সভ্য দেশে পথকুকুর থাকে না? কেন ৪০ লক্ষ কুকুরের নিধনযজ্ঞে মাতছে তুর্কি সরকার?
Stray Dog Killing: সরকারের যুক্তি, গত পাঁচ বছরে অন্তত ৩,৫৪৪টি পথদুর্ঘটনা ঘটেছে তুর্কির রাস্তায়। যার ফলে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম অন্তত ৫ হাজার। আর এই সমস্ত দুর্ঘটনার পিছনেই নাকি হাত পথকুকুরদের।
পথের কুকুর পথদুর্ঘটনার কারণ। অতএব মেরে ফেলা হোক সমস্ত রাস্তার কুকুরদের। না থাকবে কুকুর, না হবে দুর্ঘটনা! পৃথিবীটা যে 'পাখি-গাছ-মানুষ সবার', তা প্রায়শই ভুলতে বসে কয়েকটি দেশ। কিছুদিন আগেই প্রায় ৫০ লক্ষ ক্যাঙারুকে নির্বিচারে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এমন কাজ অবশ্য আগেও করেছে তারা। ২০২০ সালে ১০ হাজার বন্য উটকে মেরে ফেলেছিল দেশটি। কারণ দেশে খরা। জলের প্রয়োজনে লোকালয়ে আসছিল উটেরা। ফলে চালাও গণহত্যা। এবার এমনই ভয়ঙ্কর স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছে তুর্কি। সে দেশের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়েপ এর্দোগান বলেছেন, কোনও সভ্য দেশে এত পথকুকুর থাকে না। ফলে মেরে ফেলা হোক সমস্ত রাস্তার কুকুরকে।
সে দেশের প্রাণী অধিকার ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হায়দার ওজকান অবশ্য জোর দিয়েছিলেন পথকুকুরদের নির্বীজকরণ ও তাদের পশুআশ্রয়ে ঠাঁই দেওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু রাজার হুকুম দিয়েছেন মৃত্যুদণ্ডের। সে কথার আর নড়চড় হয় কী করে! সরকারের যুক্তি, গত পাঁচ বছরে অন্তত ৩,৫৪৪টি পথদুর্ঘটনা ঘটেছে তুর্কির রাস্তায়। যার ফলে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম অন্তত ৫ হাজার। আর এই সমস্ত দুর্ঘটনার পিছনেই নাকি হাত পথকুকুরদের। সেই সব দুর্ঘটনার একাধিক ভিডিও কয়েক মাস ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি করেছে। তার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু কুকুরের আক্রমণের ভিডিও। আর তাতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন: শীত মানেই চিড়িয়াখানা! কলকাতায় চিড়িয়াখানা তৈরির ইতিহাস জানলে তাজ্জব হতে হয়
স্বাভাবিক ভাবেই তুর্কি সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে পশুপ্রেমী মহলে। ২০২১ সালে পশু সুরক্ষা আইনের সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়। যেখানে পথকুকুরদের হত্যার বিধান রয়েছে বলে সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে প্রতিবাদে সরব দেশের বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংগঠন। কুকুর এবং সারমেয় শাবকদের ছবি দেওয়া পোশাক পরে, প্ল্যাকার্ড হাতে ইয়েনিকপি স্কোয়ারে জড়ো হন মানুষজন। এদিকে আবার সরকারও সময় বেঁধে দিয়েছে। সরকারি তরফ থেকে জানানো হয়েছে আগামী তিরিশ দিনের মধ্যে রাস্তায় কুকুরদের দত্তক নেওয়া না হলে, তাদের হত্যা করা হবে। সরকারের এই আইনকে 'খুনি আইন' বলে মন্তব্য করেছে পশুপ্রেমীমহল। অনেকেই মনে করছে, কুকুরের পরপ বিড়ালকে পরবর্তী নিশানা বানাবে এর্দোগান সরকার।
সরকারি হিসেবে বলছে, অন্তত ৪০ লক্ষ পথকুকুর রয়েছে তুর্কিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার থেকে জানানো হয়েছে, র়্যাবিস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে এ দেশে। তা ঠেকাতেই এমন ভয়ঙ্কর পথ বেছে নিচ্ছে কিনা তুর্কি প্রশাসন, সেটাও ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। জনগণের একাংশ আবার বলছে, এই কুকুর নিধনের পরিকল্পনার পিছনেও আসলে রয়েছে রাজনীতির খেলা। কিছুদিন আগেই পৌরসভা নির্বাচন হয়ে গিয়েছে তুর্কিতে। সে সময় সেখানে বিরোধী দলের কাছে ইস্তানবুল ও আঙ্কারা হারিয়েছেন এরদোগান। এখন এই কুকর হত্যার প্রসঙ্গ তুলে মানুষকে বিভক্ত করার চেষ্টা করে পুরনো ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছেন এরদোগান। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন:বাঘের মৃতদেহকে মানুষের স্যালুট, ভালবাসার ফুল, এক অন্য মানবিকতার গল্প
সারমেয় নিধনের এই পরিকল্পনা দেশের সরকারের চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তুর্কির এরদোগান সরকার বরাবরই কট্টরপন্থী হিসেবেই পরিচিত। শুধু পশুদের প্রতি নয়, নারী এবং সমকামী বা এলজিবিটিআইপ্লাস সম্প্রদায়ের জন্য একই রকম বিদ্বেষ পুষে রেখেছে সে দেশের সরকার। পথকুকুরদের হত্যা করা সেই স্বৈরাচারেরই অংশমাত্র। এই বিল সত্যিই যদি পাশ হয়ে যায়, তা আসলে গণহত্যাকে সমর্থন করবে বলেই মনে করছেন দেশের একটি অংশ। সত্যি কি তুর্কিতে এই সারমেয় নিধন যজ্ঞ আটকাতে পারবে সে দেশের মানুষ? নাকি অস্ট্রেলিয়া উট কিংবা ক্যাঙারুর সঙ্গে যা করেছে, সেই পরিস্থিতিই ফের তৈরি হবে সভ্য এক দেশে। উঠেছে প্রশ্ন।