নেবো মেল গিবসনের সিনেমা প্যাশন অফ ক্রাইস্ট। খ্রিস্টীয় চরিত্র, বা অনুষঙ্গ দেখলেই মনে হয় দু'দণ্ড দাঁড়াই, গল্পটা জানি। এভাবেই, গল্পের খোঁজে এক চিররহস্যাবৃত পানপাত্রের মুখোমুখি দাঁড়ানো। খ্রিস্টধর্মীদের মধ্যে যা হলি গ্রেইল বলে পরিচিত। কী এই পানপাত্র? দু'হাজার বছর ধরে আলোচনা করছে খ্রিস্ট উৎসাহীরা।
মার্ক লিখিত বাইবেলের ১৪:২২-২৫ সমাচার অনুযায়ী, যিশু শেষভোজের সময়ে শিষ্যদের দিকে রুটি এগিয়ে দিয়ে বলেন,
এটা তোমরা খাও, এই আমার শরীর।
এরপর তিনি পানপাত্র হাতে তুলে নেন। সকলকে সেই মদ এগিয়ে দিয়ে বলেন,
আর এই আমার রক্ত যা মানুষের তরে ঝরবে।
লুকের সমাচারে আবার দেখা যায়, যিশু পাত্রটির কথা আলাদা করে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, এই পাত্র আজ থেকে আমার রক্ত ধরে রাখবে। হিব্রু বাইবেলের তৃতীয় বিভাগ দ্য বুক অফ সাল্মস অনুযায়ী, যিশুকে যখন ক্রুশবিদ্ধ করা হচ্ছে তখনও কাছে গ্রেইল রাখা ছিল। অলোকসামান্য দেহ থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরে সেই গ্রেইলে। তার মানে, হলি গ্রেইল যিশুর রক্তবাহী পাত্র। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে স্থিরনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ানো যায় না। মীমাংসা হয় না। বরং আরও আরও ধোঁয়াশা তৈরি হয়।
জোসেফ অফ অ্যারামেথিয়া যিশুর প্রধান শিষ্যদের একজন। একটি মত বলছে, যিশুর রক্তাক্ত শরীরটায় বর্শার খোঁচা মেরে পরীক্ষা করে যখন ঘাতকবাহিনী নিশ্চিত হলো এই দেহে প্রাণ নেই। তারা স্থান ত্যাগ করল। যিশুকে তখন ক্রুশ থেকে নামিয়েছিলেন জোসেফ। জোসেফ তাঁর দেহ সাদা কাপড়ে মুড়ে এমন ভাবে পাথরের কফিনে ভরেন যাতে চোর সেই কফিন খুলতে না পারে। গ্রেইলটি তিনি সঙ্গে রেখে দেন। মৃত্যুর তিনদিন পরে যিশুকে তিনি দেখতে পান। যিশু জীবিত এ কথা প্রচার করতে থাকেন। যিশুকে ক্রুশ থেকে নামানোর অপরাধে তাঁকে জেলে ভরা হয়। সেখানে যিশু স্বয়ং এসে তাঁকে ওই পাত্রটি দেন। তাঁকে জানিয়ে দেন, এই সেই পাত্র যেখানে পিতা পুত্র ও পবিত্র আত্মা রক্ষিত আছে। বলা হয়, যিশু তাকে এমন কিছু গুপ্তমন্ত্র দিয়েছিলেন যা বাইরে বলা বারণ। ৪২ বছর ধরে এই পাত্র রক্ষা করেছিলেন জোসেফ। পরে মুক্তি পেয়ে তদানীন্তন ইংল্যান্ডের গ্লাস্টনবার্গে এই পাত্র রক্ষা করতে চলে যান তিনি। সঙ্গে ছিল ভেরোনিকার রুমাল। যে রুমালে ক্রুশবহনকালে রক্তাক্ত মুখ মুছেছিলেন যিশু। একদল খ্রিস্টবিশ্বাসী মনে করেন, মধ্যযুগের নাইটরা অনেকে জোসেফ অফ অ্যারামেথিয়ার উত্তরসূরী। একদল দাবি করে, গ্লাস্টনবার্গের আসেপাশেই এই গ্রেইল লুকোনো রয়েছে।
