ফাদার্স ডে-র উপহার! ভয় সত্ত্বেও টাইটানিক খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেলেন বাবা ছেলে দু'জনেই...
Titanic submarine missing: বাবা শাহজাদাকে খুশি করতেই নিজের ভয়কে গুরুত্ব না দিয়েই অভিযানে যেতে চেয়েছিলেন সুলেমান।
সমুদ্রের তল নিয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না। আকর্ষণ তো একেবারেই না। বরং খানিক ভয়ই পেতেন বছর উনিশের সুলেমান দাউদ। তবু, বাবার জন্যই রাজি হয়েছিলেন। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের অনুসন্ধানে যাওয়া পাঁচ যাত্রীর অন্যতম হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু ফিরলেন না। জলের গভীরে চিরতরে হারিয়ে গেলেন সুলেমান, বাবার সঙ্গে, অন্য অভিযাত্রীদের সঙ্গেই। ওশানগেটের টাইটানিক সাবমার্সিবলের যাত্রীদের সম্পর্কে প্রতি মুহূর্তে যা যা তথ্য উঠে আসছে, তা স্তব্ধ করে দিচ্ছে বিশ্বকে। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে এমন কত অভিযানই তো হয়, এমন কত কত অভিযান কত কত রহস্যভেদ করে। কিন্তু টাইটান ডুবোজাহাজটি নিজেই হয়ে উঠল এক রহস্য।
মার্কিন কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, ১৮ জুন ডাইভ করার প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মধ্যেই টাইটান জলের উপরিতলের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। ক্রুদের অক্সিজেন শেষ হয়ে যাবে এই ভয়ে সাবমার্সিবলটির জন্য বিশাল অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। নিখোঁজ হওয়ার চারদিন পর, ২২ জুন কর্মকর্তারা জানান উদ্ধারকারীরা ডুবোজাহাজের বাইরের একটি ক্ষতিগ্রস্ত অংশ খুঁজে পেয়েছেন। প্রেশার চেম্বারের বিপর্যয় থেকেই সম্ভবত গোটা বিপত্তি!
বাবা বিখ্যাত ব্যবসায়ী, শাহজাদা দাউদ। তাদের পরিবার পাকিস্তানের অন্যতম ধনী পরিবারের অন্যতম। শাহজাদা দাউদ এনগ্রো কর্পোরেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন। আর পুত্র সুলেমান পড়ুয়া। গ্লাসগোর স্ট্র্যাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। সুলেমানের পিসি আজমেহ দাউদ জানিয়েছেন, সুলেমান প্রথমে এই অভিযানে যেতে অত্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। একজন আত্মীয়কে সুলেমান বলেওছিলেন জলের নিচে অভিযানে যাওয়া নিয়ে 'আতঙ্কিত' তিনি। তাহলে কেন রাজি হলেন? বাবার জন্য। অভিযানের দিনটি ছিল ১৮ জুন। ফাদার্স ডে। বাবা শাহজাদাকে খুশি করতেই নিজের ভয়কে গুরুত্ব না দিয়েই অভিযানে যেতে চেয়েছিলেন সুলেমান।
আরও পড়ুন- টাইটানিক খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেল ‘টাইটান’! যে পাঁচজন চিরতরে হারিয়ে গেলেন…
জলের গভীরে কীভাবে প্রাণ হারালেন তাঁর ভাই এবং ভাইয়ের সন্তান- ভেবে আঁতকে উঠেছেন আজমেহ দাউদ। দাউদ ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে শাহজাদা এবং সুলেমান দাউদের মৃত্যু ঘোষণা করা হয়েছে ইতোমধ্যেই। ফার্স্ট কোস্ট গার্ড জেলা কমান্ডার রিয়ার অ্যাড. জন মাগার বলছেন, ডুব দেওয়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটে একটি। যার ফলেই এই বিপর্যয়। সমুদ্রের তলদেশের পরিবেশ সবসময়ই অবিশ্বাস্য।
শাহজাদা সার, যানবাহন উত্পাদন, শক্তি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগকারী পাকিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম সংস্থা, এনগ্রো কর্পোরেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইনস্টিটিউটের (SETI) একজন ট্রাস্টি শাহজাদা। তিনি তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তানের সঙ্গে ব্রিটেনে থাকতেন।
বহু বছর আগে শাহজাদা দাউদ এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। মৃত্যুকে প্রায় ছুঁয়ে ফিরে এসেছিলেন সেবার। শাহজাদা এবং তার স্ত্রী, ক্রিস্টিন দাউদ এক ভয়ঙ্কর বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। মাঝ আকাশে প্রবল ঝড়ের মধ্যে পড়ে দিশেহারা হয়ে যায় তাঁদের বিমান। বেঁচে থাকলে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেবেন, বিমানে বসেই ঠিক করে ফেলেন। চারপাশের যাত্রীরাও তখন নিজ নিজ ঈশ্বরের শরণাপন্ন, নিজের নিজের মতো মানত করে ফেলেছেন অনেকেই। ঝড়ের মেঘের মধ্যে আটকে পড়েছিলেন সকলে। জীবনে এমন ভয় কোনওদিনও পাননি তাঁরা। তবে বেঁচে গিয়েছিলেন সকলেই।
ওশানগেটের সিইও স্টকটন রাশ, ব্রিটিশ ধনকুবের হামিশ হার্ডিং এবং ফরাসি অভিযাত্রী পল-হেনরি নাগেরোলেট সহ টাইটানে থাকা সমস্ত যাত্রীকেই মৃত বলে মনে করা হচ্ছে। ডুবোজাহাজটি চালাচ্ছিলেন স্টকটন নিজেই। ১৯১২ সালে টাইটানিকের সঙ্গে ঘটা দুর্ঘটনার সঙ্গে এক আশ্চর্যজনক সংযোগ ছিল স্টকটনের। তাঁর স্ত্রী ওয়েন্ডি রাশ হলেন টাইটানিকে মারা যাওয়া দম্পতি, ইডা এবং ইসিডোর স্ট্রসের প্রপৌত্রী।