তৃণমূল সমর্থককে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মার! ভোট মিটলেও শান্তি ফিরল না সন্দেশখালিতে
Sandeshkhali: একাধিক বার তৃণমূল না করার জন্য হুমকিও দেওয়া হয়। কিন্তু সে সব কথায় পাত্তা দেননি খুলনার বাসিন্দা ওই মহিলা। আর তার পরেই তার উপর চড়াও হয় বিজেপি আশ্রীত গুন্ডারা।
ভোট মিটলেও শান্তি ফিরল না সন্দেশখালিতে। এ বার তৃণমূল করার অভিযোগে এত মহিলাকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল সেখানে। স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগের তির এলাকার বিজেপির দিকে। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত বিজেপি নেত্রীদের বিরুদ্ধে সন্দেশখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নিগৃহিতা।
ভোটের আগে থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে সন্দেশখালি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ শাহাজাহানের বিরুদ্ধে মহিলাদের নিগ্রহ ও জমি জবরদখলের অভিযোগ এনে রাস্তায় নামে স্থানীয় মানুষ। লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্দেশখালি ইস্যুকে ব্যবহার করতে আসরে নামে বিরোধীদলগুলো। এমনকী আন্দোলনের মুখ রেখা পাত্রকে লোকসভা ভোটে প্রার্থীও করে বিজেপি। তার পরে সন্দেশখালি দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে শেখ শাহজাহান। শেখ শাহাজাহান ঘনিষ্ঠের বাড়িতে অস্ত্রের খোঁজে তল্লাশি হয়েছে, এবং তা মিলেছেও। পরে রাজনীতির খেলায় পাল্টে যায় পাশা। একটি স্টিং অপারেশনের ভিডিও সামনে আসে, যেখানে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি দাবি করেন, সমস্ত ঘটনাই সাজানো। এবং এর নেপথ্যে রয়েছেন বিজেপিনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এখানেই শেষ নয়, অন্য একটি স্টিং ভিডিওয় রেখাদের বলতে শোনা যায়, রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া আন্দোলনকারীরা ভুয়ো। এর পর সন্দেশখালি কাণ্ডের উপর থেকে একের পর এক পর্দা উঠতে থাকে। একের পর এক নির্যাতিতা জানাতে শুরু করেন, তাঁদের দিয়ে জোর করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করানো হয়েছিল। এই আবহেই সন্দেশখালিতে হয়ে যায় লোকসভা ভোট। এবং সেই ভোটে বিপুল ব্যবধানে জিতে যায় ফের তৃণমূল। মুখ থুবড়ে পড়ে বিজেপির সমস্ত পরিকল্পনা।
আরও পড়ুন: ভোটের মধ্যেই দলবদল! কেন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে সন্দেশখালির প্রতিবাদী মুখ?
অনেকেই মনে করেছেন, লোকসভা ভোটে গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলকে তুলে এনেছে তাদের একাধিক জনমোহিনী প্রকল্প। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পের কল্যাণেই সন্দেশখালিতেও পুরনো জায়গা ফিরে পেয়েছে তৃণমূল। তবে তার পরেও শান্তি ফিরল না সন্দেশখালিতে। ফের সেখানে বিজেপি নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ উঠল। সন্দেশখালির খুলনার বাসিন্দা ওই মহিলার 'অপরাধ' তিনি তৃণমূলকে সমর্থন করেন। আর সে জন্যই তাঁকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্রে করেই ফের সরগরম হয়ে উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালি।
স্থানীয় সূত্রে খবর,ওই মহিলাকে নাকি এর আগে একাধিক বার সাবধান করেছিল বিজেপির লোকজন। একাধিক বার তৃণমূল না করার জন্য হুমকিও দেওয়া হয়। কিন্তু সে সব কথায় পাত্তা দেননি খুলনার বাসিন্দা ওই মহিলা। আর তার পরেই তার উপর চড়াও হয় বিজেপি আশ্রীত গুন্ডারা। অভিযোগ, রাস্তায় ফেলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারা হয় মহিলাকে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সন্দেশখালি গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাকে পাঠানো হয় খুলনা হাসপাতালে। আপাতত তিনি স্থিতিশীল বলেই স্থানীয় সূত্রের খবর।
গুরুতর জখম ওই নিগৃহীতা জানান, ‘‘আমরা তৃণমূল করি, ওরা বিজেপি করে। আমরা কেন তৃণমূল করছি, সেই হিংসায় আমাকে মারধর করল। বিজেপির জনক মণ্ডল, অপর্ণা মণ্ডল আমাকে লাঠি দিয়ে মেরে ফেলে দেয়। তার পর লাথি, ঘুষি, চড় মারতে থাকে। মোট পাঁচ জন আমাকে মেরেছে। ওরা সবাই বিজেপি করে। কিন্তু আমরা বিজেপি করব না, তৃণমূলই করব।’’ ইতিমধ্যেই বিজেপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সন্দেশখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মহিলা। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
আরও পড়ুন: সাদা কাগজে সই করিয়ে ‘মিথ্যে’ ধর্ষণের অভিযোগ! ভয়াবহ সত্য জানান দিচ্ছে সন্দেশখালি
বিজেপির অবশ্য দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস ঘোষ জানান, ‘‘পাড়ায় ওঁরা পাশাপাশি থাকেন। বচসা হয়েছে, সেখান থেকে মেয়েরা নিজেদের মধ্যে মারপিট করেছেন। সেই ঘটনায় বিজেপিকে জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ স্থানীয় বিজেপির দাবি, ওই এলাকায় নাকি তৃণমূলের অবস্থান তেমন ভালো নয়। বলা যায়, সেখানে খানিকটা ব্যাকফুটেই রয়েছে তারা। তাই নিজেদের সামনের সারিতে নিয়ে আসতে উদ্দেশ্যপ্রণদিত ভাবে সন্দেশখালিতে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে রাজ্যের শাসকদল। স্বাভাবিক ভাবেই, সাম্প্রতিক এই অশান্তির জেরে ফের উত্তপ্ত হয়েছে সন্দেশখালি। বাসিন্দাদের অনেকেই এই ঘটনায় বেশ ভয়ও পেয়ে গিয়েছেন। কবে পাকাপাকি শান্তি ফিরবে সন্দেশখালিতে, ভোট মিটলেও সেই উত্তর নেই সন্দেশখালির বাসিন্দাদের কাছে।