৩০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে NEET প্রশ্ন! গ্রেফতারের পর কবুল মূল চক্রীর
NEET Row: মোট চারজন পরীক্ষার্থীর জন্য প্রশ্নপত্র কিনেছিলেন যাদবেন্দু। মধ্যিখানে ফঁড়ের মতোই পরীক্ষার্থী প্রতি দশ লাখ টাকা করে বেশি হাঁকেন তিনি। নীতীশ ও অমিতকে দেওয়ার পরে ১০ লক্ষ টাকা নিজের মুনাফা রেখেছিলেন যাদবেন্দু।
ন্যাশনাল ইলিজিবিলিটি কাম এনট্র্যান্স টেস্ট। দেশের হবু চিকিৎসকদের বেছে নেওয়ার পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ। সেই নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই ক্ষোভে ফুটছে দেশ। কোথাও প্রশ্নপত্র ফাঁস তো কোথাও ভুল প্রশ্নপত্র বিলি, প্রায় দেড় হাজার জনেরও বেশি পড়ুয়াকে বেশি নম্বর দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে নীটের নিয়ামক সংস্থা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির বিরুদ্ধে। সেই নিয়ে জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সেই মামলায় এবার বিহার থেকে ধরা পড়লেন চার ব্যক্তি। ইতিমধ্যেই তাঁদের গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশি জেরায় তাঁরা স্বীকার করেছে মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষার এক দিন আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র।
গত মে মাসে অনুষ্ঠিত হয় সর্বভারতীয় এই প্রবেশিকা পরীক্ষা। অন্তত ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী তাতে অংশ নিয়েছিল। সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় গত ৪ জুন। সেই পরীক্ষায় বিশেষ কয়েকটি কেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পূর্ণ সময় পরীক্ষা না দিতে পারার অভিযোগ তুলেছিলেন ১৫৬৩ জন পরীক্ষার্থী। তাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাঁদের অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল NTA। সেই সিদ্ধান্ত সম্প্রতি বাতিল করে দিয়েছে তাঁরা ক্ষোভের মুখে। সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, নতুন করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করার কথা। তবে যাঁরা ফের পরীক্ষা দিতে চান না, তারা অতিরিক্ত নম্বর ছাড়া পুরনো নম্বরকেই চূড়ান্ত ধরে এগোতে পারবেন। সেই পরীক্ষা হওয়ার কথা ২৩ জুন। ফলাফল বেরোবে ৩০ জুন।
আরও পড়ুন: কেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল UGC-NET! যে ভয়াবহ শিক্ষা দুর্নীতির ইঙ্গিত দিচ্ছে মোদি ৩.০
তবে শুধু এই অনিয়মই নয়। NEET-UG পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে অভিযোগ প্রথম থেকেই উঠেছে, তা যে অমূলক নয়, সেই প্রমাণও এবার মিলল হাতে হাতে। বিহার থেকে গ্রেফতার হওয়া চার অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন অনুরাগ যাদব, সিকন্দর যাদবেন্দু নামে দু'জন। তাঁদের মধ্যে একজন দানাপুর পৌরসভার জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার বলে জানা গিয়েছে। আর দুই অভিযুক্তের নাম নীতীশ কুমার ও অমিত আনন্দ। পুলিশের কাছে তাঁরা স্বীকার করেছে, পরীক্ষার আগের দিনই তাঁদের হাতে প্রশ্নপত্র এসে যায়। এবং সেই সব প্রশ্নগুলি তাঁদের মুখস্থও করিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন পরীক্ষাহলে ঠিক সেই সেই প্রশ্নগুলোই জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তাঁদের।
অনুরাগ জানান, তাঁকে পরীক্ষার প্রশ্নগুলি বলে দেওয়া হয়েছিল এবং মুখস্থও করানো হয়। পরের দিন সেই সেই প্রশ্নই এসেছিল পরীক্ষায়। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে করতে অনুরাগের কাছে পৌঁছয় পুলিশ, এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ স্বীকার করে নেন অনুরাগ। যাদবেন্দু পুলিশকে জানিয়েছে, অন্য দুই অভিযোগ নীতীশ এবং অমিত তাঁকে জানায়, তাঁরা যে কোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে পারে। এবং নীট পাশ করতে চাওয়া প্রতিটি পরীক্ষার্থীর জন্য সেক্ষেত্রে ৩০-৩২ লাখ টাকা করে লাগবে।
মোট চারজন পরীক্ষার্থীর জন্য প্রশ্নপত্র কিনেছিলেন যাদবেন্দু। মধ্যিখানে ফঁড়ের মতোই পরীক্ষার্থী প্রতি দশ লাখ টাকা করে বেশি হাঁকেন তিনি। নীতীশ ও অমিতকে দেওয়ার পরে ১০ লক্ষ টাকা নিজের মুনাফা রেখেছিলেন যাদবেন্দু। কিন্তু শেষপর্যন্ত বমাল ধরা পড়ে যান তিনি। গাড়িতে নিরাপত্তা পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড হাতে ধরা পড়েন তিনি।
আরও পড়ুন:ডাক্তারির প্রবেশিকায় অনিয়ম! পরীক্ষার্থীর ভুয়ো অভিযোগে মুখ পুড়ল এবার কংগ্রেসের
একদিন আগেই ইলাহাবাদ হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গিয়েছে নীট পরীক্ষার্থী আয়ুশী প্যাটেলের আবেদন। ছেঁড়া ওএমআর শিটের ভিত্তিতে NTA তাঁকে অকৃতকার্য ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ এনেছেন ওই পরীক্ষার্থী। কিন্তু আদালতে পরীক্ষার্থীর আসল ওএমআর শিটটি পেশ করে পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থা। এর পরেই ভুয়ো তথ্যনথি পেশ করার অভিযোগ তুলে আয়ুশীর আবেদন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল ফেলা আয়ুশীকে সমর্থন করেছিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধি বঢরা। সে ব্যাপারটি নিয়েও শোরগোল পড়ে যায়। তার একদিন পরেই সামনে এল বিহারে চলা প্রশ্নপত্র ফাঁস করার ভয়ঙ্কর চক্রের কথা। একের পর এক ঘটনা সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষার বিষয়টিকে ক্রমাগত আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একদিন আগেই বাতিল হয়ে গিয়েছে নেট পরীক্ষা। এবার কি পালা NEET-এর? আপাতত সেই প্রশ্নটাই ঘোরাঘুরি করছে চারধারে।