কিন্তু গল্প শেষ হয় না এখানেও। মধ্যযুগীয় ব্রিটেনের অসুস্থ রাজা আর্থার আর নাইট পার্সিভালের আখ্যানের সঙ্গে গ্রেইল তত্ত্ব জুড়ে আছে। দ্বাদশ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে ফরাসি কবি ক্রিটিয়েন ডি ট্রয়েসের হাতে এই আখ্যানের উৎপত্তি। তারপর তা ডালপালা মেলেছে। গল্পের কাঠামো মোটামুটি এইরকম- আর পাঁচজন মা সন্তানকে নাইট হওয়ার শিক্ষা দিলেও পার্সিভালের মা তাকে আটকে রাখতেন। স্বামী, এক সন্তানকে হারাতে হয়েছে তাই ঘা খাওয়া মা তাকে শিভাল্যরির শিক্ষা দিতেন না। বরং ছেলেকে তিনি ধর্মের কথা বলতেন, বিনম্র হওয়ার ভালো দিকগুলি সম্পর্কে বলতেন। পার্সিভালের একদিন পথে রেডনাইটের সঙ্গে দেখা হয়। পার্সিভাল রেডনাইটের সঙ্গেই রাজসভায় যান। রেডনাইট রাজসভায় তাঁকে নিয়ে নানা লঘুচালের মস্করা করলে তিনি নাকি সেখানেই রেডনাইটকে হত্যা করে তার বাহিনীর দখল নেন। অচিরেই তাঁর বীরত্বের কথা ছড়িয়ে পড়ে দেশদশের মধ্যে। মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ রচিত হয়। পার্সিভালের সঙ্গে দেখা হয় ব্লাঞ্চফ্লের-এর। এই প্রথম এক মহিলার সকাশে এলেন তিনি। দু'জনের মধ্যে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু পারসিভাল তো বীর, তিনি কেন নারীর বাহুডোরে আবদ্ধ থাকবেন। ফের অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়েন তিনি। পথে এক মৎস্যজীবীর সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। এই মৎস্যজীবীর কাছেই নাকি গ্রেইল রাখা ছিল। প্রগাঢ় ক্ষত ছিল ওই মৎস্যজীবীর পায়ে। ফলে তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। তিনি পার্সিভলকে তার দুর্গে নিয়ে যান। এই সাধারণ খোঁড়া মৎস্যজীবীই রাতে সোনালি গ্রেইল তুলে ধরেন পার্সিভালের সামনে।
একজন নাইট কম কথা বলবে। প্রশ্ন করবে না সে। এ কথা জানতেন পার্সিভাল। তাই তিনি চুপ করে ছিলেন। সকালে তিনি দুর্গ থেকে বেরিয়ে যান। পিছনে ফিরে দেখেন দুর্গটা যেখানে ছিল সেখানে আর নেই। পথে এক মহিলার সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। তিনি দেখেন, মহিলাটি একটি কাটা মাথা নিয়ে শোক করছেন। কার কাটা মাথা ওটা! ওই মহিলার সন্তানের! প্রশ্নাকীর্ণ পার্সিভাল দিন ফুরোলে বুঝতে পারেন, ওটা আসলে তিনি নিজেই। যে বিস্ময় তাকে নিজে থেকে এসে ছুঁয়েছে, তার দিকে তিনি তাকিয়ে দেখেননি। মস্তিষ্ক থাকতেও তা ব্যবহার করেননি। পার্সিভাল শুনতে পান, তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়েছে।
আবার আর্থারের রাজসভায় ফিরে যান তিনি। পার্সিভালকে রাজসভায় সমাদর করা হয়। একদিন এক 'কুৎসিত দাসী' তাঁকে তিরস্কার করে। বলে বৃহৎ জ্ঞানের সামনে দাঁড়িয়েও যার মধ্যে অনুসন্ধিৎসা জাগে না, বিপন্নতা আসে না, সে মানুষই নয়। এও বলেন, পার্সিভাল এই আচরণ না করলে রাজা আজ ভালো হয়ে যেতেন। পার্সিভাল ভেঙে পড়েন। বেরিয়ে যান প্রাসাদ থেকে।
