নিরাপদ আল-জালা রাতারাতি যুদ্ধক্ষেত্র! ইজরায়েলের হুমকি পেয়ে খান ইউনিস ছাড়ছেন হাজার হাজার গাজাবাসী
Gaza: দিন কয়েক আগেই গাজার উত্তরে একটি স্কুল, যেটি বর্তমানে শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে, সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েল। তার পরেই ফের নতুন করে সতর্কবার্তা এসেছে ইজরায়েলি সেনার তরফে।
ইরানে দিন কয়েক আগেই খুন হয়েছেন হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়াহ। সেই হত্যার পিছনে ইজরায়েলের হাত রয়েছে বলেই মনে করেছে ওয়াকিবহাল মহল। তার পর হামাসের দায়িত্ব গিয়েছে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের হাতে। যে সিনওয়ার ২০২৩ সালে অক্টোবরে ইজরায়েলে হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত। যে ঘটনার পর থেকে হামাসদের খতম করতে উঠেপড়ে লেগেছে ইজরায়েল। ইতিমধ্যেই গাজা শহরটাকে শ্মশানে পরিণত করেছে তারা। গাজায় নিরাপদ বা সুরক্ষিত বলে কিছু নেই। ইতিমধ্যেই গাজায় ইজরায়েলি হামলায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের। জখম অসংখ্য মানুষ। এরই মধ্যে নতুন করে হামলার আশঙ্কায় কাঁপছে গাজা।
দিন কয়েক আগেই গাজার উত্তরে একটি স্কুল, যেটি বর্তমানে শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে, সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েল। সেই ঘটনায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন। তার পরেই ফের নতুন করে সতর্কবার্তা এসেছে ইজরায়েলি সেনার তরফে। রবিবার খুব ভোরে এলাকায় লিফলেট পড়ে থাকতে দেখেন বাসিন্দারা। সেনাবাহিনীর তরফে বার্তা এসেছে মোবাইলেও। যেখানে বাসিন্দাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার। তার পরেই ফাঁকা হতে শুরু করেছে খান ইউনিস এলাকা। যাঁর যেটুকু যা সঞ্চয়, যেটুকু যা পেরেছেন সেসব নিয়ে ঘর ছাড়তে শুরু করেছেন হাজার হাজার বাসিন্দা। এর আগে খান ইউনিসেরই আল-জালা বলে একটি এলাকাকে নিরাপদ অঞ্চল বলে চিহ্নিত করেছিল ইজরায়েলি বাহিনী। ফলে সেখানেই জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার শরণার্থী। এবার পালা সেই নিরাপদ এলাকাও ছেড়ে পালানোর।
আরও পড়ুন: পৃথিবী আবার শান্ত হবে! গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত কিশোরীদের স্বপ্ন দেখায় বক্সিং
গোটা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইজরায়েল গাজায় একের পর এক হামলা চালিয়ে গিয়েছে। কোনওমতে হামাসকে খতম না করে থামবে না নেতানিয়াহু, তা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের তরফে। একের পর এক হামলা, পালাতে পালাতে কার্যত পিঠ ঠেকে গিয়েছে গাজাবাসীর। এই মুহূর্তে সেখানে আরও কোনও নিরাপদ অঞ্চল বেঁচে রয়েছে বলে মনে হয় না।
খান ইউনিসের ওই আল-জালা এলাকাকে গাজাবাসীদের জন্য নিরাপদভূমি ঘোষণা করার পরে সেখানে শরণার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। তবে এক পলকে মিথ্যা হয়ে গেছে সেই নিরাপত্তাটুকুও। এবার ইজরায়েলি সেনার তরফে সেই জায়গাটাকেই বিপজ্জনক যুদ্ধের অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। ফের নতুন কোনও আশ্রয় খুঁজতে, পালাচ্ছেন কোনও মতে জান-প্রাণ নিয়ে।
অনেকেই পালানোর জন্য কোনও যানবাহন পাননি। মেলেনি পিকআপ ট্রাক ফলে ঘরদোরের জিনিসপত্র ফেলেই যেতে হচ্ছে তাদের। পরিবারের শিশু, বয়স্ক মানুষটিও হাঁটছে রাস্তা ধরে, কত তাড়াতাড়ি একটা আশ্রয় খুঁজে নেওয়া যায়, যেখানে আরও কয়েকদিন নিরাপদে কাটানো যেতে পারে। তার পরে ফের নতুন করে নিরাপত্তা খুঁজতে হতে পারে, তা এতদিনে জেনে গিয়েছেন গাজাবাসী।
ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী আইডিএফের তরফে জানানো হয়েছে, ওই আল-জালা এলাকাতেই ঘাপটি মেরে রয়েছে হামাস জঙ্গিরা। ওই এলাকাতেই এবার হামাস নিকেশের কাজে নামতে চলেছে তারা। সে কারণেই বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে বহু এলাকা থেকেই মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ এসেছে ইজরায়েলি বাহিনীর তরফে। তারই সঙ্গে চলেছে হামলাও। কয়েক মাসে একাধিক বোমা এসে পড়েছে গাজার বিচ্ছিন্ন এলাকায়। একাধিক জায়গা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-র তরফে জানানো হয়েছে, গত কয়েকদিনে দক্ষিণ-পশ্চিম গাজায় ৭৫ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। রবিবার ইজরায়েলি সেনার তরফে সতর্কবার্তা আসার পর থেকেই পালাতে শুরু করেন মানুষজন। অনেকেই নিজের সন্তান ছাড়া আর কিছুই নিয়ে যেতে পারেননি হাতে করে। আসলে গাজাবাসী কেমন এক চক্রব্যুহে আটকে পড়েছে যেন। গাজার এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত, এ ছাড়া কোনও পালানোর জায়গা নেই তাঁদের কাছে।
আরও পড়ুন: ৩ ছেলে, ৪ নাতি-নাতনির পর ইজরায়েলের হাতে খুন হামাস নেতা! কে এই ইসমাইল হানিয়াহ?
এর মধ্যেই রবিবার খান ইউনিসে হামলা চালায় ইজরায়েলি সেনা। যে ঘটনায় জখম হন নাসের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বে কয়েকজন। হঠাৎ করেই বাজার এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। বহু বাসিন্দাদের ক্ষেত্রেই এটা তাঁদের তৃতীয় বা চতুর্থ পালানো। আগের একাধিক হামলায় কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ ছেলে। কেউ গোটা পরিবার। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গোটা গাজায় নতুন নতুন বাসস্থান খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত তাঁরা। গাজার একাধিক স্কুল, যেগুলোকে শরণার্থী শিবির বানানো হয়েছিল, সেখানে লাগাতার হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। এই অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে যে তাঁদের জন্য নিরাপদ কোনও যে জায়গা নেই, তা এতদিনে ভালোই বুঝে গিয়েছেব গাজাবাসী। ইজরায়েলের দাবি, খান ইউনিসের যে জায়গাটি ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে রকেট ছোড়া হয়েছে। সেখানে একাধিক ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী সাধারণ মানুষ সেজে গা ঢাকা দিয়েই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা করার চেষ্টা করছে।
গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এই খান ইউনিস। ইজরায়েল বাহিনীর ব্যাপক বিমান ও স্থলহামলায় যে জায়গাটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কার্যত। এবার সেখানে আরও বড় কোনও হামলা নেমে আসতে চলেছে। সেই আতঙ্কেই দিন গুনছেন বাসিন্দারা। আর যে যেখানে সম্ভব পালানোর চেষ্টা করছেন। কোথায় পালাবেন তাঁরা, তার হদিস অবশ্য নেই কারওর কাছেই।