সংসদ পদ হারাতে চলেছেন মহুয়া মৈত্র? কেন এখনও চুপ তৃণমূল?

Mahua Moitra Ethics Committee : মহুয়া বলছেন, যত বেশি বিজেপি তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করবে তত বেশি তাদের বিরুদ্ধে লড়বেন তিনি।

সাংসদ হিসেবে আর কাজ চালিয়ে যেতে দেওয়া যায় না তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রকে। সাংসদ হিসাবে অবিলম্বে তাঁর সদস্যপদ বাতিল করা উচিত, এমনটাই সুপারিশ সংসদীয় এথিকস কমিটির। মহুয়ার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে প্রশ্ন করার অভিযোগগুলিও আরও গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখার সুপারিশ করেছে এই কমিটি। মহুয়া মৈত্র যা যা করছেন তা 'অত্যন্ত আপত্তিকর, অনৈতিক, জঘন্য এবং অপরাধমূলক', তাই মহুয়ার কঠোর শাস্তির দরকার, মনে করছে কমিটি। এই সুপারিশ জানিয়ে ৫০০ পাতার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এথিকস কমিটি। কমিটির সদস্যরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, মহুয়া মৈত্র অননুমোদিত লোকজনের সঙ্গে ইউজার আইডি শেয়ার করেছেন। মহুয়া ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে নগদ টাকা এবং সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এই 'গুরুতর অপকর্ম'র জন্য মহুয়ার 'গুরুতর শাস্তি'র প্রয়োজন।

৫০০ পাতার ওই প্রতিবেদনে এথিকস কমিটি বলেছে, ভারত সরকারের উচিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মহুয়া মৈত্র এবং দর্শন হিরানন্দানির মধ্যে নগদ লেনদেনের বিষয়টির আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে তদন্ত করা। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন লোকসভার স্পিকারের কাছে এই দীর্ঘ প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হবে এবং আলোচনার পরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এথিকস কমিটির প্রধান, বিজেপি সাংসদ বিনোদ কুমার সোনকার দর্শন হিরানন্দানির সঙ্গে মহুয়া মৈত্রর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়েও কথা তুলেছেন৷ জয় অনন্ত দেহাদরাইকে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে যার অভিযোগের ভিত্তিতেই সিবিআইয়ের হাতে যায় পুরো মামলাটি। কমিটি বলছে, মহুয়া মৈত্র তদন্তে কোনও সহযোগিতাই করছেন না। বিরোধী সদস্যরা অভিযোগ তুললে প্রশ্নের উত্তর এড়াতে হঠাৎ মিটিং থেকে বেরিয়ে যান মহুয়া, বলছেন বিনোদ কুমার সোনকার। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেও জানান, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা লোকপাল মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে।

 

আরও পড়ুন- মহুয়ার পাশে না থেকে বিজেপিকেই সুবিধা করে দিচ্ছেন মমতা?

বিজেপি সাংসদ অভিযোগ করেছিলেন, মহুয়া মৈত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আদানির সম্পর্ক নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার জন্য ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়েছিলেন। নিশিকান্তই দাবি করেন যে, এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে সংসদীয় লগ-ইন শেয়ার করেন মহুয়া। ফলে জাতীয় নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন তিনি।

মহুয়া এই লগ-ইন আইডি শেয়ার করার কথা স্বীকার করে নেন। কিন্তু মহুয়ার দাবি, লগইন এবং পাসওয়ার্ড ভাগ না করারও কোনও নিয়ম নেই৷ এথিকস কমিটির মামলার শুনানির আগে, মহুয়া একটি চিঠি লিখে প্রশ্ন করেন কেন এই জাতীয় নিয়মগুলি সাংসদদের জানানো হয় না? গত মাসেই একটি হলফনামায়, দর্শন হিরানন্দানির সঙ্গে লগ-ইন আইডি শেয়ারের কথা স্বীকার করেন মহুয়া কিন্তু প্রশ্ন করার জন্য নগদ টাকা নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান। মহুয়া জানান, দর্শন এবং তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই মহুয়া মৈত্রকে 'উপহার' দিতেই পারেন হিরানন্দানি।

এথিকস কমিটির এই সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার সুপারিশ প্রসঙ্গে মহুয়া বলছেন, যত বেশি বিজেপি তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করবে তত বেশি তাদের বিরুদ্ধে লড়বেন তিনি। তিনি একা লড়বেন নাকি তৃণমূল লড়বে? আদানির বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে প্রশ্ন করার প্রসঙ্গে মহুয়া যা বলছেন, যা করছেন, তাতে তৃণমূল কি পাশে আছে এই নেত্রীর? মহুয়া নিজেই সামলে নেবেন বলে হাল ছেড়ে দেওয়া কি আসলে বিজেপিকেই সুবিধা পাইয়ে দেওয়া নয়?

More Articles