সুদীপ্তের কায়দায় ধরা পড়বে শেখ শাহজাহানও? কোথায় লুকিয়ে সন্দেশখালির 'ত্রাস'?

Sheikh Shahjahan - Sudipto Sen: কুণাল ঘোষের দাবি, সুদীপ্তকে কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করতে পারলে শাহজাহানকেও গ্রেফতার করা কোনও ব্যপার নয় কলকাতা পুলিশের পক্ষে।

প্রায় দু'মাস হতে চলল, এখনও খোঁজ নেই শেখ শাহাজাহানের। সন্দেশখালির বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। পুলিশ দেখলেই ছেঁকে ধরছেন গ্রামের মহিলারা। কোথায় শেখ শাহজাহান? কবে ধরা পড়বে সন্দেশখালির ত্রাস?

তৃণমূলনেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ এনেছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের মহিলাদের অত্যাচার, যৌন হেনস্থা থেকে শুরু করে নিগ্রহ, রাতের অন্ধকারে বাড়ির মেয়ে বউদের ডেকে পাঠানো হত শেখ শাজাহান ও তার দলবলের আস্তানায়। না যেতে চাইলে বাড়ির পুরুষদের উপর চলত অত্যাচার। জমি জবরদখল থেকে শুরু একাধিক অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে। একটা সময় বাধ্য হয়েই পথে নামেন এলাকার মানুষ। শাহজাহানদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সন্দেশখালি। অনেকেই সেই আন্দোলনকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। উঠেছে শেখ শাহজাহানদের গ্রেফতারের দাবি। শাহজাহানের অন্য়তম দুই সঙ্গী শিবু ও উত্তম গ্রেফতার হলেও এখনও পাত্তা নেই আসল লোকের।

আরও পড়ুন: শাহজাহান কোথায়? ‘ওঁরাই’ সবটা জানেন!

শাহাজাহানের বাড়িতে ইডির হানা দেওয়ার দিন থেকেই নিখোঁজ সন্দেশখালির এই তাজা তৃণমূল নেতা। বিরোধী দল থেকে স্থানীয় গ্রামবাসীদের অনেকেই মনে করেছেন, শাসকদল তৃণমূলের ছত্রছায়াতেই রয়েছেন শেখ শাহজাহান। সে জন্যই ধরা পড়ছে না সে। এ নিয়ে পুলিশের কাছে বারবার অভিযোগ জানিয়েছে স্থানীয় মানুষ। সম্প্রতি সন্দেশখালিতে ফেরেন রাজ্যপুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। তিনি সন্দেশখালি পর্যবেক্ষণ করতে যেতেই শেখ শাহাজাহানের ভাই সিরাজুদ্দিনের মাছের ভেড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেই কাজের নেপথ্যে স্থানীয় মানুষদের একাংশ রয়েছেন বলেই অভিযোগ। শাহজাহানদের জবরদখল করা জমিরও পুনর্দখল নেন গ্রামবাসী।

কার্যত শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবিতে উত্তাল সন্দেশখালি। এর মধ্য়েই তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেন, সুদীপ্তকে কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করতে পারলে শাহজাহানকেও গ্রেফতার করা কোনও ব্যপার নয়। সাত দিনের মধ্যেই শাহজাহান গ্রেফতার হয়ে যাবে বলেও দাবি করেছেন কুণাল। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর এই দাবি ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। কুণালের দেওয়া ডেডলাইনের পর কেটে গিয়েছে একদিন। হাতে রইল ৬ দিন। একই সঙ্গে কলকাতা পুলিশের দক্ষতা নিয়েও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন কুণাল। তৃণমূল নেতার কথায় কৌতূহলও জেগেছে সমান মাত্রায়। এই ৬ দিনে কোথা থেকে গ্রেফতার হতে পারে শাহজাহান শেখ? উস্কে উঠেছে জল্পনা। গোপন সূত্রের খবর, এরই মধ্যে গোপন ডেরা থেকে বেশ কয়েক বার অডিও বার্তাও পাঠিয়েছেন শাহজাহান।

কলকাতা পুলিশ তৎপর হতেই সারদা মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন। সেই গ্রেফতারি কোনও সিনেমার থেকে কম নয়। সে প্রায় ১১ বছর আগের ঘটনা। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাস সেটা। এমনিতেই এই সময়টায় অনেকেই বেরানোর জন্য ভূস্বর্গ কাশ্মীরকে বেছে নেন। কিন্তু সেই ভূস্বর্গেই যে সুদীপ্ত সেন ও তাঁর সহকারী দেবযানীর জন্য বিভীষিকা অপেক্ষা করছে, তা বোধহয় কল্পনাও করতে পারেননি। কলকাতা থেকে কাশ্মীরে যাওয়ার জন্য বিমান পর্যন্ত ব্যবহার করেননি তাঁরা। পাছে ধরা পড়ে যান। কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়েও রওনা হয়েছিলেন সুদূর কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে।

আরও পড়ুন:বাংলায় সন্দেশখালির জন্য কতটা আসন কমবে তৃণমূলের? প্রশান্ত কিশোর যা বলছেন

কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। কাশ্মীরের গুলমার্গের একটি হোটেলে গা ঢাকা দিয়েছিলেন সুদীপ্তরা। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় সারদা কাণ্ডের প্রধান দুই অভিযুক্তকে। সেই গ্রেফতারি আজও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাছে একটা বড় সাফল্য। এবার শেখ শাহাজাহানের গ্রেফতারি নিয়েও সেই কথাই শোনা গেল শাসকদলের প্রতিনিধিদের মুখে। ইতিমধ্যেই হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, অপরাধীদের সমর্থন নয়। ফলে তার গ্রেপ্তারিতেও কোনও স্থগিতাদেশ জারি করছে না কলকাতা হাইকোর্টে। সেই প্রসঙ্গেই কুণাল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করে বলেন, "বিষয়টি আদালতের আইনি জটিলতায় আটকে ছিল। বিরোধীরা এই সুযোগটি ব্যবহার করে রাজনীতি খেলছিল। বিষয়টি স্পষ্ট করে পুলিশকে নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য আজ হাইকোর্টকে ধন্যবাদ।শাজাহানকে সাত দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে।" দুদিন আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, শাহাজাহানের গ্রেফতারি আইনি জটিলতায় আটকে রয়েছে বলে। পুলিশের দায়ের করা এফআইআরগুলিতে স্থগিতাদেশের কারণে এতদিন আটকে ছিল শাহজাহানের গ্রেফতারি বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।

আর তারপরেই কুণাল ঘোষ স্পষ্ট করে দেন, শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ঠিক যে দক্ষতায় কাশ্মীর থেকে সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ, ঠিক সেই দক্ষতাতেই খুঁজে বের করে ফেলা হবে এবার। গত দু'মাস ধরে যার টিকিটিরও দেখা পায়নি পুলিশ, সেই শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারির ডেডলাইনও খোদ ঘোষণা করে দিলেন তৃণমূল মুখপাত্র। তবে কি স্থানীয় গ্রামবাসী বা বিরোধীদের কথাই ঠিক, তৃণমূলের ব়্যাডারের মধ্যেই রয়েছে সন্দেশখালির ত্রাস। এতদিন ইচ্ছা করেই কি তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি শাসক দল? কী গতি হতে চলেছে সন্দেশখালি ঘটনার? তার উত্তর অবশ্য শাহজাহানের গ্রেফতারির পরেই মিলবে স্পষ্ট করে।

More Articles