হেরেই গেলেন শাহের ডেপুটি! যে কৌশলে নিশীথকে হারিয়ে এক নম্বরে তৃণমূল

Nisith Pramanik: শেষ পর্যন্ত অবশ্য শেষ হাসি হেসেছে তৃণমূলই। হেরেই গিয়েছেন বিজেপির হেভিওয়েট নিশীথ। বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে কোচবিহারবাসী ও জেলা তৃণমূলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা...

বুথ ফেরত সমীক্ষা বলেছিল, এ রাজ্যে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এক নম্বরে উঠে আসবে বিজেপি। তবে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর কিন্তু তেমন কিছু হতে দেখা গেল না। গোটা বাংলাতেই তেমন করে দাঁত ফোটাতে পারল না বিজেপি। এমনকী যে যে এলাকা বিজেপির গড় বলে পরিচিত ছিল বাংলায়, হারাতে হচ্ছে সেই সব আসনও। কেন বাংলায় লোকসভা ভোটের ফলাফলে এ ভাবে ভরাডুবি হতে হল বিজেপিকে? এখনও চড়া হিন্দুত্ববাদের থেকে যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বা কন্যাশ্রীর মতো জনদরদী প্রকল্পেই ভরসা রাখছে মানুষ, সে কথাই প্রমাণ হয়ে গেল ফের। কোচবিহার কেন্দ্রে বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিকের জয় নিয়ে একরকম নিশ্চিতই ছিল বাংলার বিজেপি নেতৃত্ব। তবে তেমনটা ঘটছে না বাস্তবে।

একেবারে প্রথম দফাতেই ভোট ছিল কোচবিহার কেন্দ্রে। গোটা রাজ্যে যখন কার্যত লড়াই ছিল ত্রিমুখী, সেখানে কোচবিহারের লড়াই ছিল দ্বিমুখী। কোচবিহার কেন্দ্র থেকে এ বারেও বিজেপির টিকিটে লড়ছেন নিশীথ প্রামাণিক। তৃণমূল প্রার্থী করেছিল জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। তৃণমূলের টিকিটে সিটাই বিধানসভায় ছিলেন জগদীশচন্দ্র। সেই জগদীশচন্দ্রই চাপে ফেলে দিলেন বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক। বিকেল পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, জগদীশ এগিয়ে ছিলেন প্রায় ৪০ হাজার ভোটে।

আরও পড়ুন: ভাঙল অনিল বসুর ‘অজেয়’ রেকর্ড! সব বাধা ঠেলে ডায়মন্ডহারবারে হ্যাটট্রিকের পথে অভিষেক

সেই ব্যবধান বেড়েই গিয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। নিশীথ শুধু বিজেপির হেভিওয়েট নেতাই নয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডেপুটি তিনি। ফলে তাঁর দিকে নজর ছিল গোটা দেশেরই। গণনা শুরুর পর থেকেই পিছিয়ে পড়তে শুরু করেন নিশীথ। কখনও কখনও একটু আধটু এগোলেও তেমন ভালো ফল করতে দেখা যায়নি নিশীথকে।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য শেষ হাসি হেসেছে তৃণমূলই। হেরেই গিয়েছেন বিজেপির হেভিওয়েট নিশীথ। বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে কোচবিহারবাসী ও জেলা তৃণমূলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, "কোচবিহারের সো কলড হোম মিনিস্টারের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে সেখানকার মানুষ।' এজেন্সিকে কাজে লাগিয়েও লাভ হয়নি বলে তাঁর দাবি। যেভাবে ওরা আমাদের হিউমিলিয়েট করেছে, আমরা রাজনৈতিকভাবে তার বদলা নেব।"

স্থানীয়ভাবে পরিচিত হলেও দেশীয় রাজনীতিতে রীতিমতো অচেনা মুখ জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। শেষমেশ লোকসভা ভোটে বাজিমাত করলেন তিনিই। তবে তাঁর চেয়ে দলের ও সংগঠনের কৃতিত্ব বেশি। দলের জয়ের সিংহভাগ কৃতিত্ব যাঁর, সেই উদয়ন গুহ জয়ের পর বললেন, "এই জয় সংগঠনের জয়। আমাদের স্ট্র্যাটেজি ছিল ওদের উত্যক্ত করে ভুলের ফাঁদে জড়িয়ে দেওয়া। ওঁরা সেই ফাঁদে পা দিয়েছে। আমরা জয় পেয়েছি। সবাই মিলে একযোগে লড়াই করে জয় এসেছে।"

আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশই উলটে গেল! কে গিলে ফেলল রাম মন্দিরের সাফল্য?

ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রাজ্যে যে কটি আসন হিংসার জন্য চর্চিত ছিল, তার মধ্যে শীর্ষে ছিল দিনহাটাই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক বনাম রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ লড়াই সামনে এসেছিল। একাধিকবার রক্তাক্ত হয়েছে এলাকা। প্রকাশ্যে মারামারিও দেখা গিয়েছে দুই মন্ত্রীর মধ্যে। যার ফল ভোটে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, আরও একটা বড় ইস্যু বিজেপির বিরুদ্ধে গিয়েছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বিজেপির টিকিটে রাজ্যসভা থেকে সাংসদ হওয়া অনন্ত মহারাজ ভোটের আগে বারবার ঘোষণা করেছিলেন পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে কোচবিহার বা উত্তরবঙ্গ। ভোটের মুখে নিশীথ প্রামাণিক সেই দাবি থেকে সরে গিয়ে নিশ্চুপ হয়ে যান। যা মোটেও ভালো ভাবে নেয়নি রাজবংশি সমাজ। শেষ পর্যন্ত এই ইস্যুই ভোটবাক্সকে ওলটপালট করে দিল, উঠছে প্রশ্ন।

More Articles