ভারতের সাংবিধানিক ধর্ম কী? প্রশ্নের উত্তরে যা বলল সুপ্রিম কোর্ট...

One Constitutional Religlion: কিন্তু সংবিধান বলছে ভারত নানা ভাষা, নানা মতের দেশ। ধর্ম এখানে দেশ চালায় না, চালায় সচেতন মানবধর্ম। অন্তত আইনপ্রণেতারা এমনই একটা ভাবনা থেকে ভারতকে স্বাধীন, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে তুলে ধরেছিল।

সনাতন ধর্ম প্রসঙ্গে উত্তাল রাজনীতি। বিতর্কের শুরু তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের ছেলে উদয়নিধির মন্তব্য ঘিরে। আর সেই মন্তব্যকেই ভোটের ময়দানে প্রচারের হাতিয়ার করে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। সেই থেকে উত্তরোত্তর চর্চা চলেইছে এই সনাতন বিতর্ক। এদিকে ইতিমধ্যেই সনাতন ধর্মের হয়ে সাফাই গেয়ে ফেলেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। সনাতন ধর্মকেই রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলে দাবি করে বসেছেন তিনি। উদয়নিধির মন্তব্যের কড়া বিরোধিতাও করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে দেশের শীর্ষ আদালতে উঠল 'ওয়ান কনস্টিটিউশনাল রিলিজিয়ন'-এর দাবি।

কিন্তু সংবিধান বলছে ভারত নানা ভাষা, নানা মতের দেশ। ধর্ম এখানে দেশ চালায় না, চালায় সচেতন মানবধর্ম। অন্তত আইনপ্রণেতারা এমনই একটা ভাবনা থেকে ভারতকে স্বাধীন, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে তুলে ধরেছিল। সেই স্থানটাই এতদিন ধরে বজায় রেখে এসেছে ভারত। সম্প্রতি দেশচালনার ক্ষেত্রে ধর্মকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে একাধিক রাজনৈতিক দল। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মতো এদেশে ধর্মের ভিত্তিতে সংবিধান এখানে গড়ে ওঠেনি। না, সেই সংবিধানে কোনও একটি ধর্মকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। ফলে যোগী যা-ই বলুন না কেন, ভারতের কোনও রাষ্ট্রধর্ম থাকার কথা নয়।

আরও পড়ুন: সনাতন ধর্ম-সঙ্কট? বাংলা কী ভাবছে?

তবে এ বার সেই প্রশ্নই উঠল সুপ্রিম কোর্টে। ভারতের সংবিধান নির্দিষ্ট ধর্ম কী? এই প্রশ্ন নিয়েই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মুকেশ কুমার এূং মুকেশ মানবীর সিং নামে দুই ব্যক্তি। অন্য কোনও আইনজীবীর সাহায্য না নিয়ে নিজেরাই আদালতে মামলাটি নিয়ে সওয়াল করেন তাঁদের একজন। নিজেকে সমাজকর্মী হিসেবে দাবি করা ওই আবেদনকারী সংবিধানের ধারা ৩২-এর আওতায় একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন। যেখানে তিনি ভারতের সংবিধানিক ধর্মের ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন। শুধু তাঁর তরফেই নয়, গোটা দেশের বকলমেই তাঁর এই প্রশ্ন বলে আদালতে জানান ওই ব্যক্তি।

Live transcription of Supreme Court proceedings introduced | Latest News  India - Hindustan Times

তবে স্বাভাবিক ভাবেই শীর্ষ আদালত উড়িয়ে দিয়েছে তাঁদের ওই আবেদন। সুপ্রিম কোর্টের ওই দুই আবেদনকারীর কাছে প্রশ্ন, তাঁরা কি মানুষকে তাঁদের ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী হওয়া থেকে আটকাতে পারবেন? পাশাপাশি বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কল ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার প্রশ্ন, এমন এমন আবেদন করার ভাবনা কোথা থেকে জোগাড় করেন আবেদনকারীরা। কীসের ভিত্তিতে এই ধরনের আবেদন নিয়ে আদালতের সামনে হাজির হয়েছেন তাঁরা, সেই প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন বিচারপতিদের বেঞ্চ।

১৯৫০ সালে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে জায়গা দিয়েছেন আইনপ্রণেতারা। এই ধরনের প্রশ্ন আসলে সংবিধানের উপরেই সওয়াল বলেও মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। এর পরেই সেই জনস্বার্থ মামলাটি খারিজ হয়ে যায় আদালতে।

আরও পড়ুন: যোগী বলছেন রাষ্ট্রীয় ধর্ম সনাতন, আদৌ কোনো রাষ্ট্রধর্ম আছে? কী বলছে সংবিধান?

বেশ কিছুদিন ধরেই সনাতন বিতর্কে যুযুধান রাজনৈতিক পক্ষেরা। এতদিন ধরে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে এসেছে বিজেপি এবং একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। ভাষার পর এবার ধর্ম। ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে জগৎসভায় তুলে ধরার চেষ্টার শেষ নেই একটি পক্ষের। আর এই ধরনের আবেদন তেমনই প্রচেষ্টার অংশ বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল।

More Articles