এবার এক সাধুর সঙ্গে দেখা হয় তাঁর নিভৃত আখড়ায়। পার্সিভাল এই সাধুকে বলেন, তিনি কখনও ঈশ্বরচিন্তা করেননি। শুধু নাইট হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থেকেছেন। পার্সিভালকে ওই সাধু প্রবোধ দিয়ে বলেন, মায়ের মৃত্যুই তাঁকে নিজের বিষয়ে উদাসীন করেছে। মা ছিল তাই তার দিকে তাকানোর লোক ছিল। মায়ের মতামত তাঁর স্মৃতিতেও নেই। তাই তিনি গ্রেইলের কথাও জিজ্ঞেস করেননি। পার্সিভাল বুঝতে পারেন, জিজ্ঞাসার অপর নাম গ্রেইল। জীবনের পানপাত্রে, আত্মার আধারেই রক্তের মতো টলটলে অবস্থায় ঈশ্বর থাকে। ঈশ্বর জ্ঞানেরই স্বরূপ। ঈশ্বর উদ্ভাসিত হন প্রশ্নে, তাকে ধারণ করে গ্রেইলরূপী মন।
ফরাসি কবি এ পর্যন্তই লিখেছেন। কিন্তু গল্প থামেনি। কেউ লিখেছেন, পারসিভাল জানতে পারেন ওই মৎস্যজীবী তাঁর খুড়তুতো ভাই আর এই সাধু তাঁর কাকু। পার্সিভল ওই সাধুর সঙ্গে গুডফ্রাইডের প্রার্থনা করেন। মৃত্যুর পরে যিশুর পুনরুত্থানের গল্প জানতে পারেন তিনি। এভাবেই তিনি নিজেই গ্রেইলে পরিণত হলেন। কেউ আবার বলেন, পার্সিভল নাকি ফিরে গিয়েছিলেন সেই দুর্গে। সেই মৎস্যজীবীকে প্রশ্ন করেছিলেন, গ্রেইল ব্যবহার করে কেউ কাকে শুশ্রুষা উৎসর্গ করবে? ঠিক এই মুহূর্তেই রাজা আর্থার সেরে যান। আর ওই মৎস্যজীবী রাজা পৃথিবী ছাড়েন। যাওয়ার আগে পার্সিভালকে গ্রেইলটা দিয়ে যান। এবং যিশুর বলা কিছু গোপন কথা বলে যান।
গ্রেইল সম্পর্কে গল্প, মিথ, আখ্যান অনন্তগামী। চলতে থাকে তো চলতেই থাকে। সহস্র এক আরব্যরজনীর মতো। গ্রিকরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবী তৈরি হয়েছে পাঁচটি পদার্থে। যথা- আগুন, হাওয়া, জল, মাটি এবং মদ। অকাল্ট থিওরি অনুযায়ী, এই পাঁচ উপাদানই হয় উষ্ণ নয়তো ঠান্ডা। উষ্ণতা, ঋজুতা, চাঞ্চল্য থাকলে তাকে পুরুষ ধরা হবে। আর যদি তা ঠান্ডা হয় তবে তা নারী। জল-হাওয়া-সহ অন্য উপাদানগুলি পুরুষ হলে সাংকেতিক ভাষায় তা 'ব' এর মতো দেখতে। আর নারীচিহ্নগুলি উল্টো 'ব' এর মতো। এমনই একটি নারীচিহ্ন, শীতলজল। নানাদেশে তার নানা ব্যখ্যা। রোমানরা মনে করেন জল হলো অবচেতন। জলের আধার গ্রেইল। তাহলে কি গ্রেইল আসলে গর্ভ যেখানে শিশু ঘুমিয়ে আছে! মাতৃগর্ভও তো আসলে জলের ভান্ড।
জনপ্রিয়তম মতটি বলছে, গ্রেইল আসলে এক নারীর গর্ভের রূপক। আসলে সেই পর্দা সরালে যিনি বেরিয়ে আসবেন তিনি মেরি ম্যাগদালেন। বহু তিরস্কার সহ্য করেও এই তত্ত্বে বিশ্বাসীরা বলেন, মেরি ম্যাগদালেন যিশুর স্ত্রী। তার গর্ভে যিশুর সন্তান ছিল। যিশুর পুনরুত্থান তিনিই প্রথম লক্ষ্য করেন এবং জোসেফ অফ অ্যারামেথিয়াকে ডেকে আনেন। যিশুর নির্দেশে জোসেফ অফ অ্যারামেথিয়া গর্ভবতী মেরি ম্যাগদালেনকে দূরদেশে নিয়ে যান। ইজিপ্ট, লংডক হয়ে তাঁরা আলেকজান্দ্রিয়ায় চলে যান। মেরি ম্যাগদালেন সেখানে ধর্মপ্রচার শুরু করেন। সমুদ্র তীরবর্তী একটি ছোট গ্রামকে তাঁরা বসবাসের জন্য বেছে নেন, সেই গ্রামের নাম হয় সেন্ট মেরি ডে লা ম্যের।
