ভোট-বাজারে ইলেক্টোরাল বন্ডকেই পাল্টা অস্ত্র করছে বিজেপি! যে ভয়াবহ ইঙ্গিত দিলেন মোদি
Electoral Bonds: ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতি নিয়ে যারা মোদি সরকারকে বিঁধছে, তাঁদেরই নাকি এবার অনুশোচনায় ভুগতে হবে। এবার তেমনটাই দাবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির
লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের হাতে সব চেয়ে বড় অস্ত্র বোধহয় ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতি। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই বিজেপি সরকারের এই প্রকল্পকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। তার পর একের পর এক সত্য উদঘাটন হয়েছে দেশবাসীর সামনে। ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতির সমস্তটাই এখন তাঁদের কাছে খোলা বই। কোন দল কত টাকা পেয়েছে বন্ড মারফৎ, এসবিআইয়ের সামনে আনা নথি থেকে জানা গিয়েছে সবটায়। বিজেপি তো বটেই, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলগুলিও কোটি কোটি টাকা ঘরে তুলেছে এই ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্য়মে। সেই সব অঙ্ক চোখ কপালে তোলার মতোই। ভোটের মুখে এই প্রকল্পের প্রণেতা হিসেবে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। আর সেই অস্বস্তিকেই উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ভোটের বাজারে ফায়দা তুলতে চাইছে মোদি সরকার। ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতি নিয়ে যারা বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমন শানাচ্ছেন, তাঁরা শীঘ্রই অনুশোচনা করবে, এবার এমনটাই দাবি করে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রধানমন্ত্রী মোদির মতে, আগে রাজনৈতিক দলগুলির তহবিলের উৎস সম্পর্কে কোনও তথ্য়ই জানা যেত না। ইলেক্টোরাল বন্ড আসার পরেই এই তথ্য সামনে এসেছে। মোদির দাবি, ২০১৪ সালের আগে, ভোটের সময় রাজনৈতিক দলগুলিকে দেওয়া তহবিল সম্পর্কে কোনও কিছু জানা সম্ভব ছিল না। প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ইলেক্টোরাল বন্ড চালু করেছেন। যার দৌলতে রাজনৈতিক দলগুলির প্রাপ্য অনুদান সম্পর্কে বিশদে জানা সম্ভব হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কোনও কিছুই তো পুরোপুরি নিখুঁত নয়। তবে খুঁতগুলোকে সবসময়েই খুঁজে বের করা সম্ভব। সম্প্রতি একটি দক্ষিণী সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা জানান মোদি।
আরও পড়ুন: ‘ভোটে লড়ার টাকা নেই’! কতটা সত্যি বলছেন নির্মলা?
ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে বিজেপি। বন্ড মারফৎ প্রাপ্ত মোট অনুদানের মোট ৪৮ শতাংশই ঢুকেছে বিজেপির কোষাগারে। তার পর লাভবান হয়েছে বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস এবং তার পর তালিকায় রয়েছে কংগ্রেস। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ সুপ্রিম কোর্ট এই প্রকল্পকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে এই ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পটি এনেছিল বিজেপি। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে কত লেনদেন হয়েছিল, সে সময় থেকেই রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল সুপ্রিমকোর্ট। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে এই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সামনে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়, যা তুলে দেওয়া হয় ইলেকশন কমিশনের ওয়েবসাইটে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী দু'দফায় সেই নথি প্রকাশ করে এসবিআই।
লোকসভা ভোটের আগে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ ঘিরে যথেষ্ট শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় যেন বিরোধীদের হাতে বিরাট অস্ত্র তুলে দিয়েছে ভোটের আগে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই ওই প্রকল্প থেকে সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে বিজেপি। সেই নিয়ে জাতীয় রাজনীতি উত্তাল। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে ইলেক্টোরাল বন্ড সংক্রান্ত। ইলেক্টোরাল দুর্নীতিকে ধামাচাপা দিতেই নাকি রাতারাতি সিএএ কার্যকর করে বিজেপি সরকার। এমনকী একের পর এক অবিজেপি রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের পিছনে ইডি-সিবিআই লাগিয়ে দেওয়ার নেপথ্যেও এই বন্ড দুর্নীতির দিকে সাধারণ মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা রয়েছে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
আরও পড়ুন:ইডি তাড়াতেই ৩২০ কোটি! লোকসান সত্ত্বেও কেন বিপুল টাকা অনুদান কেভেন্টার গ্রুপের?
তবে এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে ইলেক্টোরাল বন্ড অস্ত্রেই বিরোধীদের ঘায়েল করতে চাইলেন মোদি। বলে বসলেন, এই দুর্নীতি আসলে আশীর্বাদ। ইলেক্টোরাল বন্ড দুর্নীতি নিয়ে যারা মোদি সরকারকে বিঁধছে, তাঁদেরই নাকি এবার অনুশোচনায় ভুগতে হবে। এর আগে কোন কোন রাজনৈতিক দলকে কারা কত টাকা অনুদান দিত, তা জানা যেত না কোনও ভাবেই। তবে এই ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্প মামলা নিয়ে ঘোঁট পাকার পর থেকে সেই সমস্ত তথ্যও সামনে এসেছে। শুধু তো বিজেপি নয়, ওই অনুদান এসেছে দেশের বিভিন্ন ছোট-বড় দলের কাছেই। মোদির কথা শুনে মনে হল, এ যেন অনেকটাই 'নিজের নাক ভেঙে পরের যাত্রা ভঙ্গের' মতো বিষয়। অন্যান্য দলে রাজনৈতিক তহবিলের খোঁজ রাখতে গিয়ে নিজেই এত বিশালাকার দুর্নীতিতে জড়ালো মোদি সরকার, যাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক দুর্নীতি বলে মনে করছে অর্থনীতিবিদদের একটা বড় অংশ।