বিশেষ বিছানায় রাজার হালে ঘুমায় গোরুর পাল! কেন এমন নিয়ম জানেন?

Royal Cows: সেই বিশেষ বিছানাতেই বহাল তবিয়তে ঘুমোয় রাজপরিবারের পোষ্য গোরুরা। তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে বিশেষ রোবট।

সাম্প্রতিক কালে এ দেশে গো-আরাধনার রমরমা। বিশেষত গোবলয়ের রাজ্যগুলিতে তো বটেই। এ দেশের পূরাণ গোরুকে বরাবর মর্যাদা দিয়েছে ঠিকই। তবে এমন পুজোআচ্চার ঘনঘটা ততটা জোরদার ছিল না। তবে হিন্দুত্ববাদের হাওয়ায় সেই গো-প্রেম ইদানীংকালে ফুলেফেঁপে উঠেছে। এ রাজ্যের এক নেতা সগর্বে ঘোষণা করেছেন, গোরুর দুধে সোনার সুবর্ণ উপস্থিতির কথা। গরু একপ্রকার এখন মা-ই। তার দুধে একদিন ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি-র মতো জরুরি উপকরণ আছে বলে শোনা গেলেও সোনার এ হেন উজ্জ্বল উপস্থিতির কথা হালেই জানা গিয়েছে। ফলে শুধু গোরুর দুধের নয়, গোরুর মূত্রেরও বাজার উর্ধ্বমুখী। তবে এমন গোরুপ্রীতির নজির শুধু এ দেশেই নয়, রয়েছে সুদূর ব্রিটেনেও।

যদিও ভৌগোলিক ভাবে ব্রিটেন দূরে হলেও দু'শো বছর ধরে ব্রিটিশ উপনিবেশের দৌলতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে বেশ একাত্মই বোধ করেন ভারতীয়রা। ইংল্যান্ডের রানি হোক বা রাজপরিবারের বিয়ে, কিংবা সেই পরিবারে নতুন অতিথির আগমন, সব কিছু নিয়েই আগ্রহের শেষ নেই দেশের মানুষের। তবে ভারতের মতো এমন গো-প্রেম নাকি রয়েছে ইংল্যান্ডের রাজপরিবারেরও। সদ্য প্রয়াত হয়েছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেই রানির কুকুর-প্রীতির কথা অনেকেই জানেন। তবে শুধু কুকুর নয়, গোরু নিয়েও নাকি রানি বেশ স্পর্শকাতর ছিলেন। সাধারণ ভাবে গরু গোয়ালে থাকে। তাদের জন্য খড়আটি এসব বিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে রাজপরিবারের গোরুদের ব্যাপারই আলাদা।

আরও পড়ুন: কলকাতার এই অঞ্চলের নাম হয়েছিল রানি এলিজাবেথের নামে! যে তথ্য অজানা ছিল

হবে না-ই বা কেন! রাজামহারাজার ব্যাপারস্যাপার। ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের গোরুদের জন্য রয়েছে আলাদা বিছানার ব্যবস্থা। যে সে বিছানা নয়। এক ধরনের বিশেষ জলের বিছানায় শুতে নাকি পছন্দ করে গোরুরা। যাকে বলা হয়ে ওয়াটারবেড। সেই ওয়াটার বেডেই শোয়ানো হয় রাজপরিবারের পোষা গোরুগুলিকে। এই ধরনের বিছানায় শুলে নাকি গোরুদের হাঁটু, দুগ্ধথলি এইসবগুলি সুরক্ষিত থাকে। যে কোনও ধরনের সংক্রমণও এড়ানো যায়।

Queen Elizabeth II’s cows sleep on waterbeds

সেই জলের বিছানাতেই বহাল তবিয়তে ঘুমোয় রাজপরিবারের পোষ্য গোরুরা। তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে বিশেষ রোবট। তাদের দুধ দোয়ানো থেকে শুরু করে পরিষ্কার করানোর কাজ, সবটাই রা হয় ওই রোবটের মাধ্যমে। প্রায় দু'শোটি জার্সি গোরু, একটি সাসেক্স গোরুর পাল রয়েছে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের নাকি বিশেষ প্রিয় ছিল এই গোশালাটি। শুধু কি গোশালা নাকি, পশুপাখিদের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ ছিল রানির। তাদের ব্যাপারে জানতেনও প্রচুর। গোরুর পাশাপাশি প্রায় ১,৫০০টি লোহম্যান ব্রাউন মুরগি ছিল ওই খামারে। দক্ষ ঘোড়সওয়ার রানির বেশ কয়েকটি পছন্দের ঘোড়াও ছিল। আস্তাবলে সিসিটিভি লাগানো থাকত, মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে ঘোড়ার উপর নজর রাখতেন রানি স্বয়ং। পরিযায়ী পাখিদের জন্য অন্তত দশটি জলাভূমি তৈরি থেকে ওয়াইন তৈরির জন্য আঙুর চাষ, সমস্ত ব্যাপারেই রানির আগ্রহ ছিল দেখার মতো। তিনি মনে করতেন, রানি না হলে তিনি নাকি কৃষকবউ হতেন। চাষবাস, পশুপালনের প্রতি এমনই আগ্রহ ছিল তাঁর।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জার্সি পাল দ্য হোম পার্কের প্রিন্স কনসর্ট খামারটি ডিজাইন করে দিয়েছিলেন প্রিন্স অ্যালবার্ট। সে অবশ্য প্রায় ১৮৫০ সালের ঘটনা। তখনও রানি জন্মাননি। ইংল্যান্ডের ঠান্ডায় যাতে রানির প্রিয় গোরুদের কোনও অসুবিধা না হয়,পরবর্তীকালে সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় খামারে। তৈরি করে দেওয়া বিশেষ ওই জলবিছানা। ক্রমে যোগ হয় রোবোটিক প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে সব কাজ স্বয়ংক্রিয় ভাবেই হয়ে যেত রাজ-খামারে।

আরও পড়ুন: গরু পারাপারের সেতু থেকে আজকের টালা ব্রিজ! যে ইতিহাস অনেকের অজানা

রানি নেই। তবে তার সাধের খামার রয়ে গিয়েছে আজও। জানা গিয়েছে বর্তমানে উইন্ডসর ক্যাসেল আইসক্রিম তৈরির জন্য বিক্রি করা হয় রাজকীয় ওইসব গোরুর দুধ। অবশ্য রাজকীয় সেই গরুর দুধে এ দেশের মতো সোনার সন্ধান মিলেছে কিনা, তা বলাটা শক্ত।

More Articles