কেউ কেউ বলেন মেরি ম্যাগদালেনকে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির শেষ ভোজ ছবিটিতে দেখা যায়। তবে অন্য মত, ওটি যিশুর শিষ্য জনের ছবি। তাঁর গড়ন কিছুটা মেয়েলিই ছিল। কেউ যদি খ্রিস্টের এই ছবিটি খুব গভীর ভাবে দেখেন, দেখবেন, জন (বা মেরি) আর যিশু পাশাপাশি একটি M আকৃতির জন্ম দিয়েছে। M মানে কি মেরি? M মানে কি ম্যারেজ বা বিবাহ? ছবিতে একমাত্র যিশু আর তার ডানদিকের ওই ব্যক্তিই একধরনের পোশাক পরে আছেন। যেমনটা বিয়েতে হয়। মেরি ভক্তরা দেখান, লিওনার্দোর ছবিতে টেবিলক্লথে একজন নারী আছেন। তিনিই মেরি ম্যাগদালেন। ছবিতে সবাই সাধারণ। আর টেবিলক্লথের মেরি যেন এক দেবী। যিশুর সন্তানকে জন্ম দেবেন যিনি, যিশুর মত প্রচার করবেন যিনি। তিনিই আসলে পবিত্র পাত্র, যিশুর জ্ঞানের প্রধান আধার।
বলা হয় যিশু কর্তৃক ব্যবহৃত নানা টুকিটাকি থেকে শুরু করে গুপ্তজ্ঞান জিনিস একদল গোপন খ্রিস্টীয়-বিশ্বাসী ঝড়জল থেকে রক্ষা করে এসেছেন। সংকেতের মধ্য দিয়ে তাকে শতকের পর শতক বাঁচিয়ে রেখেছেন। খ্রিস্টীয় পরিভাষায় তারা রোজিক্রুশিয়ান খ্রিস্টান। এই তালিকার প্রথম দিকে আছেন দান্তে আলিগিয়েরি, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিরা। আছে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট থেকে শুরু করে ওয়াল্ট ডিজনি পর্যন্ত কত কে!
রবীন্দ্রনাথ ১৯৩৯ সালের বড়দিনে লিখলেন-
একদিন যারা মেরেছিল তাঁরে গিয়ে
রাজার দোহাই দিয়ে
এ যুগে তারাই জন্ম নিয়েছে আজি,
মন্দিরে তারা এসেছে ভক্ত সাজি--
ঘাতক সৈন্যে ডাকি
মারো মারো' ওঠে হাঁকি।
গর্জনে মিশে পূজামন্ত্রের স্বর--
মানবপুত্র তীব্র ব্যথায় কহেন, হে ঈশ্বর !
এ পানপাত্র নিদারুণ বিষে ভরা
দূরে ফেলে দাও, দূরে ফেলে দাও ত্বরা॥
শান্তিনিকেতনে সে সময় সি এফ এন্ড্রুজ উপস্থিত ছিলেন। মৈত্রেয়ী দেবীর রবীন্দ্রনাথ গৃহে ও বিশ্বে গ্রন্থটি জানান দিচ্ছে, এই গানটি ইন্দুলেখা ঘোষকে তুলিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আমার প্রশ্ন, রবীন্দ্রনাথ পানপাত্র কথাটি কোথায় পেলেন! ততদিনে তার ইওরোপ ভ্রমণ সারা হয়ে গিয়েছে, বহু খ্রিস্টবিশ্বাসীর সঙ্গ করেছেন। মনে পড়ে যাচ্ছে এই বয়সে তাঁর চেহারা আর পোশাকের কথা। রবীন্দ্রনাথ গদ্যে কবিতা লিখেছেন যিশুকে নিয়ে, গান লিখেছেন, একটি পুরোদস্তুর গ্রন্থ রচনা করেছেন। যিশুর ছবি এঁকেছেন নন্দলাল বসু, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ কি একজন রোজিক্রুশিয়ান ছিলেন?