রোজই হুহু করে বাড়ছে দাম, কেন ৩০০ ছুঁইছুঁই হল সস্তার চিকেন?
Chicken price hike : আকাশছোঁয়া দাম চিকেনের, ছুটির দিনে মাংস ভাত কি তবে স্বপ্নই রয়ে যাবে মধ্যবিত্তের?
স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে গিয়ে কচি পাঁঠার ঝোল খাওয়া আজকাল প্রায় বাতিলের খাতায়, অগত্যা মুরগির মাংসের স্বাদেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে আন আদমি। সপ্তাহান্তের একটা ছুটি, বাঙালি বাড়ির হেঁশেলে সেদিন রসিয়ে কষিয়ে রান্নার পসরা। এমন একটা দিন মানেই দুপুরে গরম গরম মাংস ভাতের বিকল্প আর কিছুই নেই। সকালবেলা বাজারে লম্বা লাইন দিয়ে পছন্দসই মাংসের পিসটি কিনে আনেন কমবেশি সকলেই। মাটনের দাম দেখে যাদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যেত, তাদের কাছে মাংস খাওয়ার সাধ পূরণ করতে সস্তার মুরগিই। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির কালা কানুন এবার রেহাই দিল না সেই মুরগিকেও। হুহু করে রোজই দাম বাড়ছে বাজারে। মধ্যবিত্তের পাতে মাংস ভাত কি কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে, এখন প্রশ্ন উঠছে সেটাই।
কিন্তু হঠাৎ করে কেন এমন পরিস্থিতি এল? কেনোই বা সারা বাংলা জুড়েই চিকেনের বাজারে আগুন? এর কারণ বিশ্লেষণ করতে গেলে বেশ কয়েকটি তথ্যের দিকে নজর দিতে হবে। প্রায় মাস খানেক হতে চলল একটু একটু করে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল চিকেনের দাম। ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরের মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছিল প্রায় ২০০ থেকে ২২০ টাকা প্রতি কেজিতে। দোলের আগে থেকে এরূপ ঊর্ধ্বমুখী বাজার। তবে সম্প্রতি সেইসব হিসাবকে ছাপিয়ে গিয়েছে দাম। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৫০ টাকা প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে। বর্তমান বাজারে ৩০০ ছুঁইছুঁই কাটা মুরগির দাম। ফলে ঝোলা হাতে বাজারে গিয়ে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদের।
আরও পড়ুন - মাত্র একটির দাম ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা! টাটা-আম্বানিরাও যে মুরগি কিনতে হিমশিম খান
একদিকে পর পর সরকারি এবং বেসরকারি ছুটি, অন্যদিকে টানা বিয়ের মরশুম, মুরগির ব্যবসা এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী। বিয়ে বাড়ির বিভিন্ন পদে তো বটেই এমনকী হোটেল রেস্তোরাঁর খবরেও চিকেনের বিভিন্ন পদের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে, জ্বর জেরেই আদতে চাপ পড়ছে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের ওপর। প্রয়োজন অনুযায়ী যোগান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তাঁরা। আর অর্থনীতির নিয়ম মেনেই চাহিদা বাড়লে যখন জিগান কমে যায় তখন দাম বেড়ে যায়, ঠিক সেটাই হয়েছে এই ক্ষেত্রেও। চলতি মাসের শুরুতেই ছিল লম্বা ছুটি। ফলে সেই ছুটি একদিকে যেমন বাংলার পর্যটন শিল্পের উন্নতি ঘটিয়েছে অন্যদিকে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যবসা হল এই খাবারের ব্যবসা, যার ফলে চিকেনের যোগানের ওপর চাপ বাড়তে থাকে।
অন্যদিকে প্রতিবছরই এই ফেব্রুয়ারি মার্চ মাস নাগাদ বেশ কিছু ফ্লু জনিত রোগে অসুস্থ হয়ে মারা যায় পোল্ট্রি মুরগিরা। যার জেরেই জোগানের ওপর বাড়তি চাও সৃষ্টি হয়। এছাড়া আজকালকার ডায়েট তালিকায় চিকিৎসকেরা ডিমের সাদা অংশ এবং চিকেন খাওয়ায় যেহেতু বেশি করে জোর দিচ্ছেন, সেহেতু ডিম ব্যবসার ক্ষেত্রেও চাহিদা বাড়ছে, যার ফল ভুগতে হচ্ছে মুরগির ব্যবসায়ীদের। আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে হোটেল, রেস্তোরাঁর সংখ্যা, ফলে সব মিলিয়ে চাপ বেড়েছে মুরগির ব্যবসায়। আর এই চতুর্মুখী চাপ সামলাতে না পেরে কার্যত বেহাল বাজার দর। সস্তার চিকেন এখন মধ্যবিত্তের দিবা স্বপ্ন। ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশেনের তরফেও সম্প্রতি জানানো হয়েছে, মুরগির খাবারের দাম যা বেড়েছে, তাতে দাম কমিয়ে বিক্রি করলে চাষিরা না খেতে পেয়ে মারা যাবেন, ফলে দাম বাড়ছে। যদিও চৈত্র মাস পড়লে এই পরিস্থিতির বদল হবে বলে আশাবাদী তাঁরা। পাশাপাশি আশাবাদী মধ্যবিত্ত বাঙালিও।